সংকেতে অভ্যস্ত উপকূলবাসী, আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে অনীহা
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলবঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে মংলায় দমকা বাতাসের সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। যে কোনো মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের আশঙ্কা করছেন সবাই। কিন্তু বিপদ সংকেতে অভ্যস্ত হওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চাইছেন না অনেকেই। এদের মধ্যেই কেউ কেউ আবার আশ্রয় কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে সরে যাচ্ছেন।
শনিবার (৯ নভেম্বর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মংলা অঞ্চলের আকাশে গুমোটভাব ছিল। তবে দুপুরের পর মাঝে মধ্যে কোথাও কোথাও ঝড়ো হাওয়াসহ মাঝারি বৃষ্টি হয়েছে। উপকূলের নদীতে পানির উচ্চতা বেড়েই চলেছে। পানির উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে মানুষের আতঙ্কের মাত্রা। উপকূলীয় এসব অঞ্চলের মানুষের ভয়, পানি বাড়লেই যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে যেতে পারে। তাই উপকূলীয় এসব এলাকার অনেকেই প্রাণের মায়ায় নিরাপদ আশ্রয়ে সন্ধানে ছুটছেন। তবে ভিটে মাটি ছেড়ে অনেকেই আবার কোথাও যেতে চাইছেন না।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ঝড় তো এখানে প্রায়ই হয়। এখন আর ভয় পাই না। বেশি ঝড় হলে আশ্রয়কেন্দ্রে যাব, কম হলে আশ্রয়কেন্দ্রে যাবনা। ঝড় এখন অভ্যাস হয়ে গেছে, ভয় লাগেনা।
মংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসা উপকূলের বাসিন্দা নূরজাহান বলেন, ‘ঝড় তো সব সময় অয়। তাই আমাগে ভয় লাগেনা। আমি বুড়ো মানুষ, তাই আইছি। তয় বেশি লোক আসেনি এহেনে।’
মংলা দিগরাজ এলাকার বানু বেগম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আমাগে এহানে তো সব সময়ই ঝড়-বন্যা হইতে থাহে। এইসব এহন সয়ে গেসে। আর ভিটে ছাইরে কই যাব। যা হবার হবেনে, বাড়ি ছাইরে যাবনা।’
মংলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাহাত মান্নান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ মোকাবিলায় ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকরা প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে উপকূলের বাসিন্দাদের সতর্ক করছেন। এতসব আয়োজনের পরেও আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষ যেতে চাচ্ছেনা। তাই উপজেলা প্রশাসন ও সিপিপি এর সদস্যরা স্থানীয়দের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছে। দুযোর্গ পরবর্তী প্রস্তুতি হিসেবেও শুকনো খাবার, টিআর চাউল, নগর অর্থ ও ঢেউটিন মজুদ রয়েছে। মাঝি ও উপকূলবাসীদের সতর্ক করতে চলছে মাইকিং।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি তৎপর আছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এছাড়াও উপকূলীয় অঞ্চলে মাইকিং করা হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ লোকই ঝড়ের জন্য অপেক্ষা করছে। আগে থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চায়না কেউ।
তিনি আরো বলেন, ‘বুলবুল মোকাবিলায় সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) সব কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছেন। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে ৩০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার প্রস্তুত রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রও প্রস্তুত আছে।’