বার্লিনে সাম্বার শিহরণে ব্রা.. জি.. ল!



এম. এম. কায়সার, স্পোর্টস এডিটর, বার্তা২৪.কম
ব্রাজিল ফ্যানদের ছবি তোলার আনন্দ

ব্রাজিল ফ্যানদের ছবি তোলার আনন্দ

  • Font increase
  • Font Decrease

-বার্লিনের সেই দেয়ালটা কোন দিকে?

প্রশ্নটা মোটেও পছন্দ হলো না আমাদের ট্যাক্সি ড্রাইভারের। শুনল ঠিকই। কিন্তু কোনো জবাব না দিয়ে শুধু একটা কাঁধ ঝাঁকানি দিল। ভাবলাম, আমার প্রশ্নটা বুঝতে পারেনি। এবার তাকে আরো পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে বললাম।

-আমি বার্লিন দেয়ালের কথা বলছি। যেটা ভেঙ্গে দুই জার্মানি এক হয়েছিল।

আমার প্রশ্ন ও আগ্রহ কোনো কিছু পাত্তাই দিল না মার্সিডিজ ট্যাক্সির ড্রাইভার ফ্রিঞ্জ। তবে এক চিলতে হাসির সঙ্গে এবার শব্দও শোনা গেল তার গলায়।

-বার্লিনে যারা প্রথম আসে তারা সবাই দেয়ালের খোঁজ নেয়। দেয়ালটা ওদিকে কোথায়ও হবে।

হাত নেড়ে সামনের পশ্চিমের একটা দিক দেখাল ফ্রিঞ্জ। তার কাছ থেকে বার্লিন দেয়ালের বিষয়ে এমন অবহেলায় ভরা উত্তর পেয়ে আর কিছুই জানতে ইচ্ছে হলো না।

তবে বার্লিন দেয়াল নিয়ে কথা বলতে অনাগ্রহী ফ্রিঞ্জ শহরের শপিং সেন্টার ও নিজের ড্রাইভিং জীবন নিয়ে বকবকানি বেশ ভালোই চালাতে শুরু করল।

-জার্মানিতে ট্যাক্সি চালানো বেশ ভালো পেশা। এটা অবশ্য আমার ভাড়ার ট্যাক্সি। বাসায় আমার নিজের একটা নীল রঙের বিএমডব্লু আছে। আমি ওটা নিয়ে ইউরোপের প্রায় ১০টার মতো দেশে ঘুরেছি। তোমাদের বাংলাদেশ কি প্লেইন ল্যান্ড নাকি পাহাড়ী? শুনেছি খুব নাকি বন্যা হয়? আচ্ছা আমি কি ট্যাক্সি চালিয়ে ওখানে যেতে পারব?

বুঝলাম এই লোক এখন কথা বলেই যাবে। তার কথার চোটে আমাদের বার্লিন দেখার মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে। তাই তাকে থামালাম।

-ভালো হয়, তুমি যদি বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ কর। আমার গলার সুরেই ফ্রিঞ্জ বুঝে নিল তার পর্যটক হওয়ার গল্প আমাদের টানছে না।

ব্রাজিল ভক্তদের সাম্বা উৎসবে এম. এম. কায়সার

ট্যাক্সি চালকের ব্যক্তিগত আলাপের চেয়ে আমাদের কাছে যে বার্লিনের ইতিহাস তখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বেশি আর্কষণীয়। এই শহরের সঙ্গে বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসও বেশ সমৃদ্ধ।

১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপের আসর বসেছিল বার্লিনে। ৩২ বছর পর আবারো ২০০৬ সালে বার্লিন আরেকবার বিশ্বকাপের শহর। বিশ্বকাপ ফাইনালের ভেন্যু। অনেক কারণে বার্লিন জার্মানির অন্য শহরের চেয়ে আলাদা। হিটলারের পতন হয়েছিল এই শহরেই। এই শহরটাই দুই জার্মানিকে ভাগ করে রেখেছিল। আবার এই শহরটাই দুই জার্মানিকে এক করে। নিও নাৎসিদের নিয়ে ২০০৬ বিশ্বকাপে জার্মান পুলিশকে সবচেয়ে বেশি আশঙ্কা ও আতঙ্কে রেখেছিল এই বার্লিন শহরই। বাকি সব ভেন্যু থেকে বার্লিনের নিরাপত্তার স্তর তাই একটু বাড়তি। মিউনিখে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচের পর থেকেই জার্মানির সমর্থকদের একটা শ্লোগান ভীষণ জনপ্রিয়তা পায়।

