২০২১ সালে সেরা দশ আবিষ্কার

  সালতামামি



দেবদুলাল মুন্না
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) ‘ডিপ মাইন্ড

২০৩০ সালের মধ্যে ২ কোটি চাকরি চলে যাবে রোবটের দখলে। শুধু  চীনেই রোবটকর্মীর সংখ্যা হবে প্রায় দেড় কোটি। অক্সফোর্ড ইকোনমিকস এর একটি গবেষকদল এ তথ্য জানান ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। আমাদের দেশের  কিশোর-তরুণ রোবট গবেষকেরা ও পিছিয়ে নেই।

এ ডিসেম্বরই আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে ৪টি স্বর্ণসহ মোট ১৫টি পদক জিতেছে দেশের স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের একটি দল।হয়তো চুড়ান্ত ফলাফল আরও পরে আসবে কিন্তু কাজ শুরু হয়েছে।

পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলেছিলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) মানুষের জন্য যেমন কল্যাণ বয়ে আনতে পারে, তেমনি হয়ে উঠতে পারে ভয়ংকর হুমকি। মানুষ হারাতে পারে চাকরি।   গুগলের সাবেক চেয়ারম্যান এরিক স্মিড ও এমনটি মনে করেন। গুগলের মূল প্রতিষ্ঠানের নাম এখন অ্যালফাবেট। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানটি এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে উন্নত গবেষণা করে বলেছে এবছর বলেছে ২০২২ সাল থেকেই শুরু করবে মহড়া ভিত্তিক কাজ।

গুগলের ডিপ মাইন্ড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রকল্পকে সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্র। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা নিয়ে যদিও আরও আগে থেকেই কাজ হচ্ছে তবে সাফল্যের ৭০ ভাগ কাজ হয়েছে চলতি বছর। ‘ডিপ মাইন্ড’ এর কাজ হচ্ছে শুধু রোবোটিক কাজই করা না, অন্য কে কি ভাবছে সেটিও শনাক্ত করা। মানে মনকে পড়ে ফেলা।

যুক্তরাষ্ট্রের এনভিডিয়া তৈরি করছে উন্নত চিপসেট। দ্রুত বাড়ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাজার। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউবিএস জানাচ্ছে, রোবট ২০৫০ সালের মধ্যে সমস্ত মানবিক কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম হবে। তবে ডিপফেক নিয়েও দুশ্চিন্তা বাড়ছে। ডিপফেক হচ্ছে, ছবি বা ভিডিওকে বিকৃত ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে নিখুঁতভাবে তৈরি করে হুবহু আসলের মতো বলে প্রচার করা হচ্ছে।  এতে যে কোনো প্রভাবশালী মহল অন্য মহলকে বা ব্যাক্তিকে বিপদে ফেলতে পারবে। সত্য ও মিথ্যা নির্ধারণ করাও কঠিন হয়ে পড়বে।

বর্তমানে ড্রোনের মতো আধা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রগুলোর যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার অনেক রাষ্ট্রেরই মাথাব্যথার কারণ।

মহাকাশে হচ্ছে পর্যটনস্থল

জেফ বেজোস ও রিচার্ড ব্র্যানসন এরিমেধ্য মহাকাশ ঘুরে এসেছেন। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে গত ১১ জুলাই প্রথমবারের মতো পর্যটক হিসেবে মহাকাশের প্রান্ত ঘুরে এসে ব্রিটিশ ধনকুবের রিচার্ড ব্র্যানসন বলেন, শিগগিরই নিয়মিত মহাকাশ ভ্রমনের ব্যবস্থা করা হবে। এ কাজটি করবে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ভার্জিন গ্রুপের গ্যালাকটিকের নভোযান।

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে ভার্জিন গ্যালাকটিকের কাছে যাত্রী হিসেবে ৬০০ ব্যক্তি অগ্রিম টিকিটের ফরমাশ দিয়ে রেখেছেন। এক ঘণ্টার এই অভিজ্ঞতা নিতে খরচ হবে আড়াই লাখ মার্কিন ডলার বা ২ কোটি ১১ লাখ টাকার বেশি। এ যাত্রায় পাঁচ মিনিটের মতো ওজনহীনতার অভিজ্ঞতা ও পৃথিবীর দিগন্ত দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে।২০২২ সাল থেকে আগ্রহী যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রি করবেন। নাসার এ তথ্যের বরাতে খবর প্রকাশ করেছে হাফিংটনপোস্ট। 

জেফ বেজোস ও মহাকাশ খ্রমণ শেষ করেছেন। তার প্রতিষ্ঠান আমাজনের পক্ষ থেকে বলা হয়, পৃথিবীর আবহাওয়ামণ্ডল ও মহাকাশের কাল্পনিক সীমা কারমান লাইন নামে যেটি পরিচিত সেখানে বেজোস গিয়েছিলেন।বেজোসের মহাকাশ সংস্থা ব্লু অরিজিন ও মহাকাশে যাত্রী আনা নেওয়ার কথা ভাবছে। 

মহাকাশ পর্যটন শুরু করতে তোড়জোড় করে বানানো হচ্ছে বাণিজ্যিক মহাকাশ স্টেশন। এতে সহায়তা করছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা।

