করোনাভাইরাস সম্পর্কিত ৫ ভ্রান্ত ধারণা
করোনা ভাইরাসবিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পুরো বিশ্ব জুড়ে যে ভাইরাসের প্রভাব ও বিস্তার আতঙ্কের কালো ছায়া ফেলে দিয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই সেটা ঘিরে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে আশঙ্কা ও ভীতি।
যেহেতু করোনাভাইরাসটি একেবারেই নতুন ধরনের একটি ভাইরাস এবং গত তিন মাসে ৩০০ বারের বেশি বদলেছে এই ভাইরাসের জিনের ধরণ। ফলে গবেষকেরাও হিমশিম খাচ্ছেন এই ভাইরাসের নির্দিষ্ট ধরণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায় বের করতে। এর ফলে সঠিক তথ্যের সাথে ছড়িয়েছে বেশ কিছু ভুল ও ভ্রান্ত ধারণাও। করোনাভাইরাস সম্পর্কিত এমন পাঁচটি ভ্রান্ত ধারণা তুলে আনা হল।
ভ্রান্ত ধারণা ১: বাদুরের স্যুপ থেকে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধারণার কোন জোরালো প্রমাণ নেই। যদিও এটা সত্য যে পরীক্ষা করে বাদুরে করোনাভাইরাস পাওয়া গিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় অবস্থিত ইউমা রেজিনাল মেডিক্যাল সেন্টারের হসপিটাল মেডিক্যাল স্পেশালিস্ট আশিস শর্মা, এমডি জানান, করোনাভাইরাস উহান শহরের সিফুড ও মাংসের বাজার থেকে ছড়িয়েছে। যেখানে বাদুরসহ অন্যান্য বহু প্রজাতির পশুপাখি ছিল তাই নিশ্চিত করে এটা বলা সম্ভব নয় যে, বাদুর থেকেই ছড়িয়েছে এই ভাইরাসটি
২০১৬ সালে একজন ভ্লগারের বাদুরের স্যুপ খাওয়ার ভিডিও করোনাভাইরাস ছড়ানোর পর ভাইরাল হলে সেটাকেই সবাই কারণ হিসেবে ধরে নেয়। কিন্তু ভিডিওটি উহানের নয়, সাউথ প্যাসিফিক আইল্যান্ড পালাউয়ের।
ভ্রান্ত ধারণা ২: সার্জিক্যাল মাস্ক করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করবে
বিশেষ কিছু মডেলের প্রফেশনাল, টাইট ফিটিং র্যাস্পাইরেটস (N95) স্বাস্থ্য কর্মীদের ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের কাছ থেকে ভাইরাস সংক্রমণ রোধ করতে পারে। কিন্তু হালকা, ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া (ডিস্পোসেবল) সার্জিক্যাল মাস্ক সাধারণ মানুষদের করোনাভাইরাসের সংক্রমন থেকে রক্ষা করবে না। এমনটাই বলেন টেক্সাসের টেক্সাস হেলথ রিসোর্সের ইনফেকশাস ডিজি স্পেশালিস্ট নিখিল ভায়ান, এমডি।
ব্যাখ্যা করে নিখিল বলেন, ‘এই মাস্কগুলো মুখের সাথে ভালোভাবে ফিট করে না, এতে করে নাক ও মুখ অরক্ষিত থেকে যায়।
ভ্রান্ত ধারণা ৩: অন্য দেশ থেকে জিনিস কিনলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
প্রতিদিনই বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা করোনাভাইরাস নিয়ে নানা ধরনের পরীক্ষা ও গবেষণা করছেন এই ভাইরাস সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে ও নতুন তথ্য বের করতে। নিখিল জানান, অন্যান্য আরও ভাইরাসের মতো করোনা ভাইরাসও কোন বস্তু বা জিনিসের উপরে লম্বা সময়ের জন্য জীবিত থাকতে পারে না। কয়েক সপ্তাহ সময় নিয়ে অন্য দেশ থেকে কোন প্যাকেজ আসলে তার মাধ্যমে COVID-19 ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এই ভাইরাস মূলত বিস্তার পায় মানুষের মাধ্যমে। মানুষের হাঁচি, কাশি, স্পর্শই ভাইরাস ছড়ানোর মূল মাধ্যম।
ভ্রান্ত ধারণা ৪: ভিটামিন-সি সাপ্লিমেন্ট প্রতিরোধ করবে করোনাভাইরাস
এখনও পর্যন্ত গবেষকেরা তার গবেষণা থেকে এমন কোন প্রমাণ পাননি যা প্রকাশ করে, ভিটামিন-সি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। এমনকি সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের সমস্যা প্রতিরোধেও অনেক সময় ভিটামিন-সি সাপ্লিমেন্ট কার্যকর নয়। তবে ঠান্ডা-কাশি-হাঁচি ও জ্বরের স্থায়িত্ব কমাতে ভিটামিন-সি কিছুটা সাহায্য করে।
ভ্রান্ত ধারণা ৫: চায়নিজ রেস্টুরেন্টে খাবার খেলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে হবে
মোটেও নয়। সেই হিসেবে তো তবে ইতালিয়ান, কোরিয়ান, জাপানিজ, ইরানিয়ান খাবার পাওয়া যায় এমন রেস্টুরেন্টও পরিহার করতে হবে। রেস্টুরেন্টের সাথে করোনাভাইরাসের কোন সম্পর্ক নেই। তবে পরিবেশিত খাবার সঠিকভাবে সিদ্ধ ও রান্না হয়েছে কিনা সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।