-‘বেলিন বেলিন, ভিয়ের ফারে নাখ বেলিন’।

-‘চল চল সবাই বার্লিন চল।’

৯ জুলাই বার্লিনের ফাইনালে জার্মানি খেলবে- এই স্বপ্ন আঁকছিল জার্মানির সমর্থকরা মনেপ্রাণে। সাবওয়ে, ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট, ট্রেনে জার্মান সর্মথকরা দল বেঁধে সুর করে এই ‘বার্লিন চল’ গান গাইতো।

এই বার্লিনেই কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে সেমিফাইনালের টিকিট পায় জার্মানি। তবে বার্লিনের ফাইনাল খেলতে না পারলেও বিশ্বকাপের তৃতীয় সেরা দল হবার পর এই বার্লিনেই উৎসবে মেতেছিল লাখো জার্মান সর্মথক।

জার্মানির সঙ্গে মূলত আমার পরিচয় স্কুলে পড়ার সময়। স্ট্যাম্প জমানোর খাতায় একটা পৃষ্ঠায় দেশের নামের ঘরে লেখা ছিল- জিডিআর, যার পূর্ণ বিশ্লেষণ জার্মান ডেমোক্রেটিক রিপাবলিকান। তখনই জানতাম দেশের নাম একই; কিন্তু সেই নামের আগে শুধু পূর্ব ও পশ্চিম জুড়ে দিয়েই দুই ভাগে দুটো আলাদা দেশ! আমাদের এশিয়ার দেশ কোরিয়ার মতো আর কি। এখানে উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া। ইউরোপেরটা পূর্ব জার্মানি ও পশ্চিম জার্মানি। বার্লিনের দেয়াল ছিল এই দুই জার্মানির সীমানা প্রাচীর।

দুই কোরিয়া এক হয়ে অলিম্পিকে অংশ নিয়েছে। আর বিশ্বকাপে দুই জার্মানিরও অনন্য একটা রেকর্ড আছে। দুই জার্মানি বিশ্বকাপে একবার একে অন্যের প্রতিপক্ষ হয়ে লড়েছে। মুখোমুখি সেই লড়াইয়ের ঠিক ১৬ বছর পরে দুই জার্মানি আবার এক হয়ে বিশ্বকাপের মাঠে খেলেছে এবং বিশ্বকাপও জিতেছে!

বৈরিতা কাটিয়ে বন্ধুত্বের অনন্য নিদর্শনের সাক্ষীও যে বিশ্বকাপ ফুটবলের এই ইতিহাস।

২০০৬ বিশ্বকাপ ব্রাজিলের হয়নি। রেপ্লিকা নিয়েই ফিরতে হয়েছে ব্রাজিলকে

১৯৮৯ সালের আগে জার্মানি ছিল দুটো দেশ। পূর্ব জার্মানি ও পশ্চিম জার্মানি। ১৯৯০ বিশ্বকাপ থেকে দুই জার্মানি এক হয়ে খেলছে; কিন্তু বিশ্বকাপের ম্যাচেই এক জার্মানিই হয়েছিল অন্য জার্মানির প্রতিপক্ষ!

