জাতীয় সংসদ ভবনে খোকার জানাজা সম্পন্ন
সাদেক হোসেন খোকা আর নেইঅবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্ন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সকাল ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজার আগে সাদেক হোসেন খোকার বড় ছেলে ইশরাক হোসেন বলেন, আমি প্রথমবার সংসদে পা রেখেছি আমার বাবার মরদেহ নিয়ে। যদিও আমার বাবা চার বার সংসদ সদস্য হয়ে এসেছিলেন।
ইশরাক বলেন, আমার বাবাকে আপনারা শ্রদ্ধা জানাতে এখানে এসেছেন তাই সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদের এখানে উপস্থিত প্রমাণ করে আমার বাবার সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিলো। আপনাদের ধন্যবাদ।
খোকার ছেলে আরও বলেন, আমার বাবা আমি যে দিন নিউইয়র্ক গেলাম সেদিন শেষ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন তার জানাজা যেন দেশে হয়। আমি সরকারকে ধন্যবাদ জানাই আমার বাবার মরদেহ দেশে আনতে সহযোগিতা করার জন্য।
তিনি বলেন, বাবা আমাকে বলেছিলেন, আমি বাক্সবন্দী হয়ে দেশে যাবো। ঠিকই তিনি বাক্সবন্দী হয়ে আসলেন সঙ্গে তার দেহটা প্যাকেট হয়ে আসছেন। এ কথা আমি কখনও ভুলতে পারবো না।
বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ বলেন, সাদেক হোসেন খোকা একজন সর্বজন স্বীকৃত রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি আধুনিক ঢাকা গড়তে কাজ করছেন।
সাদেক হোসেন খোকার দুই ছেলে ইশরাক হোসেন ও ইশফাক হোসেন সংসদ ভবনের জানাজায় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ছিলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন, ওয়ার্কার্স পাটির রাশেদ খান মেমন, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, সাবের হোসেন চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম, তোফায়েল আহমেদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অলি আহমদ, আবদুল মঈন খান প্রমুখ।
জানাজা শেষে বিরোধী দলের পক্ষে জাপা মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা শ্রদ্ধা জানান, এরপর অলি আহমেদ, বিএনপির সংসদ সদস্যরা, উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে বিএনপির স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টারা শ্রদ্ধা জানান ৷
এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টা ২৬ মিনিটে অ্যামিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে খোকার মরদেহ রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। সেখান থেকে তার মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে জাতীয় সংসদ ভবনে নিয়ে আসা হয়।
গত ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ৫০মিনিট নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের মেমোরিয়াল স্লোন ক্যাটারিং ক্যানসার সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কিডনির ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন।
চিকিৎসার জন্য ২০১৪ সালের ১৪ মে সাদেক হোসেন খোকা যুক্তরাষ্ট্র যান। যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালে সাদেক হোসেন খোকার বিরুদ্ধে দেশে কয়েকটি দুর্নীতির মামলা হয়। রাজধানীর বনানী সুপার মার্কেটের কার পার্কিংয়ের ইজারা দুর্নীতির মামলায় খোকাসহ ৪ জনের ১০ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড হয়। গত বছরের ২৮ নভেম্বর ঢাকা বিভাগীয় স্পেশাল জজ মিজানুর রহমান খান এ রায় ঘোষণা করেন।
সাদেক হোসেন খোকা ১৯৫২ সালের ১২ মে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। মাওলানা ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে (ন্যাপ) যোগ দিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তিনি। পরবর্তীতে আশির দশকে বামপন্থী রাজনীতি ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং তার দল সরকার গঠন করলে তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালেও তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ২০০১ সালে তার দল সরকার গঠন করলে তিনি মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি সরাসরি নির্বাচনে জয় লাভের মাধ্যমে ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল ঢাকার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।