বাংলাদেশকে হারিয়ে সেমিফাইনালে আফগানিস্তান

  ক্রিকেট কার্নিভাল
  • স্পোর্টস ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টাটা করেও শেষ পর্যন্ত জয় তুলে নিয়ে ব্যর্থ হলো বাংলাদেশ। বোলিং নৈপুণ্যে ৮ রানের জয় তুলে নিয়েছে আফগানিস্তান। এই জয়ের মাধ্যমে সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করল রশিদ খানের দল। আফগানদের এই জয়ে সেমির দৌড় থেকে ছিটকে গেল অস্ট্রেলিয়া।

লক্ষ্যটা খুব বেশি বড় ছিল না, জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১২০ বলে ১১৬ রান। তবে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিতে হলে এই রানটা ৭৩ বলের মধ্যে টপকাতে হতো টাইগারদের। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে যা হরহামেশাই দেখা যায়। এমনটা করতে পারলে ইতিহাসও গড়তে পারত বাংলাদেশ! প্রথমবারের মতো নিজেরা সেমিতে চলে যাওয়ার পাশাপাশি আফগান এবং অজিদের বাদ করতে পারত নাজমুল শান্তর দল।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু শেষ পর্যন্ত টাইগার সমর্থকদের হতাশই হতে হলো। সঙ্গে অস্ট্রেলিয়াকেও। সুপার এইটের তিন ম্যাচেই হারের স্বাদ পেলেন শান্ত-লিটন-সাকিবরা। টাইগার ব্যাটারদের নিজেদের বোলিং তোপের মুখে ফেলে সব ধরণের সমীকরণকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ৮ রানের জয় ছিনিয়ে নিল আফগানিস্তান। বাংলাদেশের এই হারের ফলে বাংলাদেশের পাশাপাশি বিশ্বকাপের চলতি আসর থেকে বাদ পড়ল অস্ট্রেলিয়াও।

টসে জিতে এদিন শুরুতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন আফগান অধিনায়ক রশিদ খান। ব্যাট হাতে শুরুটা দারুণ করেন দুই ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। ১১তম ওভারে ৫৯ রানে ভাঙ্গে ওপেনিং জুটি। দলের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৪৩ রান আসে গুরবাজের ব্যাট থেকেই।

বিজ্ঞাপন

এরপর আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে সঙ্গী করে দলের হাল ধরেন জাদরান। ১৬তম ওভারে ভাঙ্গে এই জুটিও। এরপর যেন ব্যাট হাতে বেশ নড়বড়ে হয়ে পড়ে আফগানিস্তান। বাংলাদেশের বোলাররাও যেন নিজেদের ফর্ম ফিরে পান, দুর্দান্ত বোলিং করে একের পর এক উইকেট শিকার করা শুরু করেন। শেষে রশিদ খানের ১০ বলে অপরাজিত ১৯ রানের ক্যামিও ইনিংসের মাধ্যমে ১১৫ রান জমা হয় আফগানদের রানের খাতায়।

বাংলাদেশের সামনে সেমির টিকিট পেতে হলে সমীকরণটা ছিল ১১.৪ থেকে ১৩.৪ ওভারের মধ্যে জিততে হবে, লক্ষ্যের ওপর নির্ভর করবে ওভারের মাত্রা। আফগানদের ১১৫ রানে আটকে ফেলার পর তা ঠিক হলো ১২.১ ওভার। বাংলাদেশ শুরুটা করেছিল সে লক্ষ্যেই, প্রথম ওভারেই লিটন দাস তুললেন ১৩ রান। তবে ওপাশ থেকে তানজিদ তামিম সাজঘরে ফেরত গেলেন, এরপর একে একে গেলেন অধিনায়ক নাজমুল শান্ত ও সাকিব আল হাসানও। বল হাতে দারুণ সাকিব তো ব্যাট হাতে হজম করলেন গোল্ডেন ডাকের লজ্জা।

উইকেটের একপাশে দাঁড়িয়ে সঙ্গীদের আসা যাওয়ার মিছিল দেখছেন লিটন, কি-ই বা করার ছিল তার। একটা সময় সেমির টিকিটের জন্য টাইগারদের দরকার ছিল ১৯ বলে ৪৩ রান। টি-টোয়েন্টির যুগে এই রান তো তাড়া করাই যায়, এমন রেকর্ড তো কতই আছে। কিন্তু বাংলাদেশ পারল না!

ইনিংসের ১০ম ওভারে স্ট্রাইকে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দেশসেরা ফিনিশার যাকে বলা হয়, একা হাতে এই বিশ্বকাপেও যিনি দলের জন্য জয় তুলে এনেছেন, সেই তিনিই নুর আহমেদের সেই ওভার থেকে মোটে নিতে পারলেন ৪ রান, যার মাঝে ডটই দিলেন পাঁচটা। সেমির স্বপ্ন তখনই শেষ বাংলাদেশের। এরপর তারা ধুঁকে ধুঁকে এগোতে থাকে ম্যাচটা কোনোমতে জেতার উদ্দেশ্যে।

সেমিফাইনালে না যেতে পারুক, অন্তত জয়টা তুলে নিবে বাংলাদেশ। এমন আশাতে বুক বেঁধে ছিল গোতা জাতি, একইসঙ্গে অস্ট্রেলিয়াও। কারণ বাংলাদেশের জয়ই অজিদের সেমির টিকিট এনে দিতে পারত। গতরাতে ভারতের বিপক্ষে হারের পর অজি অধিনায়ক মিচেল মার্শ তো বলেছিলেনই- 'কাম অন বাংলাদেশ!'

কিন্তু বাংলাদেশ তাও পারল না। পালাক্রমে আউট হয়েছেন তিন পেস বোলার তানজিম সাকিব, তাসকিন আহমেদ এবং সবশেষে মুস্তাফিজুর রহমান। উইকেটের অপরপ্রান্তে নিরুপায় লিটন তখনও ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে, কোনোভাবে যদি স্ট্রাইক পাওয়া যায় আর দলের জন্য জয়টা ছিনিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু তা হয়নি।

ইতিহাসের দ্বিতীয় ওপেনার হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যেকোনো ইনিংসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যাট করার কীর্তিটা যদিও গড়লেন তিনি। তাতে আর কী আসে যায়! দল তো ম্যাচটাই হেরে গেছে। একইসাথে বিশ্বকাপের মঞ্চে আফগানদের কাছে বাংলাদেশের কখনো না হারার দম্ভটাও ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। চোখের সামনে জন্ম নেওয়া ক্রিকেটীয় জাতিটাকে তারা চলে যেতে দেখল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে!

সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ

আফগানিস্তানঃ ১১৫/৫ (২০ ওভার); গুরবাজ ৪৩, রশিদ ১৯*; রিশাদ ৩-২৬, তাসকিন ১-১২

বাংলাদেশঃ ১০৫ (১৭.৫ ওভার); লিটন ৫৪*, হৃদয় ১৪; রশিদ ৪-২৩, নাভিন ৪-২৬

ফলাফলঃ আফগানিস্তান ৮ রানে জয়ী (বৃষ্টি আইনে)

ম্যাচসেরাঃ নাভিন-উল-হক