একটু ঘুরে আসি ইতিহাসের সেই সময়ে।

১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপে পূর্ব জার্মানি ও পশ্চিম জার্মানি দুই দেশই অংশ নেয়। উভয় দেশ একই গ্রুপে পড়ে। প্রথম রাউন্ডেই তাই মাঠের লড়াইয়ে মুখোমুখি হতে হয়। হামবুর্গের মাঠে গ্রুপ পর্যায়ের সেই ম্যাচে ঘটে বড় আপসেট। ’৭৪ এর ২২ জুন ঐতিহাসিক সেই ম্যাচে পশ্চিম জার্মানি ছিল যথারীতি হট ফেভারিট। আয়তন, অবস্থান, রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি- সব বিবেচনায় প্রতিবেশী পূর্ব জার্মানির চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল পশ্চিম জার্মানি। ফুটবলীয় শক্তির বিচারেও ফেভারিট ছিল ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের দল পশ্চিম জার্মানি। কিন্তু ফুটবলে ফেভারিটরা যে প্রতিদিন জেতে না! সেই ম্যাচে পূর্ব জার্মানি জিতে ১-০ গোলে। ১৩ মিনিটের সময়ে ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন পূর্ব জার্মানির জুর্গেন স্পারওয়াসার। তবে প্রথম রাউন্ডের সেই হার পশ্চিম জার্মানির গর্বে আঘাত করলেও ক্ষতিটা তারা পুষিয়ে নিয়েছিল বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে। আর ২২ জুনের ঐতিহাসিক সেই ম্যাচের গোলদাতা বার্লিন প্রাচীর ভাঙার বছরখানেক আগে পূর্ব জার্মানি ছেড়ে চলে এসেছিলেন পশ্চিম জার্মানিতে। কমিউনিজমে বিশ্বাসী পূর্ব জার্মানির সঙ্গে প্রতিবেশী পশ্চিম জার্মানির তেমন মারামারি কাটাকাটির কোনো বৈরিতা না থাকলেও সেসময় বিশ্বজুড়ে শীতল যুদ্ধের ময়দানে বিবৃতির লড়াই দু’দেশের মধ্যে ঠিকই চলতো।

তারপর ১৯৮৯ সালে আসে মহামিলন ও ভ্রাতৃত্ববোধের সেই মধুর ক্ষণ। পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি এক হয়ে যায়। ভেঙে দেওয়া হয় বার্লিন প্রাচীর, যা এতদিন আলাদা করে রেখেছিল দু’দেশকে। দুই জার্মানি এক হয়ে বিশ্ব রাজনীতি এবং ক্রীড়াঙ্গনে এখন অনেক শক্তিশালী এক নাম।

২০০৬ বিশ্বকাপে জার্মানির তিনটি ভেন্যু কয়েক দশক আগেও ছিল অন্য দেশের শহর! কাইজারস্লাউটার্ন, গেলসেনকিরসেন ও লাইপজিগ- ২০০৬ বিশ্বকাপের ১২টি ভেন্যুর মধ্যে এই তিনটি ১৯৮৯ সালের আগ পর্যন্ত ছিল পূর্ব জার্মানির। এখনো মানচিত্রে তাদের অবস্থান তাই, শহরগুলোর নামও সেই আগেরটাই। চেহারাও এক। শুধু বদলে গেছে দেশের নাম।

ক্রোয়েশিয়ার সমর্থকদের একাংশের সঙ্গে বাংলাদেশের সাংবাদিকরা

-কে বলে ইতিহাস বিরক্তিকর?

বার্লিনের ইতিহাস বইয়ের পাতা থেকে মনোযোগ ছুটে গেল হঠাৎ কানে আসা ড্রামবিটের শব্দে। বুঝলাম অলিম্পিক স্টেডিয়ামের কাছাকাছি চলে এসেছি আমরা। আশপাশের ফ্ল্যাটের বারান্দার রেলিংয়ে জার্মানির তিন রঙ্গা পতাকা উড়ছে।

রাস্তার চারধারে হলুদ-সবুজ জার্সির ভিড় বাড়ছে। মিছিল নিয়ে চলেছে ব্রাজিলের সমর্থকরা। স্টেডিয়ামের মিডিয়া সেন্টারের এক কিলোমিটার আগে ট্যাক্সি ড্রাইভার আমাদের নামিয়ে দিল।

-আর সামনে যাওয়ার উপায় নেই। এখান থেকে তোমাদের হেঁটে যেতে হবে।

মূলত সেই পায়ে হাঁটা পথ ধরেই আমরাও বার্লিনের সেই সন্ধ্যায় সাম্বা উৎসবের অংশ হয়ে গেলাম!

