বেফাকের চলমান সংকট, সমাধান যে পথে



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর বেফাকের কার্যনির্বাহীর কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন আল্লামা শফী, ছবি: সংগৃহীত

২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর বেফাকের কার্যনির্বাহীর কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন আল্লামা শফী, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘১৮ নভেম্বর শুক্রবার, ২০১৬ সাল। সকাল দশটার কিছু পর বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার মহাসচিব মাওলানা আবদুল জাব্বার জাহানাবাদী ইন্তেকাল করেন। এর ঠিক তিনদিন পর (২১ নভেম্বর, সোমবার) হাটহাজারী মাদরাসায় বেফাকের কার্যনির্বাহী পরিষদের এক জরুরি সভা বসে। ওই সভায় বেফাকের গঠনতন্ত্রকে পাশ কাটিয়ে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যার প্রেক্ষিতে বেফাকের প্রতি আলেম-উলামা ও ছাত্রদের ক্ষোভ বাড়তে থাকে।’

এভাবেই রাজধানীর এক মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও বেফাকের উচ্চপদে আসীন এক আলেম বার্তা২৪.কম-এর চলমান সংকটের সূচনা সম্পর্কে কথা বলছিলেন।

আসলে কী কী হয়েছিলো সেদিন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমার মতে ওইদিন থেকেই শুরু হয় বেফাকে ক্ষমতা চর্চার পর্ব। মাওলানা আবদুল জাব্বারের ইন্তেকালের পর শুরু হয় বেফাকে মেরুকরণের নানা হিসাব। ওই হিসাব নিজেদের পক্ষে রাখতে সহকারী মহাসচিব প্যানেল থেকে কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে অর্থ সম্পাদক মাওলানা আবদুল কুদ্দুসকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়। অথচ বিভিন্ন কমিটিতে সহ, সহকারী কিংবা সহযোগী পদগুলো রাখাই হয় ক্ষমতার ধারাবাহিকতা ও ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য। এক্ষেত্রে তা রক্ষা হয়নি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাটহাজারীর ওই বৈঠকে বেফাক পরিচালনার দায়িত্বে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। গঠনতন্ত্রে না থাকলেও গঠন করা হয় ১৩ সদস্যবিশিষ্ট উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিশেষ কমিটি। কাউন্সিল ছাড়া শুধুমাত্র পক্ষ ভারী করার জন্য ৫ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে। ওই বৈঠকে সহ-সভাপতি পদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়- মাওলানা সাজেদুর রহমান, মাওলানা সফিউল্লাহ, মাওলানা নূরুল ইসলাম, মাওলানা আবদুল হামিদ মধুপুরের পীর, মাওলানা আবদুর রব (লালবাগ মাদরাসা) ও মাওলানা মোসলেহ উদ্দীন রাজুকে। তন্মধ্যে অধিকাংশই বেফাক সভাপতি আল্লামা শফীর খলিফা।

আর বেফাকের কার্যক্রম পরিচালনায় সহজতর করার লক্ষ্যে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সদস্যরা হলেন- মাওলানা আশরাফ আলী রহ., মাওলানা আনোয়ার শাহ রহ., মুফতি ওয়াক্কাস, মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী, মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, মাওলানা নূরুল ইসলাম, মাওলানা সাজেদুর রহমান, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা নূরুল আমীন, মাওলানা আবদুর রব, মাওলানা মুহাম্মদ আনাস মাদানী, মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু ও মাওলানা মুনিরুজ্জামান।

এর পর ২০১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বেফাকের দশম কাউন্সিলে নতুন কমিটি গঠন করা হয়, গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু এখনও নতুন গঠনতন্ত্র অনুমোদন হয়নি। ফলে পুরোনো গঠনতন্ত্র মোতাবেক খাস কমিটি গঠন ও কার্যনির্বাহী কমিটির কলেবর বাড়ানো নিয়ে এক ধুম্রজাল রয়েছে। সেটা অবশ্য ভিন্ন প্রসঙ্গ।

এর পর চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারী মাদরাসায় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে বেফাকের মহাসচিব আবদুল কুদ্দসকে ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র সহ-সভাপতি ও কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ অথরিটি ‘আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’-এর ভারপ্রাপ্ত কো-চেয়ারম্যান করা হয়। মাওলানা আবদুল কুদ্দুসকে এভাবে তিন তিনটি পদ দেওয়ায় বেফাকের নেতৃস্থানীয় আলেমদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।

মূলত বেফাকের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও পদাধিকার বলে হাইয়াতুল উলইয়ার কো-চেয়ারম্যান আল্লামা আশরাফ আলী এবং এক নম্বর সহ-সভাপতি আল্লামা আনোয়ার শাহের মৃত্যুর পর তাকে এভাবে পদায়ন করা হয়। এবারও মানা হয়নি গঠনতন্ত্র ও নিয়মতান্ত্রিকতা। কারণ সহ-সভাপতির প্যানেল থেকে কাউকে সিনিয়র সহ-সভাপতি না করে সেই মাওলানা আবদুল কুদ্দসকেই কেন দায়িত্ব দেওয়া হলো সেটা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। যেখানে বেফাকের সহ-সভাপতি রয়েছেন ত্রিশজনের বেশি। প্রয়োজনের সময় যদি সহ-সভাপতিদের দায়িত্বই না দেওয়া হয়, তাহলে এভাবে সহ-সভাপতির পদ দেওয়া কেন, এসব পদ কী শুধু অলঙ্কারিক? সেটাও নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু কোনো জবাব কেউ দেননি। শোনা যাচ্ছে, মাওলানা আবদুল কুদ্দুস আগামী কাউন্সিল পর্যন্ত এসব দায়িত্ব পালন করবেন।

সাম্প্রতিক সময়ে বেফাক মহাসচিবসহ অন্যদের কিছু ফোনালাপ ফাঁস হয়। এর প্রেক্ষিত্রে বেফাকের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা আবু ইউসুফসহ তিনজনকে বহিস্কার করা হয় এবং অভিযোগ সম্পর্কে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। নীতি-নৈতিকতা ও সম্মান রক্ষার কথা বলে বিভিন্নভাবে মাওলানা আবুদল কুদ্দুসকে পদত্যাগ করতে বলা হয়। তিনি পদত্যাগ করতে অস্বীকার করেন। এরই মধ্যে বেফাকের সভাপতি আল্লামা আহমদ শফী মাওলানা আবদুল কুদ্দুসের বিষয়ে উঠা অভিযোগের বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়ে তাকে সম্পূর্ণ নির্দোষ বলে আখ্যা দেন। তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। এদিকে মুখ খুলেন অপসারিতরা। দাবি করেন, তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। এটা নিয়ে তারা শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকেও প্রশ্ন তুলেছেন। অপসারিত তিন জনই আলাদা আলাদাভাবে তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার ও তাদের অপসারণের বিষয়টি সঠিক হয়নি বলে দাবি করেছেন।

তবে নেতৃস্থানীয় আলেমরা এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য না করলেও, তারা স্পষ্টভাবে এটা বলছেন; বেফাক নিয়ে চলমান এসব অস্থিরতা এবং বেফাকের যাবতীয় অনিয়ম ও অন্যায়ের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত, গঠনতান্ত্রিক উপায়ে বেফাকের পরিচালনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য মজলিশে আমেলা ও মজলিশে শুরার বৈঠক ডাকা জরুরি। ওই বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি উল্লেখপূর্বক সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত বেফাকের চলমান অস্থিরতা আরও বাড়বে।

২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর বেফাকের কার্যনির্বাহীর কমিটির বৈঠকে উপস্থিত সদস্যদের একাংশ, ছবি: সংগৃহীত

প্রকাশ্যে না এলেও এটা স্পষ্ট যে, বেফাকে এখন কয়েকটি ধারা বিদ্যমান। একটি ধারা মাওলানা আবদুল কুদ্দসকে স্বপদে রাখতে চান, আরেকটি ধারা বেফাককে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে পরিচালনার কথা বলছেন। অন্য আরেকটি ধারা রয়েছে, যারা চুপ থেকে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে চলমান সঙ্কট সম্পর্কে তারা ওয়াকিবহাল। এই বাস্তবতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে চলতে তুমুল বিতর্ক। বেফাক থেকে পরিস্থিতি ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলে গেছে। প্রকাশ পাচ্ছে সত্য-মিথ্যার মিশেলে নানা পারিবারিক অনাকাঙ্খিত বিষয়, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

এই পরিস্থিতিতে চারদিক থেকে দাবি উঠছে, চলমান সঙ্কট সমাধানে বিশেষ করে; বেফাকের নানা দুর্নীতি, অনিয়ম, প্রশ্নপত্র ফাঁস, মেধা তালিকায় জালিয়াতিসহ নানাবিধ স্বেচ্ছাচার বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার। সেই সঙ্গে অপ্রাসঙ্গিক বির্তক এড়িয়ে সৌজন্য ও শৃঙ্খলা রক্ষার। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের জেদ, ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা, হুমকি পাল্টা হুমকি যেমন কাম্য নয়, তেমনি চুপ থাকাও কোনো সমাধান নয়। তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল থেকে জটিলতর হবে।

বেফাকের চলমান সঙ্কট প্রসঙ্গে মিরপুরের স্বনামধন্য এক মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও বেফাকের নেতৃস্থানীয় একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বেফাকের চলমান সঙ্কট দূর করার একটাই উপায় তা হলো- বেফাকের সহ-সভাপতিদের এক হয়ে এগিয়ে আসা। সেই সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে মজলিশে আমেলা ও শুরার বৈঠক ডাকা। সেখানে বিষয়গুলো পর্যালোচনা সাপেক্ষে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। আরেকটি কথা, শুধুমাত্র পাল্লাভারী করার জন্য কোনো কমিটি না করা।’

তবে, তরুণ আলেমরা বলছেন, চলমান এই অস্থিরতা সমাধানের জন্য বেফাকের গঠনতন্ত্রের দিকে তাকালেই হয়। বেফাকের পরিচালনা এবং সার্বিক বিষয়ে যে গঠনতন্ত্র রয়েছে সে মোতাবেক সিদ্ধান্ত করে কাজ করলেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। এক্ষেত্রে তরুণরা সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ওপর গুরত্বারোপ করছেন।

বেফাকের চলমান অস্থিরতা ও অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে মাওলানা আবদুল কুদ্দসকে একাধিককার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

আরও পড়ুন:

কওমি অঙ্গনে ক্ষোভ দানা বাঁধছে ধীরে ধীরে

অনিয়মই নিয়ম বেফাকে, মানা হয় না গঠনতন্ত্র!

বেফাকের নিজস্ব তদন্তেও উঠে আসে অনিয়মের কথা

বেফাকের অনিয়মে অভিযুক্তদের শাস্তি চান তরুণ আলেমরা

বেফাকের গঠনতন্ত্রে সংশোধন জরুরি

অন্যদিকে মাওলানা আবদুল কুদ্দসের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এক সহকারী মহাসচিব বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বেফাকের ঝামেলা মিটে গেছে। অভিযুক্তদের বহিস্কার করা হয়েছে। আর মাওলানা আবদুল কুদ্দসের বিষয়ে আল্লামা আহমদ শফী সন্তোষ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘এগুলো কওমি মাদরাসা, বেফাক ও হাইয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়। পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত থাকবে। কিন্তু নেতৃস্থানীয়দের মাঝে কোনো বিরোধ নেই। আর এসব বিষয়ে কথা বলার উপযুক্ত জায়গা ফেসবুক নয়। সুতরাং ফেসুবকে কে কী লিখছে না লিখছে সেটা নিয়ে আপাতত ভাবছি না। আমরা মাদরাসার কল্যাণে কাজ করছি। কাজ করতে যেয়ে যদি কোনো সমস্যা হয়, সেটা ঘরোয়া বৈঠকের মাধ্যমে এর সমাধান করে নেওয়া হয়, ভবিষ্যতেও হবে।’

প্রসঙ্গক্রমে তিনি বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) শীর্ষস্থানীয় আলেমদের একত্রে হাইয়াতুল উলাইয়ার বৈঠকের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের মাঝে কোনো পক্ষ-বিপক্ষ নেই। সবাই আল্লামা শফীর নির্দেশে একত্রে কাজ করছি। গত পরশু দিনও তো একসাথে মিটিং করে করোনার পরিস্থিতির কারণে বন্ধ থাকা মাদরাসাগুলো ঈদের পর ৮ আগস্ট খুলেও দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন হাইয়ার কো-চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মাওলানা আবদুল কুদ্দুস।’

   

ঈমানের স্বাদ ও মিষ্টতা কী?



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ঈমানের স্বাদ সবাই আস্বাদন করতে পারে না, ছবি : সংগৃহীত

ঈমানের স্বাদ সবাই আস্বাদন করতে পারে না, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, হজরত জিবরাইল (আ.) রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, এবার আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন, রাসুল (সা.) বললেন, ‘ঈমান হলো, তুমি ঈমান রাখবে আল্লাহর প্রতি, তার (আল্লাহর) ফেরেশতাদের প্রতি, তার কিতাবসমূহের প্রতি, তার রাসুলদের প্রতি এবং শেষ দিবসের (কেয়ামত) প্রতি। (এবং) তুমি ঈমান রাখবে তাককিরের ভালো-মন্দের প্রতি।’ হজরত জিবরাইল (আ.) বললেন, আপনি সত্য বলেছেন। -সহিহ মুসলিম : ৮

ঈমানের স্বাদ
হজরত আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী কারিম (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করবে ওই ব্যক্তি, যে আল্লাহকে রবরূপে, ইসলামকে দ্বীনরূপে এবং মুহাম্মাদ (সা.)-কে রাসুলরূপে সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করবে। -সহিহ মুসলিম : ৩৪

সুস্বাদু খাদ্যের স্বাদ সেই বুঝতে পারে যার জিহ্বায় স্বাদ আছে। রোগ-ব্যাধির কারণে নষ্ট হয়ে যায়নি। তদ্রূপ ঈমান ও যাবতীয় আমলের স্বাদও ওই খোশনসিব ব্যক্তিই অনুভব করে, যে সম্পূর্ণ সন্তুষ্টিচিত্তে ও সর্বান্তকরণে আল্লাহকে রব ও পরওয়ারদিগার এবং মুহাম্মদ (সা.)-কে রাসুল ও আদর্শ এবং ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ও জীবন ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করে।

আল্লাহতায়ালা, নবী মুহাম্মদ (সা.) ও ইসলামের সঙ্গে যার সম্পর্ক কেবলই বংশগত ও প্রথাগত বা কেবলই চিন্তাগত ও বুদ্ধিগত পর্যায়েই নয় বরং সে আল্লাহর বন্দেগি, মুহাম্মদ (সা.)-এর আনুগত্য এবং ইসলামের অনুসরণকে মনেপ্রাণে নিজের জীবনে গ্রহণ করে নেবে। সেই ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারবে। -মাআরিফুল হাদিস : ১/৯১

