নাসিক নির্বাচন: নগরসেবক পেতে ‘গোলযোগ’ চান না জনগণ
নাসিক নির্বাচনশেষ হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণা। রাত পোহালেই ভোটের লড়াই। এই ভোটে শেষ পর্যন্ত কী হয় তা দেখানোর জন্য মুখিয়ে আছে ভোটার ও প্রার্থীরা। কে জিতবে তা নিয়ে চলছে হিসাব-নিকাশ। কিন্তু নির্বাচনে বেশিভাগ ভোটারই মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীকে এগিয়ে রাখছেন।
তারা বলছেন, এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আইভীই জিতবে।
নির্বাচন নিয়ে কথা হয় ১৮নং ওয়ার্ডের এক বৃদ্ধার সাথে (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)। তিনি বলেন, আইভী লোক হিসেবে ‘একশতে একশ’, কিন্তু নৌকাই তার সমস্যা। মানুষ তারে (আইভী) পছন্দ করে কিন্তু নৌকাকে অনেকেই পছন্দ করে না। এই কারণে ভোট কম পাইবো। কিন্তু আমি ভোট আইভীকেই দেমু।
কথা হয় নিতাইগঞ্জ এলাকার চায়ের দোকানদার মো. মোবারকের সঙ্গে। তিনি বলেন, নির্বাচনে আইভীই জিতবো। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা তা বলা মুশকিল।
শহরের প্রাণ কেন্দ্র চাষাঢ়ায় কথা হয় কলেজ ছাত্র নাঈমের সাথে। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হবে। আর আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশা করছি। এখন পর্যন্ত সেই পরিবেশও বিরাজ করছে। তবে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে কিনা তা বলা যায় না।
চাকরিজীবী সজল বলেন, ভোটে নৌকাই জিতবে। আর সুষ্ঠু নির্বাচনও হবে। কারণ প্রচারণার এত আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও এখন পর্যন্ত কোন অঘটন ঘটেনি নারায়ণগঞ্জে। তাই আমরা আশা করি সুষ্টু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে।
শহরের গলাচিপা এলাকায় দেখা হয় নুরজাহান বেগমের সাথে, কথায় হয় নির্বাচন নিয়ে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন ভালো হবে। নৌকা ও হাতি এই দুইটাই প্রচার করছে। দুইজনই ভালো ভোট পাবে। তবে আল্লাহ ভালো জানে কে জিতবো। কিন্তু আইভী খুব ভালা মানুষ।’
নয়ামাটির এক হুসিয়ারি ব্যবসায়ী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, হাতি মার্কায় ভোট দেমু। নৌকায় দেমু না। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, নৌকায় ভোট দিতে আপত্তি তার। নৌকা মানেই আওয়ামী লীগ আর আওয়ামী লীগ সরকারের কর্মকাণ্ড ভালো লাগে না বলেও জানান তিনি।
পথচারী সুমন বলেন, যানজট আর হকারদের কারণে রাস্তায় হাঁটাই মুশকিল। এত বছর ক্ষমতায় থেকেও তার কোন সমাধান করতে পারে নাই। নতুন কাউকে দরকার। এত বছর তো কাজ করছে। এখন নতুন কাউকে সুযোগ দিয়ে দেখা দরকার সে কি করে।
বিএনপির এক সমর্থক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন ভোটও দিতে পারি না! আমরা আমাদের ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চাই। জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে, সরকার না। হার জিত থাকবেই আমরা চাই সুষ্টু নির্বাচন।
‘ভোটই দিতে যামু না’ এমন মন্তব্য করেন আরেক ভোটার। তিনি বলেন, ভোট দিতে গেলে বলে ভোট হয়ে গেছে। গত জাতীয় নির্বাচনে ভোটই দিতে পারলাম না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক সমর্থন বলেন, আওয়ামী লীগ করি নৌকাই ভোট দেমু। আইভীরে পছন্দ নাই করতে পারি কিন্তু আওয়ামী লীগ তো। কিন্তু এবার আইভী ও তৈমুরের মধ্যে ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
গার্মেন্টস কর্মী লিপি বেগম বলেন, আইভী আপা অনেক উন্নয়ন করছে। তারেই আবার ভোট দেমু।
হকার্স মার্কেটের হকার হামিদ বলেন, কে হারবো কে জিতবো এটা পরের বিষয়। নির্বাচনে যেন কোন গেঞ্জাম (ঝামেলা) না হয়। এটাই হচ্ছে বড় বিষয়।
উল্লেখ্য, আগামীকাল রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে ভোট চলবে। একজন মেয়র, ৯ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর এবং ২৭টি ওয়ার্ডের জন্য একজন করে কাউন্সিলর বেছে নিতে ভোট দেবে ৫ লাখ ১৭ হাজারেরও বেশি নারায়ণগঞ্জবাসী। মেয়র পদে লড়ছেন সাতজন। এ ছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন।