২০২১ সালে সেরা দশ আবিষ্কার

  সালতামামি


দেবদুলাল মুন্না
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) ‘ডিপ মাইন্ড

২০৩০ সালের মধ্যে ২ কোটি চাকরি চলে যাবে রোবটের দখলে। শুধু  চীনেই রোবটকর্মীর সংখ্যা হবে প্রায় দেড় কোটি। অক্সফোর্ড ইকোনমিকস এর একটি গবেষকদল এ তথ্য জানান ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। আমাদের দেশের  কিশোর-তরুণ রোবট গবেষকেরা ও পিছিয়ে নেই।

এ ডিসেম্বরই আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে ৪টি স্বর্ণসহ মোট ১৫টি পদক জিতেছে দেশের স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের একটি দল।হয়তো চুড়ান্ত ফলাফল আরও পরে আসবে কিন্তু কাজ শুরু হয়েছে।

পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলেছিলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) মানুষের জন্য যেমন কল্যাণ বয়ে আনতে পারে, তেমনি হয়ে উঠতে পারে ভয়ংকর হুমকি। মানুষ হারাতে পারে চাকরি।   গুগলের সাবেক চেয়ারম্যান এরিক স্মিড ও এমনটি মনে করেন। গুগলের মূল প্রতিষ্ঠানের নাম এখন অ্যালফাবেট। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানটি এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে উন্নত গবেষণা করে বলেছে এবছর বলেছে ২০২২ সাল থেকেই শুরু করবে মহড়া ভিত্তিক কাজ।

গুগলের ডিপ মাইন্ড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রকল্পকে সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্র। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা নিয়ে যদিও আরও আগে থেকেই কাজ হচ্ছে তবে সাফল্যের ৭০ ভাগ কাজ হয়েছে চলতি বছর। ‘ডিপ মাইন্ড’ এর কাজ হচ্ছে শুধু রোবোটিক কাজই করা না, অন্য কে কি ভাবছে সেটিও শনাক্ত করা। মানে মনকে পড়ে ফেলা।

যুক্তরাষ্ট্রের এনভিডিয়া তৈরি করছে উন্নত চিপসেট। দ্রুত বাড়ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাজার। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউবিএস জানাচ্ছে, রোবট ২০৫০ সালের মধ্যে সমস্ত মানবিক কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম হবে। তবে ডিপফেক নিয়েও দুশ্চিন্তা বাড়ছে। ডিপফেক হচ্ছে, ছবি বা ভিডিওকে বিকৃত ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে নিখুঁতভাবে তৈরি করে হুবহু আসলের মতো বলে প্রচার করা হচ্ছে।  এতে যে কোনো প্রভাবশালী মহল অন্য মহলকে বা ব্যাক্তিকে বিপদে ফেলতে পারবে। সত্য ও মিথ্যা নির্ধারণ করাও কঠিন হয়ে পড়বে।

বর্তমানে ড্রোনের মতো আধা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রগুলোর যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার অনেক রাষ্ট্রেরই মাথাব্যথার কারণ।

মহাকাশে হচ্ছে পর্যটনস্থল

জেফ বেজোস ও রিচার্ড ব্র্যানসন এরিমেধ্য মহাকাশ ঘুরে এসেছেন। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে গত ১১ জুলাই প্রথমবারের মতো পর্যটক হিসেবে মহাকাশের প্রান্ত ঘুরে এসে ব্রিটিশ ধনকুবের রিচার্ড ব্র্যানসন বলেন, শিগগিরই নিয়মিত মহাকাশ ভ্রমনের ব্যবস্থা করা হবে। এ কাজটি করবে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ভার্জিন গ্রুপের গ্যালাকটিকের নভোযান।

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে ভার্জিন গ্যালাকটিকের কাছে যাত্রী হিসেবে ৬০০ ব্যক্তি অগ্রিম টিকিটের ফরমাশ দিয়ে রেখেছেন। এক ঘণ্টার এই অভিজ্ঞতা নিতে খরচ হবে আড়াই লাখ মার্কিন ডলার বা ২ কোটি ১১ লাখ টাকার বেশি। এ যাত্রায় পাঁচ মিনিটের মতো ওজনহীনতার অভিজ্ঞতা ও পৃথিবীর দিগন্ত দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে।২০২২ সাল থেকে আগ্রহী যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করবেন। নাসার এ তথ্যের বরাতে খবর প্রকাশ করেছে হাফিংটনপোস্ট। 

