২১তম জাতীয় সম্মেলন: উৎসব আ. লীগে
আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল-২০১৯বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দু’দিনব্যাপী ২১তম জাতীয় সম্মেলন আজ শুরু হচ্ছে। শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনকে ঘিরে সারাদেশেই দলটির মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।
২০ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধনের পর ২৫ মিনিটের একটি উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করা হবে। সেখানে তুলে ধরা হবে আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সরকারের উন্নয়ন ও সাফল্য।
সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে দলটির প্রথম অধিবেশনস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সাজে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে দলের সাত দশকের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। নবীনদের জন্য সেখানে থাকছে সম্ভাবনাময় আগামীর বার্তা।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে এবারের সম্মেলন তেমন জাঁকজমকপূর্ণ হবে না বলে দলীয় নেতারা জানালেও ২১তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এখন সাজ সাজ রব।
নৌকার আদলে তৈরি মূল মঞ্চের সামনের বিশাল প্যান্ডেলের কার্নিশ সাজানো হয়েছে বিশ্ব রাজনীতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন অর্জনের চিত্র দিয়ে। মূল মঞ্চের ডান পাশে সামনে একটি ছোট মঞ্চ করা হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা হবে।
বিশাল এ কর্মযজ্ঞের তদারকিতে আছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। দফায় দফায় তাদের পরিদর্শন, দিক নির্দেশনা ও পরামর্শে সাজানো হয়েছে উদ্যান।
মঞ্চ ও সাজসজ্জা কমিটির আহ্বায়ক এবং দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বার্তা২৪.কমকে বলেন, আশা করি, এবারের সম্মেলনে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জমায়েত হবে। তাই আমরাও চেষ্টা করেছি সাধ্যমত আয়োজন করতে। সাজসজ্জায় আওয়ামী লীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও আমাদের নেত্রীর অর্জনগুলো ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। সম্মেলনে আসা কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের জন্য শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের ব্যবস্থাও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করা হয়েছে।
এবারের সম্মেলনের অন্যতম আকর্ষণ মূল মঞ্চ। ১০২ ফুট দীর্ঘ, ৪০ ফুট প্রশস্ত মঞ্চটি নৌকার আদলে তৈরি। মঞ্চের পেছনের ‘জায়ান্ট ব্যানারে’ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ছবি ছাড়াও ঠাঁই পেয়েছে জাতীয় চার নেতা- তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন এম এ মনসুর আলী এবং এএইচ এম কামরুজ্জামানের ছবি। এছাড়া আছে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম চার নেতা- মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শামসুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশের ছবি।
মঞ্চের সামনে রয়েছে বাঙালির গৌরব ও অহংকার পদ্মাসেতুর রেপ্লিকা। তাতে রয়েছে খরস্রোতা পদ্মার বুকে ৪০টি পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সেতুটির সামনের বিশাল জলরাশিতে ভেসে বেড়াচ্ছে ছোট ছোট নৌকা। এক পাশে জেগে ওঠা চরে রাখা হয়েছে কাশবন। এর মধ্যে নোঙর করে রাখা হয়েছে বিশালাকার একটি পাল তোলা নৌকা। তাতে আবার জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতি।
৮১ সদস্যের মধ্যে চারটি পদ শূন্য থাকায় মূল মঞ্চে চেয়ার থাকবে ৭৭টি। মঞ্চের সামনে নেতাকর্মীদের জন্য চেয়ার থাকবে ৩০ হাজার। এছাড়া সম্প্রসারিত মঞ্চে ১৫ হাজার চেয়ার দেওয়া হবে। ২৮টি এলইডি পর্দায় দেখানো হবে সম্মেলনের পুরো অনুষ্ঠান।
প্যান্ডেলের সামনে বাম পাশে রয়েছে আরেকটি নৌকা। অপেক্ষাকৃত ছোট সে নৌকায় দাঁড়িয়ে শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
সম্মেলনকে ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর আশপাশের এলাকা নিরাপত্তার চাদরে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এরই মধ্যেই কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের জন্য কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ভেন্যুতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। মূল মঞ্চ ও এর আশেপাশের নিরাপত্তা তদারকি করছেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া সম্মেলনের দিন ভেন্যুতে আওয়ামী লীগের কয়েকশ’ নেতাকর্মী শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকবেন।
নেতাকর্মীদের প্রবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাঁচটি গেট থাকছে। শিখা চিরন্তনী গেটটি ভিআইপিদের জন্য সংরক্ষিত থাকছে।
আওয়ামী লীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিভিন্ন নিদর্শন নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের হাজির হয়েছে আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)।
স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগের দীর্ঘ পথ চলার বিভিন্ন ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে ১০টি স্থাপনা প্রদর্শন করছে তারা। যা সম্মেলনের জৌলুস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
১০টি স্থাপনা হলো-‘ওয়াক উইথ দ্যা লিডার’, ‘রোড টু টোয়েন্টিফার্স্ট কাউন্সিল’, ‘লাইট আফটার ডার্কনেস’, ‘ফেইস অফ এএলবিডি’, ‘এএলবিডি রিজিওনাল ফুটপ্রিন্টস’, ‘এলবিডি-ইনফ্রন্ট অফ আ মিরর’, ‘কুওটস ফর ফিউচার লিডারশিপ’, ‘আ নিউ ইরা-পার্ট ওয়ান’ এবং ‘আ নিউ ইরা-পার্ট টু’।
সম্মেলনে আগত কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের পাটের ব্যাগে উপহার দেওয়া হবে। এতে থাকবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেসব উন্নয়ন হয়েছে, তার তালিকা সম্বলিত একটি কার্ড থাকবে। একই সঙ্গে থাকবে দু’টি সিডি। একটিতে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন এবং অন্যটিতে বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র, একটি প্যাড ও একটি কলম থাকবে পাটের ব্যাগে। এছাড়া সভানেত্রী শেখ হাসিনার দেড়শ’ আলোকচিত্র সম্বলিত একটি অ্যালবামও দেওয়া হবে।
এছাড়া ২১তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে ওয়েব পেজ উদ্বোধন করেছে প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটি। ওয়েব পেজের ভিডিও অংশে সম্মেলন লাইভ দেখানো হবে।
সম্মেলনের প্রথম দিন ২০ ডিসেম্বর ৫০ হাজার নেতাকর্মীর দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। খাবারের ব্যাগে থাকবে মোরগ-পোলাওয়ের সঙ্গে একটি করে ডিম, ফিরনি ও একটি পানির বোতল। এছাড়া কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষ থেকে ব্যক্তিগতভাবেও খাবারের আয়োজন থাকবে।
সম্মেলন উপলক্ষে ১০০ চিকিৎসক নিয়ে ১২টির মতো প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র প্রস্তুত করছে স্বাস্থ্য উপকমিটি।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন রোজ গার্ডেনে জন্ম আওয়ামী লীগের। এখন ঐতিহ্যবাহী এই দলটির বয়স ৭০ বছর। এ পর্যন্ত দলটির ২০ টি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এর আগে দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে শেখ হাসিনা সভাপতি ও ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
২১তম জাতীয় সম্মেলন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ একটি পরিবার। আমাদের অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের কাজে-কর্মে এবং ব্যবহারের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে আওয়ামী লীগ একটি সুসংগঠিত দল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন ও পুরনোদের নিয়ে দলের আগামী কমিটি হবে আধুনিক ও সুসংগঠিত। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন জানিয়ে তিনি বলেন, এবারের সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কেউ অপরিহার্য নয়।