ইউক্রেন যুদ্ধের নির্দোষ শিকার আফ্রিকা
রুশ-ইউক্রেন সংঘাতআফ্রিকান ইউনিয়নের (এইউ) চেয়ারম্যান ও সেনেগালের প্রেসিডেন্ট ম্যাকি সাল বলেছেন, আফ্রিকান দেশগুলি ইউক্রেন যুদ্ধের নির্দোষ শিকার। রাশিয়ার উচিত তাদের কষ্ট লাঘব করতে সহায়তা করা।
শুক্রবার (০৩ জুন) রাশিয়ার সোচিতে এক বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে একথা বলেন আফ্রিকান ইউনিয়নের (এইউ) চেয়ারম্যান ম্যাকি সাল।
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ম্যাকি সাল জানান. রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আফ্রিকায় সার রফতানি সহজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তবে বিস্তারিত কিছু বলেননি।
ইউক্রেনের শস্য রফতানি আটকে রাখার বিষয়ে পুতিন বলেছেন, তারা ইউক্রেনের শস্য রফতানিতে বাধা দিচ্ছেন না।
আফ্রিকায় ৪০ শতাংশের বেশি গম সাধারণত রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে যায়। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আফ্রিকায় গম রফাতানি বন্ধ রয়েছে। যার ফলে দুর্ভিক্ষ পীড়িত এই অঞ্চলে ক্ষতির কারণ হবে বলেও পুতিনকে জানান ম্যাকি সাল।
আফ্রিকান ইউনিয়নের (এইউ) চেয়ারম্যান ও সেনেগালের প্রেসিডেন্ট ম্যাকি সাল পুতিনকে বলেন, আফ্রিকার দেশগুলো দূরে থাকা সত্বেও যুদ্ধের শিকার।
এসময় পুতিন বলেন, রাশিয়া তার নিয়ন্ত্রণে থাকা আজভ এবং কৃষ্ণ সাগরের বন্দরের মাধ্যমে ইউক্রেনের শস্য নিরাপদ রফতানির গ্যারান্টি দিতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, সবচেয়ে ভালো সমাধান হবে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র বেলারুশের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া, যাতে শস্য পাঠানো যেতে পারে। পুতিন বলেন, তিনি সর্বদা আফ্রিকার পক্ষে।
সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে কৃষ্ণ সাগরে ইউক্রেনের বন্দরগুলি রফতানির জন্য বহুলাংশে অবরুদ্ধ। কিয়েভ এবং তার মিত্ররা বন্দর অবরোধ করার জন্য মস্কোকে দায়ী করেছে।
জাতিসংঘের সংকট সমন্বয়কারী আমিন আওয়াদ জেনেভায় বলেছেন, ইউক্রেনের বন্দরগুলো খুলতে ব্যর্থ হলে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। তিনি বলেন, শস্যের ঘাটতি ১.৪ বিলিয়ন মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে এবং ব্যাপক অভিবাসন শুরু করতে পারে।
যুদ্ধের কারণে ফসল উৎপাদন ব্যাহত এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে আফ্রিকায় ইতিমধ্যে বিদ্যমান অভাবকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর থেকে আফ্রিকা মহাদেশ জুড়ে খাদ্যের দাম বেড়েছে, বিপুল সংখ্যক মানুষকে ক্ষুধার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
ইতিমধ্যে আফ্রিকার দেশ চাঁদে জাতীয় খাদ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশের খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, ক্রেমলিন আশা করছে খাদ্য সংকট মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার খাদ্য-অনিরাপদ দেশগুলি থেকে ইউরোপের দিকে বড় নতুন শরণার্থী প্রবাহকে উস্কে দিয়ে পশ্চিমের উপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে।
রুশ সেনারা গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেন আক্রমণ শুরু করে। এর মধ্য দিয়ে কয়েক দশকের মধ্যে ইউরোপে সবচেয়ে খারাপ সংঘাতের সূচনা হয়। এখন ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখলের চেষ্টা বাদ দিয়ে পূর্বাঞ্চলের দনবাস দখলে নিতে লড়াই করছেন রুশ সেনারা। যুদ্ধের ১০০ দিনে ইউক্রেনে শত শত বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সাজানো শহরগুলো।