জেফ বেজোস ও মহাকাশ খ্রমণ শেষ করেছেন। তার প্রতিষ্ঠান আমাজনের পক্ষ থেকে বলা হয়, পৃথিবীর আবহাওয়ামণ্ডল ও মহাকাশের কাল্পনিক সীমা কারমান লাইন নামে যেটি পরিচিত সেখানে বেজোস গিয়েছিলেন।বেজোসের মহাকাশ সংস্থা ব্লু অরিজিন ও মহাকাশে যাত্রী আনা নেওয়ার কথা ভাবছে। 

মহাকাশ পর্যটন শুরু করতে তোড়জোড় করে বানানো হচ্ছে বাণিজ্যিক মহাকাশ স্টেশন। এতে সহায়তা করছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা।

নাসা এর জন্য বিভিন্ন প্রতিযোগিতারও আয়োজন করছে। একটি আয়োজনের নাম, স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ। এ প্রতিযোগিতাতেও একাধিকবার অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। এ বছর ‘বেস্ট মিশন কনসেপ্ট’ ক্যাটাগরিতে এসেছে চ্যাম্পিয়নের স্বীকৃতি। ও হ্যাঁ, মে মাসেও এসেছিল সুখবর। মার্স সোসাইটি সাউথ এশিয়া আয়োজিত আইপিএএস চ্যালেঞ্জে উদ্ভাবনে সেরার স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ‘টিম ইন্টারপ্ল্যানেটার’। ফলে বাংলাদেশও মহাকাশ নিয়ে পিছিয়ে নেই। সঙ্গে রয়েছে।

ফোনে আড়ি পাতার জন্য নতুন সফটওয়্যার

ফোনে আড়িপাতার প্রযুক্তি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপ চলতি বছর বেশ কয়েকবার আলোচনায় এসেছে। বাংলাদেশ নিয়ে বহুল আলোচিত আলজাজিরার একটি রিপোর্টেও ফোনে আড়ি পাতার প্রসঙ্গ এসেছে।

এনএসও গ্রুপের পেগাসাস সফটওয়্যার নিয়ে বিতর্ক কয়েক বছর ধরে চলছে। গত নভেম্বর নাগাদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। এনএসওকে কালো তালিকাভুক্ত করে মার্কিন সরকার। কারণ এটি যে কোনো দেশের পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত স্বার্থবিরোধী।

এরপরও থেমে নেই এনএসও গ্রুপ। গত ডিসেম্বরে আড়িপাতার প্রযুক্তি বিষয়ক আরেকটি সফটওয়ার বানানো হয়েছে। এনএসও গ্রুপ নিয়ে চলতি সপ্তাহে আরেকটি তথ্য সামনে আসে। ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়, কানাডার টরন্টোভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সিটিজেনল্যাবের ফরেনসিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, খাসোগিকে হত্যার মাত্র এক মাস আগে তাঁর এক ঘনিষ্ঠজনের মুঠোফোন হ্যাক করা হয়েছিল। এরকম  নতুন সফটওয়্যার ‘ পিংকস’ দিয়ে যে কারো ফোন হ্যাক করা যাবে ও অডিও ভিডিও ডামি বানানো যাবে।

বাংলাদেশে ইতোমধ্যে পেগাসাস সফটওয়্যার (স্পাইওয়্যারের) ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তায় উদ্ভূত হুমকি অনুসন্ধানে নিষ্ক্রিয়তা কেন সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সাকারা নেক্রোপলিসের মমি উদ্ধারে ‘ট্রিমো ব্যবহার

মিশরীয় সভ্যতার অনেক নিদর্শনই এখনো চাপা পড়ে আছে মরুভূমির বালির নিচে। ২০২০ সালে  প্রত্নতাত্ত্বিকরা কায়রোর দক্ষিণে সাকারা যেটি মূলত একটি নেক্রোপলিস যেখানে যান ও গবেষণা শুরু করেন। সেসময়  ১০০টি প্রাচীন কফিন উদ্ধার করেছেন মিশরীয় প্রত্নতাত্ত্বিক কর্মকর্তারা। কফিনগুলোর কয়েকটির মধ্যে সম্পূর্ণ অবিকৃত অবস্থায় কিছু মমিও উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া, ৪০টি সোনার ভাস্কর্য-মূর্তি এবং প্রতিমা আবিষ্কৃত হয়েছে। কাঠের কফিন এবং অন্যান্য জিনিসপত্র সমাহিত করা হয়েছিল টলেমাইক পিরিয়ডে, যা ৬৬৪ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৩৪ শতাব্দী পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। ২০২১  সালে প্রত্নতাত্ত্বিকরা ‘ট্রিমো’ নামের একটি বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে নতুন মমি উদ্ধার করেছেন ১২১টি। ট্রিমো যন্ত্রটি তৈরি করেছেন জোসেফ গল। ট্রিমো মাটিতে স্পর্শ করলেই বোঝা যায় মাটির নিচে মমি রয়েছে কি না।