নাসা এর জন্য বিভিন্ন প্রতিযোগিতারও আয়োজন করছে। একটি আয়োজনের নাম, স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ। এ প্রতিযোগিতাতেও একাধিকবার অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। এ বছর ‘বেস্ট মিশন কনসেপ্ট’ ক্যাটাগরিতে এসেছে চ্যাম্পিয়নের স্বীকৃতি। ও হ্যাঁ, মে মাসেও এসেছিল সুখবর। মার্স সোসাইটি সাউথ এশিয়া আয়োজিত আইপিএএস চ্যালেঞ্জে উদ্ভাবনে সেরার স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ‘টিম ইন্টারপ্ল্যানেটার’। ফলে বাংলাদেশও মহাকাশ নিয়ে পিছিয়ে নেই। সঙ্গে রয়েছে।

ফোনে আড়ি পাতার জন্য নতুন সফটওয়্যার

ফোনে আড়িপাতার প্রযুক্তি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপ চলতি বছর বেশ কয়েকবার আলোচনায় এসেছে। বাংলাদেশ নিয়ে বহুল আলোচিত আলজাজিরার একটি রিপোর্টেও ফোনে আড়ি পাতার প্রসঙ্গ এসেছে।

এনএসও গ্রুপের পেগাসাস সফটওয়্যার নিয়ে বিতর্ক কয়েক বছর ধরে চলছে। গত নভেম্বর নাগাদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। এনএসওকে কালো তালিকাভুক্ত করে মার্কিন সরকার। কারণ এটি যে কোনো দেশের পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত স্বার্থবিরোধী।

এরপরও থেমে নেই এনএসও গ্রুপ। গত ডিসেম্বরে আড়িপাতার প্রযুক্তি বিষয়ক আরেকটি সফটওয়ার বানানো হয়েছে। এনএসও গ্রুপ নিয়ে চলতি সপ্তাহে আরেকটি তথ্য সামনে আসে। ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়, কানাডার টরন্টোভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সিটিজেনল্যাবের ফরেনসিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, খাসোগিকে হত্যার মাত্র এক মাস আগে তাঁর এক ঘনিষ্ঠজনের মুঠোফোন হ্যাক করা হয়েছিল। এরকম  নতুন সফটওয়্যার ‘ পিংকস’ দিয়ে যে কারো ফোন হ্যাক করা যাবে ও অডিও ভিডিও ডামি বানানো যাবে।

বাংলাদেশে ইতোমধ্যে পেগাসাস সফটওয়্যার (স্পাইওয়্যারের) ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তায় উদ্ভূত হুমকি অনুসন্ধানে নিষ্ক্রিয়তা কেন সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সাকারা নেক্রোপলিসের মমি উদ্ধারে ‘ট্রিমো ব্যবহার

মিশরীয় সভ্যতার অনেক নিদর্শনই এখনো চাপা পড়ে আছে মরুভূমির বালির নিচে। ২০২০ সালে  প্রত্নতাত্ত্বিকরা কায়রোর দক্ষিণে সাকারা যেটি মূলত একটি নেক্রোপলিস যেখানে যান ও গবেষণা শুরু করেন। সেসময়  ১০০টি প্রাচীন কফিন উদ্ধার করেছেন মিশরীয় প্রত্নতাত্ত্বিক কর্মকর্তারা। কফিনগুলোর কয়েকটির মধ্যে সম্পূর্ণ অবিকৃত অবস্থায় কিছু মমিও উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া, ৪০টি সোনার ভাস্কর্য-মূর্তি এবং প্রতিমা আবিষ্কৃত হয়েছে। কাঠের কফিন এবং অন্যান্য জিনিসপত্র সমাহিত করা হয়েছিল টলেমাইক পিরিয়ডে, যা ৬৬৪ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৩৪ শতাব্দী পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। ২০২১  সালে প্রত্নতাত্ত্বিকরা ‘ট্রিমো’ নামের একটি বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে নতুন মমি উদ্ধার করেছেন ১২১টি। ট্রিমো যন্ত্রটি তৈরি করেছেন জোসেফ গল। ট্রিমো মাটিতে স্পর্শ করলেই বোঝা যায় মাটির নিচে মমি রয়েছে কি না।

টাইমমেশিনে মহাবিশ্বের প্রাণের মুহূর্ত দেখা

এটি দেখা যাবে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে। এই টাইম মেশিনে আমাদের মহাবিশ্বের প্রাণের মুহূর্তটি দেখতে পাওয়া যাবে। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ হল কিংবদন্তি হাবল স্পেস টেলিস্কোপের উত্তরসূরি।

এই টেলিস্কোপের পরিচালক যখন উৎক্ষেপণের প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করেছিলেন, তখন সারা বিশ্বের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তাকিয়ে ছিলেন আরিয়ান-৫ রকেটের যাত্রার দিকে।মহাকাশে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ নিক্ষেপ করতে রকেট উৎক্ষেপণের সঙ্গে সঙ্গে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মহাকাশে একটি টেলিস্কোপ পাঠানোর ২৫ বছরের দীর্ঘ স্বপ্নপূরণ হল, যা আমাদের প্রাণের উৎসের উত্তর খুঁজে এনে দিতে পারে।

ইউরোপের ফ্রেঞ্চ গায়ানা স্পেসপোর্ট থেকে শক্তিশালী আরিয়ান-৫ রকেটে তার নিজ গ্রহ থেকে প্রায় ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে একটি গন্তব্যে যাত্রা করা হয়েছিল। সূর্য থেকে দূরে পৃথিবীর অন্ধকার দিকে মুখ করে টেলিস্কোপটি মহাবিশ্বকে পর্যবেক্ষণ করবে।

গত ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাসের দিনে উৎক্ষেপণ হয় আরিয়ান রকেটে করে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের। উচ্চ বাতাসের কারণে লিফট-অফ এক দিন আগে স্থগিত রাখা হয়েছিল। যাইহোক একদিন পরে হলেও আরিয়ান টেলিস্কোপটিকে দ্বিতীয় ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্টে যাওয়ার পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। যেখানে এটি আগামী ৩০ দিনের মধ্যে পৌঁছবে। টেলিস্কোপটি মহাবিশ্বের ইতিহাসের প্রতিটি পর্যায় অধ্যয়ন করবে- বিগ ব্যাং-এর পরে প্রথম আলোকিত দীপ্তি থেকে শুরু করে পৃথিবীর মতো গ্রহগুলিতে প্রাণের মুহূর্ত দর্শন, সৌরজগতের গঠন, মহাবিশ্বের অন্যান্য গ্রহসমূহ।

ভারতে মাটির মধ্যে চিত্রকর্ম

একটি বিশাল জিওগ্লিফ, সম্ভবত বিশ্বের বৃহত্তম, ভারতের থর মরুভূমিতে পাওয়া গেছে, যা পাকিস্তানের সাথে ভারতের সীমান্তের কাছে প্রায় ৫১ একর এলাকা জুড়ে রয়েছে। জিওগ্লিফ হচ্ছে মাটির মধ্যে  বেশ কয়েকটি সর্পিল এবং একটি স্নেকিং লাইন নিয়ে গঠিত যা সামনে পিছনে যায়। এরকম জিওগ্লিফ এর আগে পেরু ও মঙ্গোলিয়ায় আবিস্কৃত হয়েছিল। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা এই জিওগ্লিফের সন্ধান চলতিবছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বিশ্ব প্রত্নতাত্ত্বিক সংস্থা (ডবিলউএএ) কে জানালে সংস্থাটি ডিসেম্বরে এটির চুড়ান্ত অনুমোদন দেয়।

জিওগ্লিফের লাইন ধরে একটি হাইক ৩০ মাইল ভ্রমণের জন্য তৈরি করবে। জিওগ্লিফটি প্রায় ১৫০ বছর আগের অনুমান করা হয়, তবে এর উদ্দেশ্য অস্পষ্ট। জিওগ্লিফটি মাটি থেকে দেখা কঠিন, এবং এটি প্রথম গবেষকদেরএকটি দল যারা সনাক্ত করা করেছিল তারা গুগল আর্থ ব্যবহার করে ল্যান্ডস্কেপ বিশ্লেষণ করছিলেন।

হারানো সোনার শহর

প্রত্নতাত্ত্বিকরা মিশরের লুক্সর (প্রাচীন থিবস) কাছে একটি হারানো সোনার শহর আবিষ্কার করেছেন। শহরটি "দ্য রাইজ অফ আটেন" নামে পরিচিত ছিল এবং ফারাও আমেনহোটেপ তৃতীয় দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যিনি ১৩৯১ এবং ১৩৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে শাসন করেছিলেন। শহরটিতে রয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি, প্রশাসনিক ভবন, একটি বড় বেকারি, মাটির ইট তৈরির ক্ষেত্র এবং বেশ কিছু কবরস্থান। ঐতিহাসিক নথি থেকে জানা যায় যে আমেনহোটেপ III-এর শহরে তিনটি রাজকীয় প্রাসাদ ছিল ও বেশির ভাগ এলাকার মাটির নিচেই সোনা রয়েছে।  এখন শহরটিতে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ চলছে।

ঐতিহাসিক নথি থেকে শহরের অস্তিত্ব জানা ছিল কিন্তু এ বছরের আগে পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। এর আগে অনেক বিদেশী দল এ হারানো শহরটির সন্ধান করলেও খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে জানান দেশটির প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জাহি হাওয়াস।

নতুনরূপে সামুদ্রিক দানব

চলতিবছর নেভাদায় ৫৫ ফুট লম্বা ট্রায়াসিক সামুদ্রিক দানব আবিষ্কৃত হয়েছে।

প্রারম্ভিক ডাইনোসর যুগে বসবাসকারী একটি সামুদ্রিক দানব এতটাই অপ্রত্যাশিতভাবে বিশাল, এটি প্রকাশ করে যে এটির ধরণটি খুব দ্রুত বিশাল আকারে বেড়েছে, অন্তত বিবর্তনীয়ভাবে বলতে গেলে। আবিষ্কারটি পরামর্শ দেয় যে এই ধরনের ichthyosours - মাছের আকৃতির সামুদ্রিক সরীসৃপদের একটি দল যা ডাইনোসর-যুগের সমুদ্রে বাস করে- মাত্র ২.৫ মিলিয়ন বছরের ব্যবধানে বিশাল আকারে বেড়েছে, নতুন গবেষণায় দেখা গেছে। এই প্রসঙ্গে বলতে গেলে, তিমিদের তাদের ৫৫ মিলিয়ন বছরের ইতিহাসের প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ সময় লেগেছে বিশাল আকারে পৌঁছতে যা ইচথিওসররা তাদের ১৫০ মিলিয়ন বছরের ইতিহাসের প্রথম শতকরা ১ ভাগ  বিবর্তিত হয়েছিল। গবেষকরা বলছেন, "আমরা আবিষ্কার করেছি যে ichthyosours তিমিদের তুলনায় অনেক দ্রুত বিকশিত হয়েছে, এমন এক সময়ে যেখানে পৃথিবী ধ্বংসাত্মক বিলুপ্তি থেকে পুনরুদ্ধার করছিল পারমিয়ান যুগের শেষের দিকে। "  সিনিয়র গবেষক লার্স স্মিটজ, স্ক্রিপস কলেজের জীববিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক। ক্লারমন্ট, ক্যালিফোর্নিয়া, একটি ইমেলে লাইভ সায়েন্সকে জানান, "এটি আশার একটি সুন্দর ঝলক এবং জীবনের স্থিতিস্থাপকতার একটি চিহ্ন - যদি পরিবেশগত পরিস্থিতি সঠিক হয়, তবে বিবর্তন খুব দ্রুত ঘটতে পারে এবং জীবন ফিরে আসতে পারে।"  গবেষকরা প্রথম ১৯৯৮ সালে প্রাচীন ইচথায়োসরের জীবাশ্মগুলি লক্ষ্য করেছিলেন।

প্রথম 'কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গলড' প্রাণী

টার্ডিগ্রেডস।এদের বলা হচ্ছে  কোয়ান্টাম প্রাণী। তারণ এ প্রাণী সব পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এ প্রাণীর আবিষ্কার করা হয়েছে চলতি বছরের নভেম্বরে। এদের "মস পিগলেট" বলা হচ্ছে।  আশ্চর্যজনকভাবে টেকসই প্রাণীগুলিকে বন্দুক থেকে গুলি করা হয়েছে, ফুটন্ত-গরম পানিতে অনেকক্ষণ রাখা হয়েছে, তীব্র অতিবেগুনি বিকিরণের সংস্পর্শে এসেছে এবং এমনকি (দুর্ঘটনাক্রমে) চাঁদে অবতরণ করা হয়েছে, সবই তাদের চরিত্র বোঝার জন্য যে কোন অবস্থায় তারা কিরকম থাকে সেটির জন্যে। কিন্তু এই কোয়ান্টাম প্রাণীগুলি সবচেয়ে ঠান্ডা তাপমাত্রা এবং সর্বোচ্চ চাপে স্বাভাবিক আচরণ করেছে।

রোমুলাসের সমাধিতে দুইভাইকে দেখা গেল

৭৫৩ সালে, অর্থাৎ ৮ম শতকে রোমুলাসের হাতেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল রোম শহর।কিন্তু অভাবের তাড়নায় রোমুলাস এবং রেমুস- দুই ভাইকে শিশু অবস্থায় নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছিল। তখন দুই শিশু একটি এক মায়া নেকড়ের কাছে বড়ো হয় বলে লোকপুরাণে চালু রয়েছে।কিন্তু বড়ো হবার পর কে হবে ওই অঞ্চলের রাজা কিংবা কতোটুকু হবে সীমানা এ নিয়ে বিতর্কে দুই ভাই জড়িয়ে পড়লে এক রাতে রোমুলাস হত্যা করেন নিজের ভাই রেমুসকে এবং নিজেকে রোমের সম্রাট বলে ঘোষণা করেন। মূলত, রোমুলাস থেকেই রোম শব্দের উৎপত্তি বলে ধারণা করা হয়।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে একদল প্রত্নতাত্ত্বিক ঘোষণা দেন, তারা রোমান ফোরামের সিনেট হাউজের নিচে কিংবদন্তি রোমুলাসের সমাধির সন্ধান পেয়েছেন। সিএনএন এ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার, ওই সমাধিস্থলে এবার ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাসের আগের রাতে দুটি গাছ দেখতে পান কিউরেটর। গাছ দুটির বয়স দুইদিনের হলেও একটি গাছ উচ্চতায় একটু লম্বা অন্যটি একটু বেটে। শুধু তাই নয়, বড়ো গাছটির মগপাতায় রোমুলাসের মুখায়ব ভাসছে আর অন্যটিতে রেমুসের। এরপর অনেক বিশ্বাসীরা প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছেন। তবে গাছে রোমুলাস বা রেমুসের মুখায়বের কোনো অস্তিত্ব নেই বলেই জানিয়েছেসায়েন্স জার্নাল এসোসিয়শন। তবে গবেষকদলের প্রধান টিটল বোলস নেচার ম্যাগাজিনকে বলেন, তিনি শুনেছেন এবং সত্যই মনে হচ্ছে। কারণ তাদের জীবন বেশ রহস্যাবৃত, নাহলে মায়া নেকড়ের কাছে বড়ো হবে কেন আর আমরাই বা এতোবছর পর সমাধি খুঁজে পাবো কেন আর গাছ দুটিই  ‘শুভ বড়দিন’ এর আগে হঠাৎ জন্ম নিবে কেন?

  সালতামামি

পাখিরা সংকটাপন্ন



বিভোর, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম,
বিলুপ্তপ্রায় তালগাছ ও বাবুই পাখির শৈল্পিক বাসা। ছবি: এবি সিদ্দিক

বিলুপ্তপ্রায় তালগাছ ও বাবুই পাখির শৈল্পিক বাসা। ছবি: এবি সিদ্দিক

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলার পাখিরা এখন সংকটাপন্ন। এ কথার মানে বিপদগ্রস্থ। এক সময় পাখির কলকাকলীতে গ্রামবাংলার মানুষের ঘুম ভাংলেও এখন আর গ্রাম বাংলার আনাচে-কানাচে আগের মত ব্যাপকভাবে পাখির ডাক আর শোনা যাচ্ছে না। কালের আবর্তে গ্রাম-বাংলার প্রকৃতি থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে পাখি।

নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের মাধ্যমে পাখির আবাসস্থল ধ্বংস ও বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে প্রয়োগ করা কীটনাশকের প্রভাবে এসব পাখি আজ বিলুপ্ত প্রায়। বিশেষ করে জাতীয় পাখি দোয়েল, বাবুই, মদনটাক, ঘুঘু, ময়না, শালিক, টিয়া, টুনটুনি, কাঠটোকরা, শ্যামা, কোকিল, চোখগ্যালো, ডাহুক, সারস, মাছরাঙা, মৌটুসি, প্যাঁচাসহ আরো অনেক পাখিকে আর দেখা যায় না।

শোনা যায়না এসব পাখির মধুর ডাক। আগে রাতের ঘুম ভাঙতো পাখির কলতানে অথচ এখন যান্ত্রিক যুগে ঘুম ভাঙে যানবাহন ও মাইকের শব্দে। রাতের প্রতিটি প্রহরে ডাকতো পাখি কিন্তু এখন প্রহর জানার যেন কোন উপায় নেই।

এমনকি বলাবাহুল্য যে, বর্তমান প্রজন্ম এসব পাখি চিনেই না, এসব পাখির ডাক শোনেনি কোন দিন। ফলে কিশোর-কিশোরদের কাছে এসব পাখি হয়ে যাচ্ছে গল্প আর ইতিহাস। অবাক লাগে এদেশের জাতীয় পাখি দোয়েল সেটিও আজ বই অথবা ছবিতে দেখে পরিচিত হয় শিশু-কিশোররা। তারা কখনো দেখেনি মুক্ত আকাশে উড়ান্ত এসব নামকরা পাখি, শোনেনি পাখির ডাকও।

শৈল্পিক বাসা তৈরি করছে বাবুই পাখি। ছবি: এবি সিদ্দিক

বলা যাক - বাবুই পাখির কথা। নিপুণ শিল্পকর্মে গড়ে তোলা কুঁড়ে ঘর সদৃশ্য দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত বাসা তৈরির জন্য বাবুই পাখি বিখ্যাত। চিরচেনা বাবুই পাখির স্বাধীনতা আর সুখ দুই-ই আজ হুমকির মুখে। বসবাস উপযোগী পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে শৈল্পিক বাসার কারিগর বাবুই । মাত্র এক যুগ আগেও বিভিন্ন অঞ্চলে সর্বত্র চোখে পড়তো বাবুই পাখি। গ্রাম বাংলার মাঠের ধারে, পুকুর কিংবা মাঠের পাড়ে প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছ হারিয়ে গেছে ইটভাটার আগ্রাসনে। তেমনি হারাতে বসেছে প্রকৃতির শিল্পী পাখির ভোরবেলার কিচিরমিচির সুমধুর ডাকাডাকি আর উড়াউড়ি।

এখন আর সারিবদ্ধ প্রহরী তালগাছের পাতায় ঝুলতে দেখা যায় না তাদের শৈল্পিক বাসা। কিচির মিচির শব্দে মুখর হয় না গ্রামবাংলার জনপদ। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, কীটনাশকের ব্যবহার, শিকারিদের নানা কৌশলের পাখি শিকার, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে এ পাখি বিলুপ্ত হতে বসেছে। তাছাড়া সেই তালগাছের সারিও আজ খুব একটা চোখে পড়ে না।

সচেতনদের মতে, কৃষককূল কীট দমনে ফসলের ক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগ করে, এতে করে পাখির খাদ্য ফড়িং, ফুতি, প্রজাপতি, মশা, লেদা পোকা, গোয়ালি সহ বিভিন্ন প্রকার কীটপতঙ্গ আক্রান্ত হয় বা মারা যায়। আর এসকল মরা বা আক্রান্ত কীট খেয়ে পাখি মারা যাচ্ছে।

পশ্চিম হাইল হাওর এলাকার প্রায় সত্তর বছরের কৃষক ফজর আলী বললেন, আমরা আগে জমিতে কীটনাশক দিতাম না। ফলে সে সময় মাঠেঘাঠে হরেক রকম পাখি নেচে বেড়াতো। আমাদের ফসলী মাঠে পাখির অবাধ বিচরণের ফলে অতিষ্ঠ হয়ে মাঠে পাহারায় বসতে হতো, আবার কখনো নির্দ্দিষ্ট সময়ের আগেই ফসল ঘরে তুলতে হতো। আজ আর সেসব পাখি দেখা যায় না, পাখির ডাক শোনাও যায়না।

  সালতামামি

;

পরার্থে উৎসর্গিত হোক ঈদের আনন্দ



মায়াবতী মৃন্ময়ী, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
পরার্থে উৎসর্গিত হোক ঈদের আনন্দ

পরার্থে উৎসর্গিত হোক ঈদের আনন্দ

  • Font increase
  • Font Decrease

আনুমানিক শতবর্ষ আগে কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন ‘‘জীবনে যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসে না নিদ/ মুমুর্ষ সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ?'' কবিতা রচনার পটভূমি ছিল ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসনাধীন ব্রিটিশ-বাংলা। আজকের পটভূমিতেও কবিতাটি এতটুকু প্রাসঙ্গিকতা হারায় নি।

কারণ, একদিকে ঈদের আনন্দে ভাসছে মানুষ। আবার আরেকদিকেই চলছে চাপা হাহাকার। প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির দ্বৈরথ তীব্রভাবে বিদ্ধ হয়েছে বহু মানুষে আনন্দ, উপভোগ, উৎসব ও উদযাপন।

অনেক উন্নতি ও প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির পরেও একথা সত্য যে সমাজে বৈষম্য কমেনি। সম্পদের বণ্টন সুষম হয়নি। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষের মধ্যে অনেকেরই স্বাভাবিক জীবনধারণ করতেই নাভিশ্বাস চলছে।

মুদ্রার আরেক পিঠে কেনাবেচা চলছে লাখ টাকার পাঞ্জাবি, বাহারি উপহার, অঢেল টাকাপয়সার সয়লাব। গণমাধ্যমের সংবাদে জানা গেছে, এবার ঈদ উপলক্ষে হরেক রকমের পাঞ্জাবি এসেছে। একেকটির দাম একেক রকম। কাপড়ের মধ্যেও আছে বিস্তর ফারাক। রাজধানীতে পোশাকের বিভিন্ন শোরুম ঘুরে একটিতে এমন একটি পাঞ্জাবি পাওয়া গেল, যেটির দাম ৭৯ হাজার টাকা। রাজধানীর গুলশান-১ নম্বরে এক ফ্যাশন ডিজাইনেট শোরুমে দেখা মিলল ‘সবচেয়ে দামি’ এই পাঞ্জাবির।

পলিনোজ জর্জেটের ওপর সূক্ষ্ম সেলাইয়ে জামদানির নকশা করা এই পাঞ্জাবি মাত্র একটি আনা হয়েছে। ‘আরোগ’ নামের একটি ব্র্যান্ডের জন্য এই পাঞ্জাবি তৈরি করা হয়েছে ভারতে। পাঞ্জাবির গায়ে থাকা মূল্য ৭৫ হাজার টাকা। তবে এর সঙ্গে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) যোগ করলে এটির মোট দাম দাঁড়ায় ৭৯ হাজার টাকা।

এমন এক পাঞ্জাবির টাকায় কয়েকটি পরিবারের মাসের খরচ চলে যাওয়ার কথা। বিশেষত সদ্য প্রবহমান দারুণ গরমে গ্রামবাংলার বিশাল কৃষকগোষ্ঠী যে নিদারুণ কষ্টে নিপতিত হয়েছে, তাদের কাছে এই গৌরবময় পাঞ্জাবির সংবাদ বজ্রাঘাত-সম। যে শ্রমিক ও দিনমজুর রোজার চরম কষ্টের পর সামান্য কটি টাকায় পরিবারপরিজনের মুখে ঈদ আনন্দের হাসি ফুটাতে লবেজান, তার কাছে দামি পাঞ্জাবির খবর তৃপ্তির বদলে কষ্ট বাড়ায়।

সামর্থ্যানুযায়ী মানুষ খরচ করবে, এতে কোনো অন্যায় নেই। কিন্তু সেই খরচ যদি হয় শুধুমাত্র আত্মসুখ কবলিত, তাহলে একটি নৈতিক চাপ থেকে যায়। বরং যে খরচে নিজের পাশাপাশি সমাজের বহু মানুষের মঙ্গল নিহিত থাকে, তেমন খরচই কল্যাণকর।

কবিতায় সবাই পড়েছি, "আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে/সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।" আরেকটি কবিতায় বলা হয়েছে, "আপনা রাখিলে ব্যর্থ জীবন সাধনা/ জনম বিশ্বের তরে পরার্থে কামনা।"

কবিতাগুলো এমনিতেই রচিত হয়নি। সামাজিক প্রয়োজনে ও মানবিক কল্যাণেই কবি আরো বলেছেন, "আত্মসুখ অন্বেষণে আনন্দ নাহিরে/বারে বারে আসে অবসাদ/পরার্থে যে করে কর্ম তিতি ঘর্ম-নীরে/সেই লভে স্বর্গের প্রসাদ।"

অতএব, পরার্থে জীবন উৎসর্গ করার মাধ্যমে মানবজীবন সার্থকতায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সমাজের কল্যাণে নিজেদের নিঃশেষে বিলিয়ে দেওয়ার মধ্যে আছে পরম সুখ, অনির্বচনীয় আনন্দ ও অপরিসীম পরিতৃপ্তি।

অন্যের উপকার সাধনই তাই সবার লক্ষ্য হওয়া উচিত। মানুষ একে অপরের ওপর নির্ভরশীল বলে তাকে সমাজবদ্ধভাবে বাস করতে হয়। এজন্য পরস্পর প্রীতি ও ভালােবাসা, নির্ভরতা ও সহযােগিতার পরিবেশ মানুষ নিজের প্রয়ােজনেই সৃষ্টির গােড়া থেকে গড়ে তুলেছে।

শুধু পরিবার বা সমাজ নয়, রাষ্ট্র নয়, সমগ্র পৃথিবী ও রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং জাতিগােষ্ঠী পরস্পর সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য, নির্ভরতা ও সহযােগিতার মধ্যে বাস করার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। কারণ একজন মানুষ যেমন সমাজবিচ্ছিন্ন হয়ে বাস করতে পারে না, তেমনি পৃথিবীর বৃহৎ মানবগােষ্ঠীও পরস্পর নির্ভরশীলতা ছাড়া বাস করতে পারছে না।

এমন একটি বৈশ্বিক সমাজে আমরা নিজেদের নিয়ে আত্মকেন্দ্রিকভাবে, শুধু নিজের সুখ-শান্তির কথা চিন্তা করে বাস করতে পারব না। প্রকৃতপক্ষে, মানুষ শুধু ভােগ-বিলাস ও স্বার্থের জন্যেই জন্মগ্রহণ করে নি। পরের কল্যাণে জীবনকে উৎসর্গ করার মাঝেই তার জীবনের চরম ও পরম সার্থকতা। ঈদের সময় এই মনোভাবই সবার মধ্যে জাগ্রত হোক। ঈদ মোবারক।

  সালতামামি

;

ঠোকর দিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করে ছোট হলদেকুড়ালি



বিভোর, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম,
গাছের ডালে মুখোমুখি ছোট হলদেকুড়ালি দম্পতি। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

গাছের ডালে মুখোমুখি ছোট হলদেকুড়ালি দম্পতি। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

  • Font increase
  • Font Decrease

গাছে গাছে গাছের গায়ে ঠোকর দিয়ে বেড়ানো একটি বিশেষ প্রজাতির পাখির নাম ছোট হলদেকুড়ালি। এরা এক ধরণের কাঠঠোকরা জাতীয় পাখি। এদের ইংরেজি নাম Lesser Yellownape এবং বৈজ্ঞানিক নাম Picus chlorolophus। দেশের বিরল আবাসিক পাখি হিসেবে এরা পরিচিত।

বিরল আবাসিক পাখি -এ কথাটার অর্থ হলো – পাখিটিকে সচরাচর দেখা যায় না। আর যদিও বা দেখা যায় তারপরও খুবই কম সংখ্যায় দেখা যায়।

প্রখ্যাত পাখি গবেষক ইনাম আল হক বলেন, ছোট হলদেকুড়ালি বাংলাদেশসহ ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় বাস করে। ওরা সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের মিশ্র চিরসবুজ বন ও সুন্দরবনের বাসিন্দা। এছাড়া চা-বাগানেও দেখা মেলে। সচরাচর জোড়ায় বা ছোট পারিবারিক দলে বিচরণ করে। চোখা চঞ্চুর মাধ্যমে গাছের বাকল থেকে পিঁপড়া, উইপোকা ও গাছ ছিদ্রকারী পোকা সংগ্রহ করে খায়। তবে রসাল ফলও খেতে পারে। সচরাচর নীরব, মাঝেমধ্যে নাকি সুরে ‘পি-য়া...’ শব্দে ডাকে।

পাখিটির শারীরিক গঠন সম্পর্কে তিনি বলেন, দেহের দৈর্ঘ্য ২৫-২৮ সেন্টিমিটার এবং ওজন প্রায় ৫৭-৭৪ গ্রাম। ঠকঠক শব্দে ডাল ঠোকরানো পাখিটি দেখতে বেশ সুন্দর। পিঠসহ দেহের ওপরটা সবুজাভ হলুদ। সবুজাভ মাথা ও জলপাই ঘাড়ে ছোট্ট সুদৃশ্য হলুদ–ঝুঁটি। লেজ কালচে, থুতনি সাদা ও বুক সবুজাভ। সাদা দেহতলে সবুজ ডোরা। চোখের রং গাঢ় লাল। চোখের চারপাশের ত্বক ধূসর। চঞ্চু কালচে বাদামি। পা ও পায়ের পাতা সবুজাভ, নখ বাদামি।

তিনি আরও বলেন, স্ত্রী-পুরুষে কিছুটা পার্থক্য থাকে। পুরুষের চোখ ও মাথার মাঝে গাঢ় লাল ডোরা থাকে। তাছাড়া একটি গাঢ় লাল রেখা চোখের ওপর দিয়ে চলে গেছে। স্ত্রী পাখির এই ডোরা না থাকলেও গাঢ় লাল রেখাটি চোখের পেছন থেকে ঘাড় পর্যন্ত চলে গেছে।

স্বভাব এবং খাদ্যতালিকা সম্পর্কে এ পাখি বিশেষজ্ঞ বলেন, ছোট হলদেকুড়ালি প্রশস্ত পাতার চিরসবুজ বন, পাতাঝরা বন, পাহাড়ি বনও প্যারাবনে বিচরণ করে; সাধারণত জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়; মাঝে মাঝে ফিঙে, ছাতারে ও অন্যান্য পতঙ্গভুক পাখির সহযোগী হয়ে শিকার করতে দেখা যায়। ঠোকর দিয়ে গাছের বাকল থেকে এরা খাদ্য সংগ্রহ করে। খাদ্যতালিকায় রয়েছে পিঁপড়া ও উইপোকা, কাঠ ছিদ্রকারী পোকা, পিউপা ও রসালো ফল।

এপ্রিল থেকে মে প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখি ঘাড়ের হলুদ–ঝুঁটি খাড়া করে মাথা এপাশ-ওপাশ ঘোরায় ও গাছের ফাঁপা ডালে আঘাত করে ড্রামের মতো শব্দ করে। গাছের ক্ষয়ে যাওয়া ডালে গর্ত করে বাসা বানায়। বাসা বানানো, ডিমে তা দেওয়া ও ছানাদের লালনপালন স্ত্রী-পুরুষ মিলেমিশে করে। ডিম পাড়ে ৩-৫টি, রং সাদা, যা ফোটে ১১-১৪ দিনে। আয়ুষ্কাল ৫-৬ বছর বলে জানান এই পাখি গবেষক।

  সালতামামি

;

বহু দূর থেকে শোনা যেতো যে মায়াবী পাখির ডাক



বিভোর, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম,
চন্দনা টিয়ার সৌন্দর্য। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

চন্দনা টিয়ার সৌন্দর্য। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

  • Font increase
  • Font Decrease

আকাশের ওই কোণ থেকে মৃদু ভেসে আসলে একটা পাখির ডাক। কিছুক্ষণের মধ্যেই এই ডাকটি ক্রমশ স্পষ্ট হতে লাগলো। চা বাগান বা পাহাড়ি অঞ্চল অধ্যুষিত এলাকায় এই পাখিটি একা কিংবা দলগতভাবে উড়ে চলে। তখন ডাক ছড়ায়। দূর থেকে দূরে।

তবে বর্তমানে এ পাখিটি খুব কম চোখে পড়ে। কালেভাদ্রে হয়তো দেখা যায়। প্রজননজনিত সমস্যা কারণে এ প্রজাতিটি ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে পড়ছে।

বিলুপ্ত হয়ে পড়া এ পাখিটি নাম ‘চন্দনা’। কেউ কেউ ‘চন্দনা টিয়া’ও বলেন। পাখির নাম সবুজ টিয়া। তবে চন্দনা টিয়া নামেও উল্লেখ করা হয়। এর ইংরেজি নাম Alexandrine Parakeet বৈজ্ঞানিক নাম Psittacula eupatria দেখতে খুব সুন্দর। সবুজ দেহ। তোতা পরিবারের মধ্যে এ পাখিগুলোই বেশি আকর্ষণীয়। দেহের তুলনায় এদের লেজ অনেকটাই লম্বা। বিচরণ করে শুষ্ক ও আর্দ্র পাতাঝরা বনাঞ্চলে। ম্যানগ্রোভ অরণ্যেও দেখা যায়। এরা বাংলাদেশের বিরল আবাসিক পাখি।

বিশেষ করে ফল এবং বীজজাতীয় শস্য খেতের আশপাশে বেশি নজরে পড়ে। ঝাঁকবেঁধে শস্য খেতে বিচরণ করার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে এরা। যা খায় তার চেয়ে বেশি অপচয় করে। কৃষকদের সঙ্গে এদের বৈরিতার কারণ ফসল নষ্ট করা নিয়ে। মাঝে মধ্যে এদের একাকী কিংবা জোড়ায় জোড়ায়ও বিচরণ করতে দেখা যায়। কণ্ঠস্বর কর্কশ।

খাবার খেতে ব্যস্ত চন্দনা। ছবি: আবু বকর সিদ্দিক

কয়েক দশক আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ প্রজাতিটির সাক্ষাৎ পাওয়া গেলেও ইদানিং যত্রতত্র নজরে পড়ে না। খাঁচায় বন্দী এবং উঁচু গাছ-গাছালির সংকটের কারণে এদের প্রজননে বিঘ্ন ঘটছে। ফলে প্রজাতিটি দেশে ‘মহাবিপন্ন’ হয়ে পড়েছে। এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার পর্যন্ত। অত্রাঞ্চলে এই পাখিগুলো ভালো অবস্থানে রয়েছে।

প্রজাতির দৈর্ঘ্য ৫৬-৬২ সেন্টিমিটার। লেজ ২৯-৩২ সেন্টিমিটার। স্ত্রী-পুরুষ পাখির মধ্যে বিস্তর তফাৎ রয়েছে। পুরুষ পাখি আকারে কিছুটা লম্বা। তাছাড়া পুরুষ পাখির গলার পেছনে এবং ঘাড়ের পাশে রয়েছে গোলাপি বলয়। থুতনির কালো রেখা গলাবন্ধের সঙ্গে মিশেছে। সব দেহ ঘাস-সবুজ রঙের। কেবল ডানার মধ্য পালকে রয়েছে লালপট্টি। স্ত্রী পাখির ক্ষেত্রে গলার পেছনের গোলাপি বলয় নজরে পড়ে না। থুতনির কালো রেখার উপস্থিতি নেই। যুবক চন্দনার ক্ষেত্রেও এ রকমটি নজরে পড়ে। উভয়ের ঠোঁট গাঢ় লাল। ঠোঁটের ডগা কমলা-লাল। চোখের পাতা কমলা-হলুদ, বলয় নীল।

ফল, ধান, গম, ভুট্টা, ফুলের রস, গাছের কচি পাতা ইত্যাদি। প্রজনন মৌসুম নভেম্বর থেকে এপ্রিল। গাছের প্রাকৃতিক কোটরে বাসা বাঁধে। তবে প্রথম পছন্দ নারিকেল গাছের কোটর। এ ছাড়াও কাঠ ঠোকরার পরিত্যক্ত বাসায়ও ডিম পাড়ে। ডিমের সংখ্যা দুই-চারটি। ডিম ফুটতে সময় লাগে প্রায় তিন সপ্তাহ।

পাখি গবেষক সৌরভ মাহমুদ বলেন, চন্দনা টিয়া বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ আবাসিক পাখি। বাসা করার জন্য বড় গাছের অভাব, গাছে ফোকরের অভাব এবং অবাধে বেচাকেনার কারণে এ টিয়া প্রজাতি কেবল দেশের কয়েকটি জেলায় দেখা যেত। ঢাকায় এ পাখির উপস্থিতি জানার পর থেকে চন্দনা টিয়া নিয়ে গবেষণা ও সংরক্ষণের কাজ শুরু করা হয়। দুই দফায় বাসা করার জন্য কাঠের ও পাইপের তৈরি কৃত্রিম বাসা ঝোলানো হয়, যেখানে এ পাখিটি বাসা করে। কারণ, ঢাকায় বয়সী গাছ কম এবং ফোকরহীন গাছই বেশি।

  সালতামামি

;