ম্যাচের আগেই এমন উৎসবের প্রস্তুতি। ম্যাচ জিতলে না জানি এরা কি করবে! পুরো এলাকায় চলছে নাচ-গান আর ওলে ওলে সুরে ব্রাজিল সমর্থকদের সাম্বা উৎসবের প্রাক প্রস্তুতি। ড্রামের বিটে কানে তালা লেগে যাওয়ার যোগাড়।

স্টেডিয়ামে এলাম নাকি ডান্স ফ্লোরে?

হঠাৎ একটা বৃত্তের মধ্যে দেখা গেল, স্বল্পবসনা এক ব্রাজিলিয়ান ষোড়শীর ক্ষীণ কোমর জড়িয়ে ছবি তোলার জন্য সিরিয়াল চলছে! সেকি হৈচৈ! বাঁশি মুখে নিয়ে বিরামহীনভাবে ফুঁ দিয়ে বাজিয়েই চলেছে এক ব্রাজিল সমর্থক। পুরো চেহারা পরিশ্রমে লাল। গলার রগ ফুলে গেছে কিন্তু কোনো বিকার নেই- সাম্বার নাচের সঙ্গে বাঁশির সুর তুলতেই ব্যস্ত সে। চামড়া কেটে যাবে- এমন টাইটফিট জিন্স পরা এক তরুণী ফুটবল নিয়ে জাগলিং শুরু করল। বল পায়ে তার দুর্দান্ত ভারসাম্য! শরীরের ওপরের অংশে পেঁচানো শুধু ব্রাজিলের পতাকা। ভাঁজ করা পতাকার আয়তন এতই চিকন যে শরীরের মানচিত্রের সব রেখা-শাখা-প্রশাখা থেকে তীব্র আলো ছড়াচ্ছে!

এমন আলোয় চোখ যাবেই; সরিয়ে নেওয়ার উপায় নেই। একহাতে ল্যাপটপ অন্যহাতে ব্যাগ। অনেক দূরের যাত্রা পেরিয়ে রাত জেগে, রিপোর্ট লিখে সন্ধ্যায় মাঠে এসে অন্য কিছু দেখার শক্তি মনে এবং চোখে খুব সামান্যই অবশিষ্ট। তবুও সাম্বার মিউজিক- মূর্ছনায় এমনই জাদু যে, সেই বিট শুনলেই মুহূর্তেই ক্লান্তি উধাও! চারধার থেকে যেভাবে উদাত্ত আমন্ত্রণ তাতে এখানে এসে পড়ার পর এই উৎসবের একজন না হয়ে কোনো উপায় নেই! ছন্দের সঙ্গে পা হয়তো তেমন মিলল না। তাতে কি? এখানে অংশগ্রহণই আসল কথা। কোমর জড়িয়ে ধরে সেই ব্রাজিলিয়ান ক্ষীণ কটির সঙ্গে সবাই ছবি তোলার জন্য লম্বা লাইনে পড়ে গেছে দেখলাম! কাউকে নিরাশ হতে হচ্ছে না। উদার, উদ্দাম ও দিলখোলাদের জায়গা এটা।

ম্যাচের আগে ক্রোয়েশিয়ার ফ্যানরাও আনন্দ উৎসবে অংশ নেন

ব্রাজিলিয়ানদের এই ভিড়ে ক্রোয়েশিয়ান সমর্থকদের মিছিলের সংখ্যাও কম নয়। লাল-সাদা দাবার ছকের মতো জার্সির সেই রং মুখেও ঘষে এসেছে অনেকে। কারো কপালে লাল পট্টি। মাথায় বাহারি টুপি। ঢোলাঢালা পাজামা পরা ক্রোয়েশিয়ান এক সমর্থক দৌড়ে এসে ব্রাজিলিয়ান বিউটির কানে কানে কি যেন বলল। সম্মতি মিলল।

পরের দৃশ্যটা এমন। একটানে পাঁজাকোলা করে ক্ষীণ কটিকে নিয়ে ছবি তোলার জন্য পোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে সেই ক্রোয়েশিয়ান। ক্যামেরা ক্লিক হতেই ‘ম্যাচ জয়ের’ আনন্দের অট্টহাসি তার গলায়!