টাইমমেশিনে মহাবিশ্বের প্রাণের মুহূর্ত দেখা

এটি দেখা যাবে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে। এই টাইম মেশিনে আমাদের মহাবিশ্বের প্রাণের মুহূর্তটি দেখতে পাওয়া যাবে। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ হল কিংবদন্তি হাবল স্পেস টেলিস্কোপের উত্তরসূরি।

এই টেলিস্কোপের পরিচালক যখন উৎক্ষেপণের প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করেছিলেন, তখন সারা বিশ্বের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তাকিয়ে ছিলেন আরিয়ান-৫ রকেটের যাত্রার দিকে।মহাকাশে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ নিক্ষেপ করতে রকেট উৎক্ষেপণের সঙ্গে সঙ্গে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মহাকাশে একটি টেলিস্কোপ পাঠানোর ২৫ বছরের দীর্ঘ স্বপ্নপূরণ হল, যা আমাদের প্রাণের উৎসের উত্তর খুঁজে এনে দিতে পারে।

ইউরোপের ফ্রেঞ্চ গায়ানা স্পেসপোর্ট থেকে শক্তিশালী আরিয়ান-৫ রকেটে তার নিজ গ্রহ থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে একটি গন্তব্যে যাত্রা করা হয়েছিল। সূর্য থেকে দূরে পৃথিবীর অন্ধকার দিকে মুখ করে টেলিস্কোপটি মহাবিশ্বকে পর্যবেক্ষণ করবে।

গত ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাসের দিনে উৎক্ষেপণ হয় আরিয়ান রকেটে করে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের। উচ্চ বাতাসের কারণে লিফট-অফ এক দিন আগে স্থগিত রাখা হয়েছিল। যাইহোক একদিন পরে হলেও আরিয়ান টেলিস্কোপটিকে দ্বিতীয় ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্টে যাওয়ার পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। যেখানে এটি আগামী ৩০ দিনের মধ্যে পৌঁছবে। টেলিস্কোপটি মহাবিশ্বের ইতিহাসের প্রতিটি পর্যায় অধ্যয়ন করবে- বিগ ব্যাং-এর পরে প্রথম আলোকিত দীপ্তি থেকে শুরু করে পৃথিবীর মতো গ্রহগুলিতে প্রাণের মুহূর্ত দর্শন, সৌরজগতের গঠন, মহাবিশ্বের অন্যান্য গ্রহসমূহ।

ভারতে মাটির মধ্যে চিত্রকর্ম

একটি বিশাল জিওগ্লিফ, সম্ভবত বিশ্বের বৃহত্তম, ভারতের থর মরুভূমিতে পাওয়া গেছে, যা পাকিস্তানের সাথে ভারতের সীমান্তের কাছে প্রায় ৫১ একর এলাকা জুড়ে রয়েছে। জিওগ্লিফ হচ্ছে মাটির মধ্যে  বেশ কয়েকটি সর্পিল এবং একটি স্নেকিং লাইন নিয়ে গঠিত যা সামনে পিছনে যায়। এরকম জিওগ্লিফ এর আগে পেরু ও মঙ্গোলিয়ায় আবিস্কৃত হয়েছিল। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা এই জিওগ্লিফের সন্ধান চলতিবছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বিশ্ব প্রত্নতাত্ত্বিক সংস্থা (ডবিলউএএ) কে জানালে সংস্থাটি ডিসেম্বরে এটির চুড়ান্ত অনুমোদন দেয়।

জিওগ্লিফের লাইন ধরে একটি হাইক ৩০ মাইল ভ্রমণের জন্য তৈরি করবে। জিওগ্লিফটি প্রায় ১৫০ বছর আগের অনুমান করা হয়, তবে এর উদ্দেশ্য অস্পষ্ট। জিওগ্লিফটি মাটি থেকে দেখা কঠিন, এবং এটি প্রথম গবেষকদেরএকটি দল যারা সনাক্ত করা করেছিল তারা গুগল আর্থ ব্যবহার করে ল্যান্ডস্কেপ বিশ্লেষণ করছিলেন।

হারানো সোনার শহর

প্রত্নতাত্ত্বিকরা মিশরের লুক্সর (প্রাচীন থিবস) কাছে একটি হারানো সোনার শহর আবিষ্কার করেছেন। শহরটি "দ্য রাইজ অফ আটেন" নামে পরিচিত ছিল এবং ফারাও আমেনহোটেপ তৃতীয় দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যিনি ১৩৯১ এবং ১৩৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে শাসন করেছিলেন। শহরটিতে রয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি, প্রশাসনিক ভবন, একটি বড় বেকারি, মাটির ইট তৈরির ক্ষেত্র এবং বেশ কিছু কবরস্থান। ঐতিহাসিক নথি থেকে জানা যায় যে আমেনহোটেপ III-এর শহরে তিনটি রাজকীয় প্রাসাদ ছিল ও বেশির ভাগ এলাকার মাটির নিচেই সোনা রয়েছে।  এখন শহরটিতে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ চলছে।

