রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার পারমাণবিক বাহিনীকে বিশেষ সতর্ক অবস্থায় থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। পুতিনের এমন নির্দেশকে সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য বলে অভিহিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রুশ বাহিনীকে পুতিন এমন সতর্কবার্তা দেওয়ার পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র একথা বলে।
বিজ্ঞাপন
বিবিসির বিশ্লেষক গর্ডন কোরেরা বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিপ্রায়ের চেয়ে রাশিয়ার এর মাধ্যমে ন্যাটোকে এক ধরনের সতর্কবার্তা দিল। যাতে ন্যাটো ইউক্রেনকে কোন ধরনের সহায়তা না করে।
জাতিসংঘের মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস রাশিয়ার এই পদক্ষেপকে অগ্রহণযোগ্য বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট এই যুদ্ধকে জটিল দিকে নিয়ে যাচ্ছেন, যা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, আমাদেরকে রুশ প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপগুলিকে সবচেয়ে শক্তিশালী উপায়ে আটকাতে হবে।
এর আগে, রাশিয়ার কৌশলগত পারমাণবিক প্রতিরোধ বাহিনীকে 'বিশেষ সতর্কতায়' থাকতে নির্দেশ দেন পুতিন। রাশিয়ার প্রতি পশ্চিমাদেশগুলোর আচরণের কারণেই পারমাণবিক বাহিনীকে বিশেষ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
রাশিয়ার সম্ভাব্য বিমান হামলার আশঙ্কায় ইউক্রেনে অবস্থিত নিজেদের দূতাবাস সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও স্পেন।
বুধবার (২০ নভেম্বর) বিমান হামলা হতে পারে বলে তথ্য পাওয়ার পর দূতাবাস দুটি বন্ধ ঘোষণা করে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার অভ্যন্তরে মার্কিন সরবরাহকৃত দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিয়ে চলমান উত্তেজনার মধ্যে এমন পদক্ষেপ নিল ওয়াশিংটন।
স্প্যানিশ দূতাবাস বলছে, ইউক্রেনজুড়ে বিমান হামলার ঝুঁকি বৃদ্ধির কারণে দূতাবাসের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। স্প্যানিশ নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে, ইতালি ও গ্রিসও ঘোষণা করেছে কিয়েভে তাদের দূতাবাস বন্ধ থাকবে।
রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধের সহস্রতম দিনে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালায় ইউক্রেন। এমন হামলা চালানো হলে পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে পাল্টা জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি আগেই দিয়ে রেখেছে দেশটি। তাই গতকালের এ হামলার পর ইউক্রেন যুদ্ধ আরও সংঘাতের দিকে মোড় নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিমান হামলাজনিত সতর্কসংকেত ঘোষণা করা মাত্রই নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে মার্কিন নাগরিকদের পরামর্শ দিয়েছে দূতাবাস।
ইউক্রেনের ভূখণ্ডে রুশ বাহিনীর সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরুর এক হাজারতম দিন পার করেছে। রাশিয়ার সঙ্গে লড়াইয়ে ক্লান্ত ইউক্রেনীয় সেনারা। যুদ্ধক্ষেত্রে ক্লান্ত সেনাদের লড়াই এবং ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় জর্জরিত কিয়েভ। এর মধ্যেই রাশিয়ার অভ্যন্তরে প্রথমবারের মতো মার্কিন সরবরাহকৃত দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন।
এমন হামলা চালানো হলে পরমাণু অস্ত্র দিয়ে পাল্টা জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি আগেই দিয়ে রেখেছে মস্কো। এমন অবস্থায় ইউক্রেন যুদ্ধ আরও সংঘাতের দিকে মোড় নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি একেবারে দোরগোড়ায়? শেষের সেদিন কি আসছে? এই প্রশ্নটা নানা সময়ই ওঠে। তবে এবার তা যেন সন্নিকটে বলে মনে হচ্ছে।
এদিকে, ইউক্রেনকে অ্যান্টি-পারসনেল বা মনুষ্যবিহীন মাইন সরবরাহের অনুমোদন দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পারমাণবিক বোমা হামলাজনিত শকওয়েভ ও তেজস্ক্রিয়তাসহ নানা ধরনের হুমকি থেকে সুরক্ষায় ভ্রাম্যমাণ বোমা আশ্রয়কেন্দ্রের নির্মাণ শুরু করেছে রাশিয়া।
রাশিয়ার জরুরিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ইনস্টিটিউট বলেছে, কেইউবি–এম’ নামের এসব আশ্রয়কেন্দ্র পারমাণবিক বোমা হামলা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিপর্যয় থেকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য সুরক্ষা দিতে পারে।
যেসব পরিস্থিতি থেকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো সুরক্ষা দিতে পারে, সেগুলো হলো—বিস্ফোরণ ও প্রচলিত অস্ত্রের আঘাত, ভবন থেকে নেমে আসা ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া এবং বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্য ও অগ্নিকাণ্ডের প্রভাব।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই যুদ্ধের শুরু থেকেই আশঙ্কা ছিল তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের। সোমবারের পর, সেই আশঙ্কা সত্যি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠেছে। ইউক্রেনকে, রাশিয়ার মাটিতে তাদের দেওয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি। এর প্রতিক্রিয়ায়, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের নীতি অনেকটাই শিথিল করেছে রাশিয়া। পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি আগেও দিয়েছেন পুতিন। তবে, এবারের হুমকিটা অত্যন্ত গুরুতর বলেই মনে করছে ইউরোপীয় দেশগুলো। এর জেরে, তাদের নাগরিকদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার বিষয়ে সতর্ক করেছে একাধিক দেশ। এদের মধ্যে ন্যাটোভুক্ত দেশও রয়েছে।
গত বছর ন্যাটোতে যোগদান করে ফিনল্যান্ড। যুদ্ধের প্রস্তুতি বিষয়ে, আগেই তারা একটা অনলাইন ব্রোশিওর জারি করেছিল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের তীব্রতা বাড়ায়, রাতারাতি সেই ব্রোশিওর আপডেট করা হয়েছে। একেই রাশিয়ার সঙ্গে তাদের লম্বা সীমান্ত রয়েছে। তার ওপর, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে যুদ্ধের অভিজ্ঞতাও আছে তাদের। সম্ভবত, সেই কারণেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে তারা আরও বেশি সতর্ক।
ফিনল্যান্ডে ইতোমধ্যেই ঠান্ডা পড়ে গিয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ২০ ডিগ্রি নিচে নেমে যেতে পারে। এই তীব্র শীতের মধ্যে যদি যুদ্ধের ভয়াবহতা নেমে আসে তাদের ওপর, সেই পরিস্থিতিতে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যাবে? নাগরিকদের সেই পরামর্শই দিয়েছে ফিনল্যান্ড সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে আয়োডিন ট্যাবলেট, সহজে রান্না করা যায় এমন খাবার, পোষ্যদের খাবার এবং ব্যাকআপ পাওয়ার সাপ্লাই মজুত রাখতে বলা হয়েছে।
চলতি বছরের মার্চে ন্যাটোয় যোগ দিয়েছে সুইডেন। পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কার মধ্যে সুইডিশ সরকার নাগরিকদের 'বোমা শেল্টারে' আশ্রয় নিতে বলেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে, মাত্র পাঁচবার এই ধরনের সতর্কতা জারি করেছে সুইডিশ সরকার। তারা নাগরিকদের বলেছে, আলু, বাঁধাকপি, গাজর, ডিম, সস, ব্লুবেরি এবং রোজশিপ স্যুপ মজুত রাখতে।
ডেনমার্কও ইতোমধ্যেই তাদের নাগরিকদের শুকনো খাবার, পানি এবং ওষুধ মজুত করার পরামর্শ দিয়েছে। প্রত্যেক নাগরিককে এই বিষয়ে ইমেল পাঠিয়েছে ডেনিশ সরকার। পারমাণবিক হামলা-সহ জরুরি অবস্থার মধ্যে অন্তত তিন দিন যাতে কাটাতে পারে, সেই মতো পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নরওয়ে সরকারের জারি করা প্যামফ্লেটে, জরুরি অবস্থার মধ্যে অন্তত এক সপ্তাহ কীভাবে কাটানো যাবে, তার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, ইউক্রেনকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানোর অনুমতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ট্রাম্পের পুত্র ডোনাল্ড জুনিয়র। এর ফলে রাশিয়া পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে এবং তার পরিণতিতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
পরমাণু অস্ত্র সমৃদ্ধ দেশসমূহ
সুইডিশ থিংক ট্যাঙ্ক স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের' (এসআইপিআরআই) প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে নয়টি পরমাণু শক্তিধর দেশ রয়েছে। সেগুলো হলো- যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া ও ইসরায়েল।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সারা বিশ্বে ১২ হাজার ২২১টি ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে ৯ হাজার ৫৮৫টি ক্ষেপণাস্ত্র সম্ভাব্য ব্যবহারের জন্য অস্ত্রাগারে মজুদ রয়েছে।
এসআইপিআরআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের মোট পরমাণু অস্ত্রের ৯০ শতাংশই রয়েছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের দখলে। তবে ২০২৩ সালের নিরিখে এই দুই দেশের অস্ত্র ভাণ্ডার বাড়েনি বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২৪ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের দখলে রয়েছে ৩৭০৮টি পারমাণবিক ওয়ারহেড যার মধ্যে ১৭৭০টি মোতায়েন করা হয়েছে এবং বাকিগুলো ভাণ্ডারে মজুদ করা আছে।
অন্যদিকে রাশিয়ার ৪৩৮০টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। এর মধ্যে ১৭১০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড তাদের ভাণ্ডারে মজুদ করা আছে।
২০২৩ সালের তুলনায় এই দুই দেশের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার না বাড়লেও গত বছরের জানুয়ারি মাসের তুলনায় রাশিয়া ইতোমধ্যে ৩৬টি এমন ওয়ারহেড মোতায়েন করেছে যা আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে, বেলারুশের মাটিতে রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করেছে বলে ক্রমাগত দাবি করা হয়েছে, তবে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনের বিষয়ে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে ২১০০টি ওয়ারহেড ব্যালিস্টিক মিসাইল বসানো হয়েছে এবং 'অপারেশনাল অ্যালার্টে' (যে কোনও সময় আঘাত হানতে পারে এমন সতর্কতা) রাখা আছে। এদের মধ্যে প্রায় সবকটিই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ার দখলে আছে। যদিও এই প্রথমবার এই তালিকায় রয়েছে চীনের দখলে থাকা কিছু পারমাণবিক ওয়ারহেডও।
উত্তর কোরিয়ার কাছে ৫০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে। আরও বেশি পরমাণু অস্ত্র তৈরির দিকে মনোনিবেশ করেছে এই দেশ। পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা উত্তর কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।
এসআইপিআরআইয়ের হিসাব অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ার কাছে এত পরমাণু উপাদান রয়েছে যা ৯০টি পরমাণু ওয়ারহেড তৈরির জন্য যথেষ্ট।
এসআইপিআরআইয়ের বার্ষিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ইসরাইল প্রকাশ্যে স্বীকার না করলেও তাদের কাছে মজুদ পারমাণবিক অস্ত্রের আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে সে বিষয়ে অনুমান করা যায়।
পরীক্ষা করা অস্ত্র, নিরস্ত্রীকরণ এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়গুলির প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইউক্রেন এবং গাজার যুদ্ধের প্রভাবগুলি দৃশ্যমান বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এসআইপিআরআই-এ্র পরিচালক ড্যান স্মিথ বলেছেন, যদিও কোল্ড ওয়ার যুগের অস্ত্রগুলো ধীরে ধীরে নষ্ট করে ফেলার ফলে বিশ্বে মজুদ মোট পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে, তবে দুঃখজনকভাবে বছরের পর বছর ধরে আমরা দেখছি আঘাত হানতে প্রস্তুত এমন পারমাণবিক ক্ষেপণাত্রের সংখ্যা বাড়ছে। এই প্রবণতা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করেছেন তিনি ।
তার কথায়, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে এবং সম্ভবত আগামী বছরগুলোতে এই প্রবণতা আরও ত্বরান্বিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।আমরা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়ে আছি।
এই মুহূর্তে বিশ্বের অস্থিতিশীলতার অনেক কারণ রয়েছে। যেমন- রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, ক্রমবর্ধমান পরিবেশগত অস্থিতিশীলতা এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতা।
২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ভারত তাদের দখলে থাকা পারমাণবিক ওয়ারহেডের সংখ্যা বাড়িয়ে ১৭২টি করেছে। ২০২৩ সালে ভারতের কাছে ১৬৪টি পারমাণবিক ওয়ারহেড ছিল।
পাকিস্তানের কাছে ২০২৩ সালে মজুত ছিল ১৭০টি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত পাকিস্তানের অস্ত্র ভাণ্ডারে মজুদ পারমাণবিক অস্ত্রের পরিমাণ একই রয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
তবে এসআইপিআরআই-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতের কথা মাথায় রেখে পাকিস্তান পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে পাকিস্তান। আর ভারতের নজর রয়েছে দূরপাল্লার অস্ত্র মোতায়েনের দিকে, যে অস্ত্র চীনে থাকা ‘টার্গেট’ অব্দি পৌঁছাতে পারে।
