রায়ে সন্তুষ্ট নুসরাতের বাবা
নুসরাত হত্যাফেনী থেকে: বহুল আলোচিত ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ ১৬ আসামির মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আদালতের রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন নুসরাতের বাবা।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) আদালতের রায় শুনে নুসরাতের বাবা বলেছেন, এই রায়ে তারা সন্তুষ্ট। দ্রুত যেন রায় বাস্তবায়ন করা হয়। এছাড়া আসামি পক্ষ যদি হাইকোর্টে আপিল করে তারপরেও যেন এই রায় বহাল থাকে।
মামলার বাদী ও নুসরাতের বড় ভাই নোমান বলেন, আমরা রায়ে সন্তুষ্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুরু থেকে এই মামলার বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাকে ধন্যবাদ দিতে চাই। আশা করি তিনি এই সুযোগ আমাদের দিবেন। এছাড়া দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানায় আমরা।
এর আগে বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। তিনি ১৩ মিনিটেই নুসরাত হত্যা মামলার রায় পড়া শেষ করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামি হলেন-মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদদৌলা, দুই নম্বর আসামি ফেনী কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা মুক্তি পরিষদ আন্দোলনের আহ্বায়ক মো. নুর উদ্দিন, তিন নম্বর আসামি মাদ্রাসার ফাজিলের ছাত্র শাহাদাত হোসেন শামীম, চার নম্বর আসামি পৌর আওয়ামী লীগের সদ্য বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক এবং ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, পাঁচ নম্বর আসামি ছাত্রলীগকর্মী ও মাদ্রাসার ফাজিল বিভাগের ছাত্র মো. জোবায়ের, ছয় নম্বর আসামি চরচান্দিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি ও মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী জাবেদ হোসেন, সাত নম্বর আসামি মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক এবং ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হাফেজ আবদুল কাদের, আট নম্বর আসামি মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আফছার উদ্দিন, মাদ্রাসার ফাজিল প্রথম বর্ষ ও ফেনী পলিটেকনিক কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা মুক্তি পরিষদ আন্দোলনের সদস্য ও ছাত্রলীগকর্মী মো. শামীম, অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা মুক্তি পরিষদ আন্দোলন সদস্য ও ফেনী কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এমরান হোসেন মামুন, মাদ্রাসা শাখা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ইফতেখার উদ্দিন রানা, অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা মুক্তি পরিষদ আন্দোলনের সদস্য ও ছাত্রদলকর্মী হিসেবে পরিচিত মহিউদ্দিন শাকিল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. রুহুল আমিন, মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী উম্মে সুলতানা পপি ও মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী কামরুন নাহার মণি।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিনা আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। পরে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর মামলা তুলে নিতে নুসরাতের পরিবারকে নানা ধরনের হুমকি দেয়া হয়। কিন্তু নুসরাতের পরিবার ওই মামলা তুলে নেয়নি। নুসরাত ওই মাদ্রসার শিক্ষার্থী ছিলেন।
গত ৬ এপ্রিল সকালে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে আলিমের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে যান নুসরাত। ওই সময় কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে তাকে ডেকে নিয়ে যায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার সহযোগীরা। পরে নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় গত ৮ এপ্রিল নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান (নোমান) সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুসরাত। পরবর্তীতে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।
স্থানীয় প্রভাবশালীরা মামলার তদন্তকে ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করে। পরে বিষয়টি বুঝতে পেরে পুলিশ সদর দফতর থেকে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত ২৯ মে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালতে ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দেয় পিবিআই।
এরপর ১০ জুন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলার বিচার কাজ শুরু হয়। ২০ জুন অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচারিক আদালত। ২৭ ও ৩০ জুন বাদী নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসানকে (নোমান) জেরার মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। মোট ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জনের সাক্ষ্য নেন আদালত। হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে ১২ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার শুনানি শেষ হয় গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এরপর আদালত রায়ের জন্য আজকের দিন নির্ধারণ করেন।