ঐতিহাসিক নথি থেকে শহরের অস্তিত্ব জানা ছিল কিন্তু এ বছরের আগে পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। এর আগে অনেক বিদেশী দল এ হারানো শহরটির সন্ধান করলেও খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে জানান দেশটির প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জাহি হাওয়াস।

নতুনরূপে সামুদ্রিক দানব

চলতিবছর নেভাদায় ৫৫ ফুট লম্বা ট্রায়াসিক সামুদ্রিক দানব আবিষ্কৃত হয়েছে।

প্রারম্ভিক ডাইনোসর যুগে বসবাসকারী একটি সামুদ্রিক দানব এতটাই অপ্রত্যাশিতভাবে বিশাল, এটি প্রকাশ করে যে এটির ধরণটি খুব দ্রুত বিশাল আকারে বেড়েছে, অন্তত বিবর্তনীয়ভাবে বলতে গেলে। আবিষ্কারটি পরামর্শ দেয় যে এই ধরনের ichthyosours - মাছের আকৃতির সামুদ্রিক সরীসৃপদের একটি দল যা ডাইনোসর-যুগের সমুদ্রে বাস করে- মাত্র ২.৫ মিলিয়ন বছরের ব্যবধানে বিশাল আকারে বেড়েছে, নতুন গবেষণায় দেখা গেছে। এই প্রসঙ্গে বলতে গেলে, তিমিদের তাদের ৫৫ মিলিয়ন বছরের ইতিহাসের প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ সময় লেগেছে বিশাল আকারে পৌঁছতে যা ইচথিওসররা তাদের ১৫০ মিলিয়ন বছরের ইতিহাসের প্রথম শতকরা ১ ভাগ  বিবর্তিত হয়েছিল। গবেষকরা বলছেন, "আমরা আবিষ্কার করেছি যে ichthyosours তিমিদের তুলনায় অনেক দ্রুত বিকশিত হয়েছে, এমন এক সময়ে যেখানে পৃথিবী ধ্বংসাত্মক বিলুপ্তি থেকে পুনরুদ্ধার করছিল পারমিয়ান যুগের শেষের দিকে। "  সিনিয়র গবেষক লার্স স্মিটজ, স্ক্রিপস কলেজের জীববিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক। ক্লারমন্ট, ক্যালিফোর্নিয়া, একটি ইমেলে লাইভ সায়েন্সকে জানান, "এটি আশার একটি সুন্দর ঝলক এবং জীবনের স্থিতিস্থাপকতার একটি চিহ্ন - যদি পরিবেশগত পরিস্থিতি সঠিক হয়, তবে বিবর্তন খুব দ্রুত ঘটতে পারে এবং জীবন ফিরে আসতে পারে।"  গবেষকরা প্রথম ১৯৯৮ সালে প্রাচীন ইচথায়োসরের জীবাশ্মগুলি লক্ষ্য করেছিলেন।

প্রথম 'কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গলড' প্রাণী

টার্ডিগ্রেডস।এদের বলা হচ্ছে  কোয়ান্টাম প্রাণী। তারণ এ প্রাণী সব পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এ প্রাণীর আবিষ্কার করা হয়েছে চলতি বছরের নভেম্বরে। এদের "মস পিগলেট" বলা হচ্ছে।  আশ্চর্যজনকভাবে টেকসই প্রাণীগুলিকে বন্দুক থেকে গুলি করা হয়েছে, ফুটন্ত-গরম পানিতে অনেকক্ষণ রাখা হয়েছে, তীব্র অতিবেগুনি বিকিরণের সংস্পর্শে এসেছে এবং এমনকি (দুর্ঘটনাক্রমে) চাঁদে অবতরণ করা হয়েছে, সবই তাদের চরিত্র বোঝার জন্য যে কোন অবস্থায় তারা কিরকম থাকে সেটির জন্যে। কিন্তু এই কোয়ান্টাম প্রাণীগুলি সবচেয়ে ঠান্ডা তাপমাত্রা এবং সর্বোচ্চ চাপে স্বাভাবিক আচরণ করেছে।