কে বলবে আর ঘণ্টা কয়েক পরেই এরা মাঠে একজন আরেকজনের ‘মন্দ ভাগ্য’ কামনা করবে? ফুটবলের আনন্দ আসলে এমনই। যতক্ষণ মাঠের বাইরে ততক্ষণ পক্ষ-প্রতিপক্ষ সবাই বন্ধু। ম্যাচের আগে ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়ার সমর্থকদের এই বন্ধুত্ব দারুণভাবে মানিয়ে গেল জার্মান বিশ্বকাপের স্লোগানের সঙ্গে- ‘ইটস টাইম টু মেকস্ ফ্রেন্ডস; সময় এখন বন্ধুত্বের!

ম্যাচ শেষে গভীর রাতে বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামের চত্বর জুড়ে যা হলো সেটা দেখে মনে হলো ম্যাচ শুরুর আগে সাম্বা উৎসবটা ছিল নেহাৎ রিহার্সেল; আসল উৎসব তো এখন! মিডিয়া সেন্টারের তাঁবুর পাশের জায়গাকে ঝটপট অস্থায়ী স্টেজ বানিয়ে শুরু হলো ব্রাজিলিয়ান সুন্দরীদের বিরতিহীন কোমর ঝাঁকানি। মনে হলো, কোমরে স্প্রিং লাগিয়ে কেউ নাচছে? যে জোরে ঝাঁকাঝাঁকি চলছে, কোমর না ছিঁড়ে যায়! ভাইব্রেসানের এরচেয়ে বড় উদাহরণ যে আর হয় না। শরীরজুড়ে কোনোমতে সেঁটে থাকা এক চিলতে কাপড় তখন- হাওয়া মে উড়তা যায়-আর কি! চারধারে গোল হয়ে ফটোগ্রাফারদের ভিড়। বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল চাই তাদের। তুমুল হুড়োহুড়ির মধ্যে এনটিভির দোদুল তার হাতের ব্যাগটা আমার কাঁধে দিয়ে ভিডিও ক্যামেরা চালু করতে গিয়েই দেখে বিপদ- ব্যাটারি শেষ!

দুর ছাই, ব্যাটারি শেষ হওয়ার এটা কোনো সময় হলো!

সাম্বা উৎসবের সেই দৃশ্য ভিডিও করতে না পারার দুঃখে তার প্রায় চুলছেঁড়া অবস্থা। ডজনখানেক ব্রাজিলিয়ান ড্যান্সারের পেছনে ড্রাম-বাদকরাও তখন প্রায় বল্গাহারা উত্তেজনার শিখরে। রাত বাড়ছে। মিউজিকও তুঙ্গে। আশপাশের সবকিছুতেই তখন ভেসে যাওয়ার উদ্দামতায় মেতে উঠার ঝলক। নাচছে সবাই। যে নাচ জানে না সেও টলছে সুরের টানে। মূর্ছনার মোহনীয়তায় হারিয়ে যাওয়ার আহ্বান। নেশালু আমন্ত্রণের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত!

সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো, শীর্ষেন্দুর এক উপন্যাসে পড়েছিলাম- সব আমন্ত্রণ, নিমন্ত্রণে নাকি যেতে নেই!

আরও পড়ুন-

বার্লিনের হোটেলে রহস্যময় ল্যাপটপ!

বিশ্বকাপে ইন্টারভিউ নেওয়ার আগে, দিতে হলো!

রাতের ট্রেনে বিশ্বকাপ পার্টি

তিমি’র সঙ্গে ছবি তোলা!

