ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সমর্থনে সৈন্য পাঠাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। এর বিনিময়ে মস্কো পিয়ংইয়ংকে এন্টি-এয়ার মিসাইল (ক্ষেপণাস্ত্র) ও বিমান প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করছে বলে দাবি করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।
রাশিয়ায় আনুমানিক ১০ হাজার সৈন্য পাঠাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। এতে দেশটির কী লাভ হবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিন ওন-সিক বলেন, এর বিনিময়ে মস্কো পিয়ংইয়ংকে অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রযুক্তি সহায়তা দিয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সম্প্রচারকারী এসবিএস'এ শুক্রবার প্রচারিত হওয়া এক সাক্ষাত্কারে শিন বলেছেন, "রাশিয়ার এমন সাহায্যে এটা বোঝা যায় যে উত্তর কোরিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল। এটিকে শক্তিশালী করার জন্য সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম ও বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করছে রাশিয়া।"
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, শুক্রবার রাজধানী পিয়ংইয়ং-এ একটি সামরিক প্রদর্শনীতে কিম জং উন অস্ত্রশস্ত্রের আধুনিক সংস্করণের বিকাশ ও উন্নত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামীতে পিয়ংইয়ং'র সৈন্যদের সঙ্গে ইউক্রেনের সেনারা যুদ্ধে জড়াবে। এর প্রেক্ষিতে রাশিয়া চলতি মাসে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে একটি যুগান্তকারী প্রতিরক্ষা চুক্তির অনুমোদন করেছে। গত জুন মাসে ভ্লাদিমির পুতিনের রাষ্ট্রীয় সফরের সময় পিয়ংইয়ংয়ে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিটি হচ্ছে- রাশিয়া কিংবা উত্তর কোরিয়া কোন দেশের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ালে "যত দ্রুত সম্ভব" একে অপরকে সামরিক সহায়তা প্রদান করবে এবং পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করতে আন্তর্জাতিকভাবে একে অপরকে সহযোগিতা করতে বাধ্য থাকবে।
দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, এই সপ্তাহে রাশিয়ায় মোতায়েন করা সৈন্যদের স্থলে একটি বায়ুবাহিত ব্রিগেড এবং মেরিন কর্পসে নিয়োগ করা হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা ইয়োনহাপ জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার কিছু সৈন্য ইতিমধ্যেই যুদ্ধে প্রবেশ করেছে।
গোয়েন্দা সংস্থাটি আরও জানায়, উত্তর কোরিয়া তাদের ক্ষয়প্রাপ্ত অস্ত্রের মজুদ পূরণ করতে ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়ায় ১৩ হাজারেরও বেশি কামান, ক্ষেপণাস্ত্র এবং অন্যান্য প্রচলিত অস্ত্র পাঠিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পিয়ংইয়ং পররাষ্ট্র নীতি পুনরায় ঠিক করতে ইউক্রেনকে ব্যবহার করতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, উত্তর কোরিয়া অস্ত্র, সামরিক সহায়তা এবং শ্রম সরবরাহকারী হিসেবে তাদের মিত্র দেশ চীনকে অতিক্রম করে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছে।
তারা বলেছেন, এর বিনিময়ে রাশিয়া উত্তর কোরিয়াকে তেল ও গ্যাস সরবরাহ করতে পারে।
উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী চো সন হুই সম্প্রতি মস্কো সফরে বলেছেন, রাশিয়ার বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার সৈন্যরা রাশিয়ান সেনাদের পাশে থাকবে।"
উত্তর কোরিয়া গত মাসে বলেছিল, আন্তর্জাতিক আইনের বিধিবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রেখেই রাশিয়ায় সেনা মোতায়েন করা হবে। কিন্তু সৈন্যদের সংখ্যা নিশ্চিত করা থেকে দেশটি বিরত থেকেছে।
এমন ঘটনায় সিউলও তাদের সুর পরিবর্তন করেছে। যদিও এতোদিন দেশটি কিয়েভে অস্ত্র পাঠানোর আহ্বানে না করে আসছে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল ইঙ্গিত দিয়েছেন, দক্ষিণ কোরিয়া এ সংঘাতে লিপ্ত দেশগুলোকে অস্ত্র না দেওয়ার ক্ষেত্রে যে নীতির কথা বলেছিলো সেই নীতি পরিবর্তন করতে পারে।
এদিকে বিবিসিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক একটি অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওপেন সোর্স সেন্টার বলেছে, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাশিয়া এক মিলিয়ন ব্যারেলের বেশি তেল উত্তর কোরিয়াকে সরবরাহ করেছে।
সংস্থাটির বিশেষজ্ঞ ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ল্যামি বিবিসিকে জানায়, পিয়ংইয়ং ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোকে সহায়তার জন্য যে অস্ত্র ও সৈন্য পাঠিয়েছে তার বিনিময়ে রাশিয়া এই তেল পাঠিয়েছে।