রোমুলাসের সমাধিতে দুইভাইকে দেখা গেল

৭৫৩ সালে, অর্থাৎ ৮ম শতকে রোমুলাসের হাতেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল রোম শহর।কিন্তু অভাবের তাড়নায় রোমুলাস এবং রেমুস- দুই ভাইকে শিশু অবস্থায় নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছিল। তখন দুই শিশু একটি এক মায়া নেকড়ের কাছে বড়ো হয় বলে লোকপুরাণে চালু রয়েছে।কিন্তু বড়ো হবার পর কে হবে ওই অঞ্চলের রাজা কিংবা কতোটুকু হবে সীমানা এ নিয়ে বিতর্কে দুই ভাই জড়িয়ে পড়লে এক রাতে রোমুলাস হত্যা করেন নিজের ভাই রেমুসকে এবং নিজেকে রোমের সম্রাট বলে ঘোষণা করেন। মূলত, রোমুলাস থেকেই রোম শব্দের উৎপত্তি বলে ধারণা করা হয়।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে একদল প্রত্নতাত্ত্বিক ঘোষণা দেন, তারা রোমান ফোরামের সিনেট হাউজের নিচে কিংবদন্তি রোমুলাসের সমাধির সন্ধান পেয়েছেন। সিএনএন এ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার, ওই সমাধিস্থলে এবার ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাসের আগের রাতে দুটি গাছ দেখতে পান কিউরেটর। গাছ দুটির বয়স দুইদিনের হলেও একটি গাছ উচ্চতায় একটু লম্বা অন্যটি একটু বেটে। শুধু তাই নয়, বড়ো গাছটির মগপাতায় রোমুলাসের মুখায়ব ভাসছে আর অন্যটিতে রেমুসের। এরপর অনেক বিশ্বাসীরা প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছেন। তবে গাছে রোমুলাস বা রেমুসের মুখায়বের কোনো অস্তিত্ব নেই বলেই জানিয়েছেসায়েন্স জার্নাল এসোসিয়শন। তবে গবেষকদলের প্রধান টিটল বোলস নেচার ম্যাগাজিনকে বলেন, তিনি শুনেছেন এবং সত্যই মনে হচ্ছে। কারণ তাদের জীবন বেশ রহস্যাবৃত, নাহলে মায়া নেকড়ের কাছে বড়ো হবে কেন আর আমরাই বা এতোবছর পর সমাধি খুঁজে পাবো কেন আর গাছ দুটিই  ‘শুভ বড়দিন’ এর আগে হঠাৎ জন্ম নিবে কেন?

৫৫ বছর পর ডুবে যাওয়া জাহাজের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

৫৫ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৬৯ সালের ২৫ আগস্ট একটি দুর্যোগ বার্তা দিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ডুবে যায় অস্ট্রেলিয়ার 'এমভি নুনগাহ' জাহাজ। পরে তাৎক্ষণিক উদ্ধার তৎপরতায়ও জাহাজে থাকা মানুষদের জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তখন থেকেই জাহাজটির নিখোঁজ হওয়া দেশটির নাগরিকদের কাছে রহস্য হয়ে ছিল। 

এবার সেই রহস্যের উদঘাটনের দ্বারপ্রান্তে দেশটির বিজ্ঞান সংস্থা কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিএসআইআরও)। বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, ডুবে যাওয়া জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গেছে।

ওই ঘটনায় জাহাজে থাকা ২৬ জনের মধ্যে ক্রুসহ ২১ জনের মারা যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে উঠে এসেছিল।  

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়ার তথ্য জানায়।

বিবিসি জানায়, ৭১ মিটার (২৩৩ ফুট) দৈর্ঘ্যের ওই মালবাহী জাহাজটি নিউ সাউথ ওয়েলসের উপকূল থেকে ইস্পাত নিয়ে যাচ্ছিল। পরে ঝড়ের কবলে পরে জাহাজটি ডুবে যায়। এমন ঘটনা তখন অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। 

জাহাজটি ডুবে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাঁচজনকে জীবিত ও ২০ জনের মরদেহ তুলে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু একঝনের লাশ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

ডেরওয়েন্ট নদীতে ১৯৫৬ সালে তোলা 'এমভি নুনগাহ'
 

গণমাধ্যমটি জানায়, অস্ট্রেলিয়া তাদের উচ্চ রেজোলিউশন সমুদ্রতল ম্যাপিং এবং ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে ধ্বংসাবশেষের অবস্থান নিশ্চিত করেছে।

তবে সিডনি থেকে প্রায় ৪৬০ কি.মি (২৮৬ মাইল) উত্তরে সাউথ ওয়েস্ট রকসের উপকূলের গভীর জলে স্থানীয়রা এক বছর আগে একটি ধ্বংসাবশেষ দেখেছিল। পরে তারা এ সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে অবগত করার পর বিজ্ঞানীরা সন্ধান চালিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে। 