শচীন’স সসেজ, গাঙ্গুলি’স গ্রিল, মিয়াঁদাদ ম্যাজিক ম্যাঙ্গো জুস...

হাতিদের এতিমখানায়!

মার্টিন বিক্রেমাসিংহের বাড়িতে নিমন্ত্রণ

গল দুর্গের অ্যাডভেঞ্চারে...

ক্যান্ডির মন খারাপ করা সৌন্দর্য!

   

‘লঙ্কানদের বিপক্ষে টেস্ট জেতা উচিৎ বাংলাদেশের’



স্পোর্টস ডেস্ক, বার্তা ২৪
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সিলেট টেস্টে ৩২৮ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। এতে ১-০ তে পিছিয়ে স্বাগতিকরা। বড় হারের সে স্মৃতিকে পেছনে রেখে বাংলাদেশের সামনে এখন আরেকটি টেস্টের চ্যালেঞ্জ। চট্টগ্রামে লঙ্কানদের ধরাশায়ী সিরিজে সমতা ফেরাতে মরিয়া বাংলাদেশ, তাতে সিরিজ হার এড়ানোর পাশাপাশি প্রথম টেস্টে বড় হারের কষ্টও কিছুটা লাঘব হতে পারে।

গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচের আগে হেড কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে ‘ব্যক্তিগত কারণে’ অস্ট্রেলিয়া গেছেন। কোচ না থাকায় কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলাদেশ। তবে দল এবং একইসঙ্গে সমর্থকদের জন্য সুখবর, টেস্ট সিরিজে খেলার কথা না থাকলেও দ্বিতীয় টেস্ট দিয়ে দলে ফিরেছেন সাকিব আল হাসান। 

দলে ফিরেই সাকিব জানালেন, লঙ্কানদের বিপক্ষে টেস্ট জেতা উচিত বাংলাদেশের। টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডেতে ভালো ক্রিকেট খেলার পর এমনটাই চাইছেন সাকিব, ‘আশা তো সব সময় করি আমরা জিতব। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে সব সময়ই আমরা স্ট্রাগল করেছি, আমাদের জন্য ডিফিকাল্ট। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, আমাদের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অনেক ভালো করা উচিত এবং টেস্ট ম্যাচ জেতা উচিত।’

অনভিজ্ঞ একটা দল নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটের অথৈ সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকা বাংলাদেশ দলের জন্য সাকিবের প্রত্যাবর্তন অনেক আনন্দের সংবাদ। প্রথম টেস্ট শেষে অধিনায়ক শান্ত সংবাদ সম্মেলনে সেটাই বলেছিলেন, ‘সাকিব ভাইয়ের অভিজ্ঞতা আমাদের কাজে লাগবে।’

;

রূপায়ণ সিটির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর সাকিব আল হাসান



স্পোর্টস ডেস্ক, বার্তা ২৪
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দেশের আবাসন খাতের প্রথম সিটি ব্র্যান্ড রূপায়ণ সিটি ও ক্রিকেটের ব্র্যান্ড সাকিব আল হাসান এবার হয়েছেন জুটিবদ্ধ। রূপায়ণ সিটির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়েছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক এই অধিনায়ক। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) সকালে রূপায়ণ সিটি উত্তরার স্কাই ভিলা লাউঞ্জে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রূপায়ণ সিটির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন সাকিব। রূপায়ণ সিটির পক্ষে সিইও এম মাহবুবুর রহমান চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রূপায়ণ গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান মাহির আলী খাঁন রাতুল ও উপদেষ্টা ক্যাপ্টেন পি জে উল্লাহ (অব.), চিফ অপরেটিং অফিসার ব্রিগেডিয়ার সালাহউদ্দীন (অব.), সিবিও (আরসিইউ) রেজাউল হক লিমন, সিবিও (ম্যাক্সাস) গৌতম তরফদারসহ প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

চুক্তি স্বাক্ষর শেষে রূপায়ণ সিটি ঘুরে দেখেন সাকিব আল হাসান। এ সময় তিনি বলেন, একদমই ব্যতিক্রম এখানকার পরিবেশ। কারণ খেলাধুলার জায়গা আছে, বাচ্চাদের জন্য নিরাপদ। বয়স্কদের জন্য আছে হাঁটা-চলার পৃথক রাস্তা। যা ঢাকার অন্যান্য জায়গায় বড়ই অভাব। এখানকার পরিবেশ যে কাউকে মুগ্ধ করে তুলবে। আমি জানি না ক্রিকেটারদের কেউ রূপায়ণ সিটিতে থাকেন কিনা। যদি না থাকেন তাহলে তারা এদিকে আসতে পারে।

রূপায়ণ সিটির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রচারণামূলক কাজে অংশ নেবেন বলেও জানান সাকিব আল হাসান।

বাংলাদেশের গেটেড কমিউনিটির ধারণাতে ‘ব্রেক দ্য স্কয়ার ফিট স্টোরি’- এই দর্শনের মাধ্যমে নতুন মাত্রা দিয়েছে রূপায়ণ সিটি। যার মাধ্যমে এসেছে প্রিমিয়াম মেগা গেটেড কমিউনিটি- রূপায়ণ সিটি উত্তরা। যেখানে আছে রূপায়ণ স্কাই ভিলা, ম্যাক্সাস- দি মল অব বাংলাদেশ এবং নেক্সট জেনারেশন স্মার্ট সিটি ‘নর্থ সাউথ সিটি’।

;

স্বপ্ন সত্যি হলো, অবশ্যই এটা সৈকতের প্রাপ্য



মাসুদুর রহমান মুকুল
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সৈকতকে তো আসলে শুধু আম্পায়ার হিসেবে চিনি না, তারও বহু আগে থেকে প্লেয়ার হিসেবে তাকে দেখে আসছি '৯০-থেকে। তখন থেকেই দেখেছি ওর ভেতর উদ্যম আছে। ও মানসিকভাবে অনেক শক্ত ও ডেডিকেশন অনেক হাই। ও যখন আম্পায়ারিংয়ে এসেছে তখন কিন্তু অনেক পরিশ্রম করে গেছে। সবকিছু মিলিয়ে ও যেই সংগ্রাম করে গেছে মাঠ ও মাঠের বাইরে তা অকল্পনীয়। সে যেটা অর্জন করেছে সেটা তার প্রাপ্য ছিল।

কোভিডের পর থেকে আমরা খুবই আশাবাদী ছিলাম, সৈকত আইসিসির এলিট প্যানেলে যাবে। কেননা, কোভিডের পর যেই সুযোগগুলো এসেছে সেসব সৈকত খুব ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছে।

আর একটা বিষয়, এসব নিয়ে ভারতে যদি সিনেমা হতে পারে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের সৈকতকে নিয়েও এমন সিনেমা হতে পারে।

সৈকতের সবচেয়ে বড় গুণ যেটা সে তার ভুলকে সুন্দরভাবে স্বীকার করে। ও যদি কোনো ভুল করে থাকে, সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে বা সতীর্থদের সাথে কোনো বাজে ব্যবহারে করে থাকে; তাহলে সে কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই সেটা মেনে নেই। এটা হলো সৈকতের সবচেয়ে বড় গুণ। এছাড়াও সৈকত অনেক সাহসী একটা ছেলে। সে যদি মনে করে এই পথে এগোলে সঠিক; যদিও এই পথে এগোলে অনেক বাধা আসবে তবুও সে ওই সঠিক পথেই এগোয়। ইতিবাচকভাবে ওর জেদটা খুব ভালো।

টি-টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপ তারপর বাকি অ্যাসাইনমেন্ট সামনে আসবে। পরে হয়তো টেস্ট ম্যাচগুলো আসবে। আর যখন নতুন কেউ এলিট প্যানেলে ঢুকে, এটা হলো একটা ঐতিহ্য- জানি না হবে কিনা। অ্যাশেজ মানে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড দিয়ে এটা শুরু হয়।