ঈমানের মিষ্টতা
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকবে সে ঈমানের মিষ্টতা অনুভব করবে। আল্লাহ ও তার রাসুল তার কাছে সবকিছু থেকে অধিক প্রিয় হওয়া, কাউকে ভালোবাসলে শুধু আল্লাহরই জন্য ভালোবাসা, আর কুফুরিতে ফিরে যাওয়াকে এমন ঘৃণা করা, যেমন সে ঘৃণা করে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে। -সহিহ বোখারি : ১৬

এই হাদিসের বিষয়বস্তুও আগের হাদিসের বিষয়বস্তুর প্রায় কাছাকাছি। উপস্থাপনায় কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। এই হাদিসে বলা হচ্ছে, ঈমানের মিষ্টতা ওই ব্যক্তিই অনুভব করতে পারবে, যে আল্লাহ ও তার রাসুলের ভালোবাসায় পরিপূর্ণ সমর্পিত থাকবে; আল্লাহ ও তার রাসুলকে জগতের সবকিছু থেকে বেশি ভালোবাসবে। অন্য কারও প্রতি যদি তার ভালোবাসা হয়, তা হবে সম্পূর্ণ এই ভালোবাসার অধীন। আর ইসলাম তার এতই প্রিয় যে, ইসলাম থেকে ফিরে যাওয়া, কুফুরিতে লিপ্ত হওয়া তার কাছে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার সমতুল্য। -মাআরিফুল হাদিস : ১/৯১

;

মসজিদ নির্মাণ করবে দাউদ কিম

কোরিয়ার প্রতিটি গলি থেকে ভেসে আসবে আজানের সুর



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
জমি কেনার দলিল হাতে দাউদ কিম, ছবি : সংগৃহীত

জমি কেনার দলিল হাতে দাউদ কিম, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কয়েক বছর আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী দক্ষিণ কোরিয়ান ইউটিউবার দাউদ কিম মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। এরই মধ্যে মসজিদের জন্য জমিও কিনেছেন তিনি। ইনস্টাগ্রামে ওই জমি ও তার দলিলের ছবি শেয়ার করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক এই নওমুসলিম। তিনি দেশটির ইঞ্চোন শহরে মসজিদটি নির্মাণ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

ইনস্টাগ্রামে কিম লিখেছেন, ‘অবশেষে আপনাদের সাহায্যে আমি ইঞ্চোনে মসজিদ নির্মাণের জন্য জমি ক্রয়ের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছি। খুব শিগগিরই জায়গাটিতে মসজিদ নির্মিত হবে। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না আমার এই স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে।’

ওই পোস্টে তিনি আরও লেখেন, ‘ওই জমিতে মসজিদের পাশাপাশি একটি ইসলামিক পডকাস্ট স্টুডিও তৈরির ইচ্ছা আমার। সত্যি এটি একটি দুঃসাহসিক পদক্ষেপ, এতে বহু সমস্যার সম্মুখীন হওয়া লাগতে পারে। তবে আমার বিশ্বাস- আমি এগুলো সম্পন্ন করতে সক্ষম হব।’

দাউদ কিম আশাবাদ ব্যক্ত করে লিখেছেন যে, ‘এমন একটি দিন আসবে, যেদিন কোরিয়ার প্রতিটি গলি আজানের সুমধুর ধ্বনিতে ভরে উঠবে। এ জন্য আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

কিম ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন। এরপর ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে তিনি সারাবিশ্বে বিখ্যাত বনে যান। জনপ্রিয় এই ইউটিউবার তার নিয়মিত ব্লগে ইসলামিক বিভিন্ন কনটেন্ট, নামাজ পড়ার ভিডিওসহ নানা কিছুই পোস্ট করে থাকেন। ২০২২ সালে কিম বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন। বাংলাদেশ ঘুরে তিনি পবিত্র উমরা পালন করতে সৌদি আরব যান।

দক্ষিণ কোরিয়ার এই গায়ক ইউটিউবিং করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ান। ঘুরতে ঘুরতে তিনি ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও তিউনিশিয়া যান। দেশগুলোতে গিয়ে ইসলাম ধর্মকে কাছ থেকে দেখে ও বুঝে তিনি আকৃষ্ট হন। ইসলামের জীবনবিধান দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে পুরোপুরি মুসলমান হয়ে যান।

দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ। যা কোরিয় উপদ্বীপের দক্ষিণ অংশ নিয়ে গঠিত। সিউল দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। সিউল বিশ্বের শীর্ষ ১০টি ধনী শহরের তালিকায় থাকা একটি শহর।

দক্ষিণ কোরিয়ায় ইসলামের উপস্থিতি খুবই সামান্য। ২০০৫ সালেও দেশটির আদমশুমারিতে মুসলিমদের কোনো বিভাগের সদস্য হিসেবে ধরা হত না। বর্তমানে দেশটিতে ২ লাখ মুসলিম রয়েছে, যাদের বেশিরভাগ বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশ থেকে আসা অভিবাসী এবং কিছু ধর্মান্তরিত বাসিন্দা। দেশটিতে ২১টি মসজিদ, ১৩টি ইসলামিক সেন্টার ও ১৪০টির মতো নামাজের স্থান রয়েছে।

১৯৬৯ সালে কোরিয়ান সরকার প্রদত্ত জমিতে গড়ে ওঠে সিউল কেন্দ্রীয় মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার। সিউল সেন্ট্রাল মসজিদ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম মসজিদ। যা হেনামডং সিউলে অবস্থিত। মসজিদটি ইতিমধ্যে বিশ্বের অনন্য সুন্দর মসজিদ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে।

;

তীব্র গরম মুমিনকে যা শিক্ষা দেয়



মাওলানা ফখরুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
গরম থেকে বাঁচতে ফুটপাতের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মাথায় পানি দিচ্ছেন, ছবি : রাজু আহমেদ

গরম থেকে বাঁচতে ফুটপাতের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মাথায় পানি দিচ্ছেন, ছবি : রাজু আহমেদ

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে এখন চলছে গ্রীষ্মকাল। ফলে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। বস্তুত শীত, গরম, রোদ, বৃষ্টি সবই আল্লাহর দেওয়া। তীব্র শীত আর প্রচণ্ড গরমে রয়েছে মুমিনে জন্য শিক্ষা। জনজীবন অতিষ্ট হওয়া গরম আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর আজাবের কথা। তাই তীব্র তাপদাহের সময় দয়াময় আল্লাহতায়ালার কাছে বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করা জরুরি।

পৃথিবীতে ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যেখানে মানবতার কল্যাণ সাধনকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। ফলে তীব্র গরমের সময় ইবাদত-বন্দেগি সহজ করেছে ইসলাম। হজরত আবু জার (রা.) বলেন, এক সফরে আমরা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম।
এক সময় মোয়াজ্জিন জোহরের আজান দিতে চেয়েছিল। তখন নবী কারিম (সা.) বলেন, গরম কমতে দাও। কিছুক্ষণ পর আবার মোয়াজ্জিন আজান দিতে চাইলে নবী কারিম (সা.) পুনরায় বলেন, গরম কমতে দাও।
এভাবে তিনি (নামাজ আদায়ে) এত বিলম্ব করলেন যে, আমরা টিলাগুলোর ছায়া দেখতে পেলাম।
এরপর নবী কারিম (সা.) বলেন, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হতে। কাজেই গরম প্রচণ্ড হলে উত্তাপ কমার পর নামাজ আদায় করো। -সহিহ বোখারি : ৫৩৯
বর্ণিত হাদিসের আলোকে বিধান হলো, অতীব গরমের সময় কিছুটা বিলম্ব করে জোহরের নামাজ আদায় করা সুন্নত।

গরমের সময় এমন কিছু আমল রয়েছে, যেগুলোর সওয়াব অনেক। একজন মুমিন সেসব আমল করে সহজেই আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারেন। ওই সব আমলের কয়েকটি হলো-