স্থানীয়দের তথ্যের পর বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ করেছিল এটি ডুবে যাওয়া জাহাজটি হতে পারে। তবে প্রয়োজনীয় কোন প্রযুক্তি বা ডাইভিং জ্ঞান না থাকার কারণে সেটিই যে ডুবে যাওয়া জাহাজ নুনগাহ তা নিশ্চিত করতে পারেনি তারা।

গত মাসে সিএসআইআরও উচ্চ প্রযুক্তি নিয়ে জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজতে শুরু করে।

পরে তারা ওই স্থানের ১৭০ মিটার নিচে এর ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে।

সিএসআইআরও'র কর্মকর্তা ম্যাট কিম্বার বলেন, এই ট্র্যাজেডি এখনও অনেকের স্মৃতিতে রয়েছে। তবে ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কারের বিষয়টি জানার ফলে সবার জন্যই কিছুটা স্বস্তির কারণ হবে। 

নিহত ক্রুদের পরিবারের সদস্যরা অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনকে জানিয়েছেন, আবিষ্কারটি একটি স্বস্তির বিষয়।

  সালতামামি

;

বিশ্বের সবচেয়ে ‘কুৎসিত কুকুর’ এটি!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর কুকুরের তথ্য যেমন রয়েছে তেমনি এবার সবচেয়ে কুৎসিত আকৃতির কুকুরেরও তথ্য মিলেছে।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম স্কাই নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে।

স্কাই নিউজ বলছে, চলতি বছরের ২১ জুন (শুক্রবার) যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে বিশ্বের সবচেয়ে কুৎসিত কুকু্রের প্রতিযোগিতা বসেছে। ওই প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা ওয়াইল্ড থাং নামে আট বছর বয়সী একটি কুকুর এ তকমা পেয়েছে।

তবে এবারই ওয়াইল্ড থাং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেনি। এর আগেও ৫ বার এমন প্রতিযোগিতায় প্রাণীটি অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু প্রতিবারই নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে।

ওয়াইল্ড থাং এবং তার মালিক অ্যান লুইস। ছবি: সুমিকো মুটস / এনবিসি নিউজ

ওয়াইল্ড থাং এর মালিক অ্যান লুইস বলেন, ওয়াইল্ড থাং কুকুরছানা হিসাবে একটি ভয়ানক রোগ ক্যানাইন ডিস্টেম্পারে সংক্রমিত হয়েছিল। কোন ক্ষতি ছাড়াই অনেক চিকিৎসার পর বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তার দাঁত বেশি বৃদ্ধি না পাওয়ায় জিহ্বা বাইরে থাকে এবং তার সামনের ডান পা ২৪/৭ প্যাডেল আকারে থাকে।

পুরস্কার হিসেবে তাদেরকে ৫ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৫১১ টাকা) দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিশ্বের সবচেয়ে কুৎসিত কুকুর প্রতিযোগিতা প্রায় ৫০ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিযোগিতাটি আকর্ষণীয় করার জন্য কুকুরগুলোকে বিশেষ এবং অনন্য করে সাজিয়ে তোলা হয়।

  সালতামামি

;

ট্যাক্সি চালকের অনর্গল ইংরেজি বলার দক্ষতা!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

এই সংবাদটি পড়তে হলে আপনাকে ভুলে যেতে হবে শুধু শিক্ষিতরাই সাবলীলভাবে ইংরেজি বলতে পারেন! কারণ সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায় এক ট্যাক্সি চালক তার যাত্রীর সাথে অনর্গল ইংরজিতে কথা বলছেন।

ঘটনাটি প্রতিবেশী দেশ ভারতের মহারাষ্ট্রে ঘটেছে। দেশটির গণমাধ্যম এনডিতিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

এনডিটিভি বলছে, ওই ট্যাক্সি চালক তার যাত্রীদের সাথে ইংরেজি কথা বলার পাশাপাশি কিভাবে আরও দক্ষ হওয়া যায় সে বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন।

মহারাষ্ট্রের অমরাবতীতে ধারণ করা ভিডিওটি ভূষণ নামে একজন ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী শেয়ার করেছেন। ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, "এমন ঘটনা দেখে আমি কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। পরে তার সাথে কথা বলার সময় কিছুটা তোতলা হয়েছিলাম। তার ইংরেজিতে সাবলীলতা দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম।"

পরে তার সাথে এ নিয়ে কিছুক্ষণ আলাপ হলো।

ট্যাক্সি চালক বলেন, ইংরেজি শেখা থাকলে আপনি লন্ডন এবং প্যারিসের মতো উন্নত দেশে যেতে পারবেন। এটা বিশ্বব্যাপী ভাষা। এ কারণে ইংরেজি শেখা গুরুত্বপূর্ণ।