চীনের ক্রমবর্ধমান অস্ত্র ভাণ্ডার কিন্তু অনেক দেশের জন্যেই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যে তালিকায় ভারতও রয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে চীনের কাছে ৪১০টি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ থাকলেও ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সে দেশের অস্ত্রাগারে মজুদ পারমাণবিক ওয়ারহেডের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০টিতে। প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এই সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ফক্স নিউজকে বলেছেন, যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে সামরিক সহায়তা কমিয়ে দেয়, তাহলে ইউক্রেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে হেরে যাবে।
বুধবার (২০ নভেম্বর) টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের একাধিক দেশ। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর ধারণা করা হচ্ছে তিনি হয়তো ইউক্রেনের জন্য সহায়তা কমাবেন। এতে যুদ্ধে পরাজয়ের আশঙ্কা করছেন জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা কমিয়ে দিলে 'আমরা হেরে যাব'।
ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যদি তারা সহায়তায় কাট-ছাট করে, তাহলে আমরা/আমি মনে করি, আমরা হারব।
ইউক্রেনীয় এই প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, আমরা লড়াই করব। আমাদের নিজস্ব উৎপাদন আছে, কিন্তু তা যুদ্ধে জয় পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। এবং আমি মনে করি এটি (লড়াইয়ে) টিকে থাকার জন্যও যথেষ্ট নয়।
২০২২ সালে রাশিয়ান আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে ইউক্রেনকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অর্থ ও সামরিক সহায়তা দিয়েছে তার একজন কট্টর সমালোচক হচ্ছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তবে তিনি কীভাবে তা করবেন তা বিস্তারিতভাবে বলেননি।
সম্প্রতি রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলার জন্য ইউক্রেনকে মার্কিন সরবরাহকৃত দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তবে এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছে ট্রাম্পের মিত্ররা।
এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তার সাক্ষাৎকারে ফক্স নিউজকে বলেন, ইউক্রেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঐক্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি দাবি করেন, ট্রাম্প এই যুদ্ধ শেষ করার জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে প্রভাবিত করতে পারেন, কারণ তিনি পুতিনের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী।
তিনি আরও বলেন, পুতিন রাজি হতে পারেন এবং এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারেন, তবে এটি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অনেক বেশি নির্ভর করছে। কারণ পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে দুর্বল।
হামাসের কাছে আটক প্রত্যেক ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তির জন্য ‘৫ মিলিয়ন ডলার’ অফার করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) গাজায় একটি সংক্ষিপ্ত সফরের সময় এই পুরস্কারের ঘোষণা করেন তিনি। খবর আল জাজিরা।
নেতানিয়াহু বলেন, হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে প্রত্যেক বন্দি মুক্তির জন্য ‘পাঁচ মিলিয়ন ডলার’ পুরস্কার পাবে। এছাড়াও বন্দি মুক্তিদাতা ও তাদের পরিবারের লোকদের গাজা থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে ‘নিরাপদ পথের’ উপায় খুঁজে পাবে।
তিনি আরও বলেন, "এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ আপনার ওপর কিন্তু ফলাফল একই হবে। আমরা বন্দিদেরকে ফিরিয়ে আনবো।"
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ ধারণা করছে এখনো ১০১ জন গাজায় বন্দি রয়েছে। যদিও সেই সংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এখন মারা গেছে বলেও তাদের বিশ্বাস।
বন্দিদের পরিবার নেতানিয়াহুকে বারবার চাপ দিচ্ছে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর জন্য। যাতে জিম্মিরা মুক্তি পায়।
তবে নেতানিয়াহু বলেছেন, বন্দিদের মুক্ত করার একমাত্র উপায় একটি সামরিক অভিযান। সেই লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে।