এখন মহানন্দে চোখের পলকে হোন পদ্মাপার!
‘স্বপ্ন ছুঁয়েছে’ পদ্মার এপার-ওপারবর্ণিল রঙে রঙিন পদ্মার আকাশ, চারিদিকে উল্লাস ধ্বনি। স্বপ্ন ছুঁয়ে যাচ্ছে শিরদাঁড়া! গর্ব ও অর্জনে উদ্বেলিত হৃদয়। শিবচর, জাজিরায় মানুষের স্রোতের ঢেউ উঠেছে। সবার কণ্ঠে জয়গান।
এ যেন পরম মহেন্দ্রক্ষেণ। টোল প্লাজায় ধীর পায়ে এগিয়ে গেলেন পদ্মা সেতুর স্বপ্ন কারিগর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একজন যাত্রী হয়ে পরিশোধ করেন টোল। মাওয়া প্রান্তের ফলক উন্মোচন করে প্রবেশ করলেন স্বপ্ন সেতু পদ্মায়। তিনি হয়ে গেলেন ইতিহাসের সাক্ষী। উন্মোচিত হলো দক্ষিণের দ্বার, খুলে গেল সম্ভাবনার দুয়ার।
ঘড়ির কাটায় যখন ঠিক বেলা ১২টা, পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর সেতু পাড়ি দেন তিনি।
স্বপ্ন ছোঁয়ার এই ক্ষণে একটাই কথাই মনে হলো অনেক হয়েছে অপেক্ষা, আর না, এবার কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতার ভাষায় গেয়ে উঠি- ‘এখন আর অপেক্ষা কিসের?/যান, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলে/ এখন --মহানন্দে,-- মহাসুখে,/ চোখের পলকে হোন পদ্মাপার।’
গোটা দেশ আজ পদ্মা সেতুর উৎসবে মাতোয়ারা। ঐতিহাসিক এ দিনে লাখো জনতা পদ্মার পাড় শিবচরে গিয়ে মিলিত হয়েছেন। রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের এই সেতুর উৎসবে যোগ দিয়েছেন। সকাল ৮টার মধ্যে জাজিরা ও শিবচরের অন্তত চারটি ইউনিয়নের সড়ক লোকে-লোকারন্য হয়ে যায়। গ্রামের বিভিন্ন সড়ক ধরে মানুষ সমাবেশ স্থলে আসতে থাকেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষে পদ্মার তীরের ৬ কিলোমিটার এলাকা ভরে যায়।
পদ্মা সেতু নির্মাণ যেন এক মহাকাব্য। নানা সমালোচনা বাধা পেরিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণ। পদ্মা সেতু সাথে জড়িয়ে আছে জাতির আবেগ। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বপ্ন। এর মধ্যে দিয়ে দীর্ঘ দিনের ভোগান্তি লাঘাব হলো তাদের।
শনিবার পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হলেও রোববার সকাল ৬টা থেকে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে। দক্ষিণের জেলা ফরিদপুরের বাসিন্দা আজিজুল বিশ্বাস। পদ্মা সেতু চালু হওয়া ঈদের আনন্দে হচ্ছে তার। উন্মুখ হয়ে আছেন সেতু পাড়ি দিয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য।
আজিজুল বিশ্বাস বলেন, কি আনন্দ হচ্ছে বলে বোঝানো যাবে না। কালকেই সকালে সেতু পাড়ি দিয়ে বাড়ি যাব।
পদ্মা সেতু শুধু যোগাযোগ খাত নয়, পরিবর্তন আসবে কৃষিতে, গড়ে উঠবে শিল্প কলকারখানা। তাই কৃষকরা দিন গুণছেন তাদের নতুন দিনের। শিবচরে সমাবেশে যোগ দিতে এসে কৃষক বজলুর রহমান জানান, শিবচর থেকে পণ্য নিতে কি যে কষ্ট করতে হয়েছে বলে বোঝানো যাবে না। আজ পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এক ঘণ্টায় ঢাকা ভেতরে সবজি নিয়ে যাব। এতে খরচ বাঁচবে, লাভ বেশি হবে।
মাদারিপুরের বাসিন্দা পপি মন্ডল স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনে উচ্ছ্বসিত আনন্দ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, দুর্ভোগের ভয়ে কখনই আমি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া হয়ে যেতে চাই না। মাওয়া হয়ে ঝুঁকি নিয়ে স্পিডবোট পার হতাম। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ হলে কি যে ভয় লাগ বলে বোঝাতে পারব না। আজকে পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়ে, আমি আসলে বলতে পারব না এ অনুভূতি কেমন।
আজকের দিনটা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য সত্যিই বিশেষ বলে জানালেন বরিশালের বাসিন্দা আব্দুল কাইয়ুম।
তিনি বললেন, নিজে যেমন ভোগান্তির শিকার হয়েছি। তেমন মানুষের ভোগান্তি দেখেছি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হত পদ্মা পাড়ি দিতে। পদ্মা সেতু হওয়ায় এই দুর্বিসহ কষ্টের লাঘাব হলো। আজকে তাই বিশেষ একটা দিন আমাদের জন্য।
প্রসঙ্গত, নানা অভিযোগ ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে ২০১৪ সালে নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতুর কাজ শুরু হয়। গত বুধবার (২২ জুন) সেতুর নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ করে তা সেতু বিভাগকে বুঝিয়ে দিয়েছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যার মাধ্যমে দেশের মানুষের স্বপ্ন বাস্তবে দৃশ্যমান হয়।