ভিডিওটিতে একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, "তার কথা বলার ধরণ ডক্টর এপিজে আবদুল কালামের মতো শোনাচ্ছেন"।

অপর একজন লিখেছেন, "১৬ বছরের শিক্ষার পর তার ইংরেজি আমার চেয়ে অনেক ভালো।"

  সালতামামি

;

‘প্রিয় স্বাধীনতা’ কবিতার মেঘনা নদীর দেখা মেলে চুনা নদীতে



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪, সাতক্ষীরার শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরের জীবন

ছবি: মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪, সাতক্ষীরার শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরের জীবন

  • Font increase
  • Font Decrease

মেঘনা নদী দেব পাড়ি
কল-অলা এক নায়ে।

আবার আমি যাব আমার
পাড়াতলী গাঁয়ে।

গাছ-ঘেরা ঐ পুকুরপাড়ে
বসব বিকাল বেলা।

দু-চোখ ভরে দেখব কত
আলো-ছায়ার খেলা।

বাঁশবাগানে আধখানা চাঁদ
থাকবে ঝুলে একা।


ঝোপে ঝাড়ে বাতির মতো
জোনাক যাবে দেখা।

ধানের গন্ধ আনবে ডেকে
আমার ছেলেবেলা।

বসবে আবার দুচোখে জুড়ে
প্রজাপতির মেলা।

হঠাৎ আমি চমকে উঠি
হলদে পাখির ডাকে।

ইচ্ছে করে ছুটে বেড়াই
মেঘনা নদীর বাঁকে।

শত যুগের ঘন আঁধার
গাঁয়ে আজো আছে।

সেই আঁধারে মানুষগুলো
লড়াই করে বাঁচে।

মনে আমার ঝলসে ওঠে
একাত্তরের কথা,

পাখির ডানায় লিখেছিলাম-
প্রিয় স্বাধীনতা।

কবি শামসুর রাহমানের প্রিয় স্বাধীনতা কবিতার লাইনের সঙ্গে মিল রেখে বলতে হয়-

শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরে থাকা মানুষগুলোর কথা।
চুনা নদী পাড়ি দেবো, ডিঙ্গি নৌকা দিয়া।

আবার আমি যাবো আমার উপকূলের গাঁয়ে।
কাজের জন্য ছুটে বেড়াই, চুনা নদীর বাঁকে।

বনে বাঘ, জলে কুমির আর ডাঙ্গায় লোনা পানির ক্ষত।
সেই চরের মানুষগুলো, এখনো লড়াই করে বাঁচে।

বর্ষাকালের দুপুর বেলা। আকাশে কালো মেঘ খেলা করছে! নদীতে পানি ঢেউ খেলছে! ভেসে আসছে, গেট থেকে জল আসার শব্দ। নদীর এপার ওপার হচ্ছেন ডিঙা নৌকা দিয়ে পাড়ে থাকা মানুষগুলো। ছুটে চলেছেন নারী-পুরুষ একে একে চুনা নদীর তীরে কাজের সন্ধানে। সন্ধ্যা হলেই দেখা মেলে বাড়ি ফেরার তাড়া। রাতের আঁধারে পশুপাখি, জীবজন্তু, পোকামাকড়ের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচেন এই চুনা নদীর পাড়ের মানুষগুলো।

সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগরের চুনা নদীর তীরে বসবাস নিত্যসংগ্রামী মানুষদের, ছবি- মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪.কম


এখানকার মানুষজন লড়াই সংগ্রাম করে এখনো টিকে আছেন। টিকে থেকে তাদের রোজ কাজের সন্ধানে অবিরাম ছুটে চলতে হয়। বর্তমানে ভাঙাগড়ার জীবনে অনিশ্চিত এক ভবিষ্যত নিয়ে বসবাস করছেন তারা। শ্যামনগর উপজেলার কলবাড়ি এলাকায় অবস্থিত চুনা নদীর চরটি। ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়-সম্বল হারানো ২০-২৫টি জেলে পরিবারের ঠাঁই হয়েছে এখানে। বছরের পর বছর এই চরকে আগলে বসবাস করলেও সব সময় লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয় তাদের।

তাদের একজন ৩৫ বছর বয়েসি রমেশ চন্দ্র মণ্ডল। দুর্যোগে সহায়-সম্পদ হারিয়ে আশ্রয় নেন চরের এক কোণে। সেখানে মাটির ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস তার। শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেও ভর করে থাকতে হয়, স্ত্রীর ওপর। তার কষ্টের বিনিময়ে জোটে তাদের একমুঠো ভাত। স্ত্রী একাই লড়াই সংগ্রাম করে বেঁচে আছেন তাদের নিয়ে এই চরে।