নফল রোজা
গরমের রোজা শীতের থেকে বেশি কষ্টকর। গরমের কষ্ট উপেক্ষা করে যদি নফল রোজা রাখা যায়, তাহলে আল্লাহতায়ালা বেশি নেকি দেবেন। সাহাবায়ে কেরাম ও পূর্ববর্তী বুজুর্গরা বেশি সওয়াবের আশায় গরমকালে রোজা রাখতেন।

পিপাসার্তকে পানি পান করানো
পিপাসার্তকে পানি পান করানো একটি উত্তম কাজ। আর যদি প্রচণ্ড গরমে কাউকে ঠাণ্ডা পানি পান করানো হয়, তাহলে তো কাজটি আরও উত্তম হবে। এক ব্যক্তি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করলেন, ‘কোন দান উত্তম? তিনি বললেন, ‘পানি পান করানো।’ -সুনানে নাসাই : ৫৪৫৬
ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, ‘তৃষ্ণার্তের তৃষ্ণা নিবারণ সর্বোত্তম মহৎ কাজের একটি।’
হাদিসের অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সদকা বা দান জাহান্নামের আগুন নির্বাপণ করে। আর পানি পান করানো উত্তম সদকা।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৭৪৩৫

নফল নামাজ
অতিরিক্ত গরম হলো- জাহান্নামের নিশ্বাস, তাই জাহান্নামের ভয়ে বেশি করে এবং লম্বা লম্বা সুরা দিয়ে নফল নামাজ আদায় করা উত্তম। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন গরম বেশি পড়বে, তখন বেশি নামাজ আদায় করো। কারণ অতিরিক্ত গরম হলো- জাহান্নামের নিশ্বাস।’ -মেশকাত : ৫৯১

গরম থেকে শিক্ষা
গরমের তীব্রতা থেকে মুমিনের জন্য রয়েছে শিক্ষা। কেননা জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ পৃথিবীর আগুনের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি। তাই এ গরম থেকে জাহান্নামের তীব্রতা অনুমান করে গোনাহ থেকে মুক্ত থাকা। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জাহান্নাম তার প্রতিপালকের কাছে এ বলে নালিশ করেছিল, হে আমার প্রতিপালক! (দহনের প্রচণ্ডতায়) আমার এক অংশ আরেক অংশকে গ্রাস করে ফেলছে। ফলে আল্লাহ তাকে দুইটি শ্বাস ফেলার অনুমতি দেন। একটি শীতকালে অপরটি গ্রীষ্মকালে। আর তাই তোমরা গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড উত্তাপ এবং শীতকালে তীব্র ঠাণ্ডা অনুভব করো।’ -সহিহ বোখারি : ৫৪৫৫

গ্রীষ্মকালকে গালমন্দ না করা
আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে, গরিবদের মাঝে সুমিষ্ট ফল বিতরণ করা। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করা। ঘামে ভেজা শরীরে জনসমাগমে গমন না করা। গরমের সময় প্রবাহিত ঘামের গন্ধ যেন অন্যের কষ্টের কারণ না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখা। গ্রীষ্মকালকে গালমন্দ না করা বিষয়টিও খেয়াল রাখার নির্দেশ দেয় ইসলাম।

বৃষ্টির জন্য নামাজ
প্রচণ্ড গরমে একপশলা বৃষ্টির জন্য মুমিনরা আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী। শস্য ফলানোসহ পশুপাখির খাবারের জন্য যেমন বৃষ্টি দরকার, তেমনি তীব্র তাপদাহে সৃষ্ট নানা জটিলতা ও কষ্ট থেকে মুক্তি পেতেও আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি খুব প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতে দয়াময় আল্লাহতায়ালার দরবারে বৃষ্টি কামনা করে নামাজ পড়া ও দোয়া করা সুন্নত। পরিভাষায় এই নামাজের নাম ‘ইসতিসকা’ বা বৃষ্টির নামাজ।

ইসলামের শিক্ষা হলো- সর্বাবস্থায় বান্দা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করবে। প্রচণ্ড গরমের সময়ও এর ব্যতিক্রম নয়। তীব্র তাপদাহের সময় মানুষের উচিৎ জাহান্নামের গরমের কথা স্মরণ করা। জাহান্নাম থেকে বাঁচতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে আত্মনিয়োগ করা।

একটু শান্তির জন্য দুনিয়ার জীবনে গরমের কষ্ট ও তীব্রতা থেকে বাঁচার জন্য যদি আমরা সম্ভবপর সব উপায় অবলম্বন করতে পারি, তাহলে আখেরাতের আজাব ও ভয়াবহতা থেকে বাঁচার জন্য আমলদার এবং সাধনাকারী হওয়া জরুরি।

;

৪০ বছর ধরে মদিনায় বিনামূল্যে চা-কফি খাওয়ানো বৃদ্ধের মৃত্যু



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
চা-কফি নিয়ে বসে আছেন শায়খ ইসমাইল আল-জাইম আবু আল-সাবা, ছবি : সংগৃহীত

চা-কফি নিয়ে বসে আছেন শায়খ ইসমাইল আল-জাইম আবু আল-সাবা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র মদিনা জিয়ারতকারীদের অনেকের কাছে পরিচিত নাম শায়খ ইসমাইল আল-জাইম আবু আল-সাবা। গত ৪০ বছর ধরে তিনি পবিত্র হজ-উমরা পালনকারীদের মাঝে বিনামূল্যে চা, কফি, রুটি ও খেজুর বিতরণ করেছেন। অনেক বাংলাদেশি হাজি তার হাতে চা-কফি পান করেছেন।

সদাহাস্য সিরিয়ান এই নাগরিক মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) ৯৬ বছর বয়সে মদিনায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হারামাইনের খবর সরবরাহকারী ভেরিফায়েড পেইজ ‘ইনসাইড দ্য হারামাইন’ এই খবর জানিয়ে তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে।

জানা যায়, প্রতিদিন ৪০টি ফ্লাস্কে করে চা-কফি আনতেন তিনি। এ জন্য একটি বিশেষ ট্রলি ব্যবহার করতেন, মসজিদে নববিতে যাওয়া অন্যতম পথ জায়েদিয়া এলাকায় বসতেন তিনি। সবুজ চা, লাল চাসহ নানা স্বাদের চা বানিয়ে আনতেন। থাকত চিনিযুক্ত, চিনিমুক্ত চা-কফি। এছাড়া এলাচযুক্ত চা, পুদিনা চা, বিভিন্নরকমের মশলাযুক্ত চা আনতেন।

তিনি রাস্তার পাশে বসে পথচারীদের মধ্যে চা, কফি, খেজুর, রুটি ও বিস্কুট বিনামূল্যে বিতরণ করতেন। এই কাজে তাকে সহযোগিতা করতেন ছেলেরা। কেউ কিছু দিতে চাইলে বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখান করতেন।

গত বছর সৌদি আরবের প্রভাবশালী পত্রিকা আল আরাবিয়া তাকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

সিরিয়ার নাগরিক শায়খ ইসমাইল প্রায় ৪০ বছর ধরে মদিনায় বসবাস করে আসছিলেন। মদিনার কুবা এভিনিউতে একটি সাধারণ বাড়িতে বসবাস করলেও নিজের সম্পদ পুরোটাই উৎসর্গ করেছিলেন হজ ও উমরা যাত্রীদের খেদমতে।

টানা চার দশক ধরে অনন্য এই সেবার কারণে সবার কাছে তিনি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাত্রে পরিণত হন। তার মৃত্যুতে মদিনায় শোকের ছায়া নেমে আসে। বাংলাদেশের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্মৃতিচারণের পাশাপাশি শোকপ্রকাশ করে তার জন্য দোয়া কামনা করেছেন।

;