সৈকত আমাদের জন্য বড় একটা পথ দেখিয়ে গেল যে, কষ্ট করলে ওখানে যাওয়া যায়। সৈকতের এই অর্জনটাকে আমরা যারা আম্পায়ারিং করছি বা যারা করবে আমাদের বোর্ডও এই অর্জনটাকে কাজে লাগাতে হবে। কাজে লাগানো বলতে আমি বুঝাচ্ছি, বিসিবি কিন্তু যারা অনেক ক্রিকেট খেলছে তাদের আম্পায়ারিংয়ে আসার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারে। আর আমরাও যারা আম্পায়ারিং করছি তারা কিন্তু এলিট প্যানেলে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারি। আইসিসির এলিট প্যানেলে যাওয়ার মাঝখানের যেই পথচলাটা সেই পথচলাটা বা ত্যাগের জায়গাটা বোর্ড বা আমাদের ডিপার্টমেন্ট আরেকটু সহজ করে দেবে।

দেশে আম্পায়ারিংয়ের ক্ষেত্রে আমাদের অর্থনৈতিক দিক যত উন্নত হবে, তত আমাদের যোগ্য ছেলেরা আম্পায়ারিংয়ে আগ্রহী হবে।

সৈকত-মুকুল-গাজী বা তানভীর এখন যারা আছে বা অন্য যারা আছে এই পর্যন্ত আসতে হলে কিন্তু অনেক ত্যাগ করতে হবে নতুনদের। আর এই রাস্তাটুকু আসার জন্য উদ্যোগটা বোর্ড এবং আম্পায়ারিং নিয়ে কাজ করে সেই ডিপার্টমেন্ট থেকে নিতে হবে।

(সৈকতের) স্বপ্ন সত্যি হলো। এবং অবশ্যই সে এটার প্রাপ্য। সৈকতের ১৩ বছরের যুদ্ধ এটা। আইসিসি প্যানেলে সে দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে আম্পায়ারিং করছে। আমার ৬ বছর রানিং। আমিও স্বপ্ন দেখছি।

লেখক: আন্তর্জাতিক আম্পায়ার

;

আইসিসির এলিট প্যানেলে প্রথম বাংলাদেশি আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা



স্পোর্টস ডেস্ক, বার্তা ২৪
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বহুকাল বাংলাদেশের আম্পায়াররা ছিলেন পাদপ্রদীপের আড়ালে। তবে সেই দিন গত হয়েছে। দিনকয়েক আগে বাংলাদেশের চারজন নারী আম্পায়ার এবং একজন নারী রেফারি আইসিসির ডেভেলপমেন্ট প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন। এবার আইসিসির এলিট প্যানেলের অংশ হলেন আম্পায়ার শরফুদ্দৌলা।

আইসিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রথম আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে যুক্ত হয়েছেন শরফুদ্দৌলা।

২০০৬ সাল থেকে আইসিসির ইন্টারন্যাশনাল প্যানেলে আম্পায়ার হিসেবে কাজ করছেন শরফুদ্দৌলা। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে আম্পায়ারিং করেন তিনি।

এখন পর্যন্ত ১০ টেস্ট, ৬৩ ওয়ানডে এবং ৪৪ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেন শরফুদ্দৌলা। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও বেশ কয়েকটি ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন এই আম্পায়ার।

এলিট প্যানেলের সদস্য হওয়ার খবর পেয়ে আইসিসিকে শরফুদ্দৌলা বলেন, ‘আইসিসির এলিট প্যানেলের সদস্য হওয়া অত্যন্ত সম্মানের বিষয়। বাংলাদেশ থেকে প্রথম আম্পায়ার হিসেবে এলিট প্যানেলের সদস্য হওয়ায় উপলক্ষটা আরও বিশেষ হয়েছে। আমি এই আস্থার প্রতিদান দিতে চাই।’

এদিকে আইসিসির এলিট রেফারি প্যানেলের কলেবর ছোট করে ৬ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে। বাদ পড়েছেন ২০০৩ সাল থেকে এই প্যানেলের সদস্য হিসেবে থাকা ক্রিস ব্রড।

;