বনে পশুপাখির, জলে কুমির আর স্থলে বন্যা, জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে এভাবে তাদের জীবন প্রবহমান। তাদের জীবন চলার পথে নেই কোনো বিরাম। সংগ্রাম করে টিকে থাকেন সবাই। একে একে সব কিছু হারিয়েও এখানো টিকে থাকতে হয় তাদের।

রমেশের মতো একই অবস্থা ষাটোর্ধ্ব ফকির বিশ্বাসের। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়লেও পেটের দায়ে কাজ করতে হয় তাকে। একবেলা কাজ করলে অপর বেলা কাটে অসুস্থতায়!

ফকির বিশ্বাস বার্তা২৪কমকে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়-সম্বল হারিয়ে এই চরে আশ্রয় নিয়েছিলাম। আশ্রয়ের দুই যুগ লড়াই সংগ্রাম করে টিকে থাকলেও ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারিনি। বরং প্রতিবছর ছোটবড় দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছি। লড়াই-সংগ্রাম করতে হয়েছে বারংবার!

জীবন কাটে যুদ্ধ করে, ঝড়-ঝঞ্ঝা মাথায় পেতে...চুনা নদীর তীরের মানুষের জীবন, ছবি- মৃত্যুঞ্জয় রায়, বার্তা২৪.কম

চুনা নদীর চরে মাছের পোনা গুনতে দেখা যায় নমিতা রাণী রায়কে। নমিতা রাণী রায় বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্বামী-সন্তান নিয়ে সবসময় চিন্তার ভেতরে থাকতে হয় আমাকে। নদীতে কুমির আর বনে বাঘের আতঙ্ক! তারপর ডাঙায় লোনা পানির ক্ষত। লবণাক্ততায় ভরা জীবনকাল। তারপর চরটি নদীর ধারে হওয়াতে একটু জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় বসতবাড়ি। এই লড়াই-সংগ্রাম করেই বেঁচে আছি সেই প্রথম থেকে। মাছের পোনা বিক্রি করে চলে আমাদের সংসার। আমরা সবাই এখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংগ্রাম করে টিকে আছি।

নমিতা রাণী রায় বলেন, যখন বসতবাড়ি নদীর পানিতে তলিয়ে যায়, তখন স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। ওই সময় অনেক কষ্টে চর এলাকার সবার দিন কাটে। শিশু সন্তানদের সবসময় নজরে রাখতে হয়। অন্যথায় নদীতে পড়ে গিয়ে ঘটতে পারে ছোট-বড় দুর্ঘটনা!

নিত্যদিনের লড়াই-সংগ্রাম

লড়াই সংগ্রামের শেষ নেই উপকূলে থাকা মানুষজনের। সর্বশেষ, ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’-এর আঘাতে নদীর জোয়ারের জলে তলিয়ে যায় তাদের বসতঘর। ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ বলে কথা না! যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জোয়ারের পানিতে তাদের বসতঘর তলিয়ে যায়। তখন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না তাদের। এমনও অনেক সময় গেছে যে, দিনের পর দিন উনুনে আগুন দিতে পারেননি তারা। ওই সময় শুকনো খাবার খেয়ে থাকতে হয়েছে তাদের। এমনও দিন গেছে, যেদিন তাদের শুধুমাত্র পানি পান করে বেঁচে থাকার জন্য লড়তে হয়েছে।

ঘরছোঁয়া জলের বানের দিকে তাকিয়ে থাকেন চুনা নদীর তীরের মানুষজন আর ভাবেন আর কত সংগ্রাম, ছবি- মৃত্যুঞ্জয় রায়,বার্তা২৪.কম

সত্যি, তাদের ভাষ্যের সঙ্গে বড়ই মিল কবি শামসুর রাহমানের ‘প্রিয় স্বাধীনতা’ কবিতার! ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকাটা একটা বড় প্রশ্নেরই বটে! জঙ্গল, বন্যা, নদীভাঙনের সঙ্গে অবিরাম সংগ্রাম করে টিকে থাকা একটা অকল্পনীয় ব্যাপার। অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট আর অভাবে চরের মানুষদের দৈনন্দিন জীবন। তাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাঁধ ভাঙন, জলোচ্ছ্বাসসহ ঘূর্ণিঝড়। প্রতিবছর এসব দুর্যোগে শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে প্রতিনিয়ত সর্বস্বান্ত হচ্ছেন তারা। আবারও লড়াই-সংগ্রাম করে বেঁচে থাকার তাগিদে ঘুরেও দাঁড়ান তারা।

  সালতামামি

;