কোলাজ মন্তাজ

বাংলা সাহিত্যে দেশভাগ



দেবদুলাল মুন্না
অলঙ্করণ কাব্য কারিম

অলঙ্করণ কাব্য কারিম

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশ্বসাহিত্যে দেশভাগ যেন ট্রাজিক অভিজ্ঞতা। ১৯৪৭ সালে অখণ্ড ভারত ভাগ নতুন দুটি দেশের গৃহহীন ও বাস্তুচ্যুত পরিবার পারস্পরিক গৃহবিনিময় করে উভয় রাষ্ট্রে বসতি স্থাপন করলেও অধিকাংশ মানুষকে উদ্বাস্তু হতে হয়। মুখোমুখি হতে হয় বাস্তবতার। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো অনেককে চলে যেতে হয় জন্মভূমি বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে। হাসান আজিজুল হকের মতো অনেকককে ভারত ছেড়ে আসতে হয় বাংলাদেশে। এই জন্মভূমি ছেড়ে আসার আঘাতের রক্তক্ষরণ, নির্মম সময়ের দাগ আমাদের বাংলা সাহিত্যে ছাপ ফেলেছে। গল্প, উপন্যাস এবং কবিতা সবক্ষেত্রে। কৃষণ চন্দর, সাদাত হাসান মান্টো, খাজা আহমেদ আববাস, ভীষ্ম সাহানী, খুশবন্ত সিংরা যেভাবে উর্দু এবং হিন্দিতে এই বিপর্যয়ের চিত্র এঁকেছেন, তা বাংলা সাহিত্যেও এসেছে। এসেছে বিভিন্ন দেশের সাহিত্যে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে ভারতীয় সাংবাদিক ও লেখক হর্ষ দত্ত যখন প্রশ্ন করেন, “নিজের দেশ, নিজের মাটি থেকে ছিন্নমূল হওয়ার ব্যথার ছোঁয়া রয়ে গেছে আপনার সৃষ্টিতে। কেন এ বিষয়টা ঘুরেফিরে এসেছে?” সুনীল তখন উত্তর দেন, “দেশভাগ নিয়ে আমার বাবার একটি উক্তি আমার সবসময় মনে পড়ে। ’৪৭-এর ১৫ আগস্ট সকালে বাবা ভাঙা ভাঙা গলায় বলেছিলেন, ভারত স্বাধীন হলো, আর আমরা আমাদের দেশ হারালাম! সেই হারানোর বেদনা এত বছর পরও বুকের মধ্যে টনটন করে।”

গৌর কিশোর ঘোষের ‘প্রেম নেই’, হাসান আজিজুল হকের ‘আগুনপাখি’, মাহমুদুল হকের ‘কালো বরফ’, মনোজ বসুর ‘ইয়াসিন মিঞা’, এস এম বজলুল হকের ‘ভাগ না দিয়ে ভাগানো’, অঞ্জলি দেবীর ‘নবীন আশার খড়গ’, অপূর্ব কুমার মৈত্রের ‘স্বাধীনতার ব্যথা’, নরেন্দ্র দেবের ‘চলচ্চিত্র’, সুমথনাথ ঘোষের ‘উদ্বাস্তু’, হরি নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘পুনশ্চ’, ‘ইতিহাস’ ও ‘লাঠিয়াল’, ঋত্বিক ঘটকের ‘স্ফটিক পাত্র’ ও ‘সড়ক’, ফণীন্দ্রনাথ দাশগুপ্তের ‘গোপাল উড়ের লেন’, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘খতিয়ান’, সমরেশ বসুর ‘নিমাইয়ের দেশত্যাগ’, সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘গণনায়ক’, নরেন্দ্রনাথ মিত্রের ‘হেডমাস্টার’ ও ‘পালঙ্ক’, সিকান্দার আবু জাফরের ‘ঘর’, মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীর ‘নেহায়েৎ গল্প নয়’, নূর আলীর ‘মোহাজের’, বেগম হাশমত রশীদের ‘ফরিয়াদ’, আলাউদ্দিন আল আজাদের ‘ছুরি’, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘শ্বেতকমল’ ও ‘অধিকার’, প্রতিভা বসুর ‘দুকূল হারা’ ও ‘অপরাহ্ণে’ ইত্যাদি দেশভাগের গল্প।

স্মৃতি’ আর ‘নতুন অভিজ্ঞতার পুনর্গঠন’—এই দুটি মাত্রায় দেশভাগের সাহিত্য বিকশিত। দেশভাগের সাহিত্যের একটা বড় অংশ জুড়ে এই স্মৃতি আর ফেলে আসা যন্ত্রণার বহিঃপ্রকাশ। দেশভাগের এই গল্প সংকলনে অমলেন্দু চক্রবর্তীর ‘ভিটেমাটির রূপকথা’, ইমদাদুল হক মিলনের ‘দেশভাগের পর’, জাফর তালুকদারের ’পিতৃভূমি’, জীবন সরকারের ‘কোষা’, দেবেশ রায়ের ‘উদ্বাস্তু’, প্রতিভা বসুর ‘দু’কূল হারা’, মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলীর ‘মোজাহের’ মিহির মুখোপাধ্যায়ের ‘বাঙলাদেশ’, মিহির সেনগুপ্তের ‘পিতামহীর স্বদেশযাত্রা’, সিকান্দার আবু জাফরের ‘ঘর’, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কলিকাতার দাঙ্গা ও আমি’, সোমেন চন্দের ‘দাঙ্গা’, জ্যোতির্ময়ী দেবীর ‘এপার গঙ্গা ওপার গঙ্গা, প্রফুল্ল রায়ের ‘রাজা যায় রাজা আসে’, বনফুলের ‘দাঙ্গার সময়’, ইসহাক চাখারীর ‘রায়ট’ প্রভৃতি গল্পের নামই যেন দেশভাগের প্রত্যক্ষ ইঙ্গিতবাহী।

আরো পড়ুন ➥ সাহিত্য করে ‘ধনী’ ও ধনী হয়ে ‘সাহিত্য’ করার গল্প

এছাড়া ঋত্বিক ঘটকের ‘স্ফটিকপাত্র’, কৃষণ চন্দরের ‘পেশোয়ার এক্সপ্রেস’, জ্যোতিপ্রকাশ দত্তর ‘যে তোমায় ছাড়ে’, নরেন্দ্রনাথ মিত্রের ‘পালঙ্ক’, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দোসর’, বিমল করের ‘অন্তরে’, শওকত ওসমানের ‘আলিম মুয়াজিজন’, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘তোমার উদ্দেশ্যে’, সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘গণনায়ক’, সাদত হাসান মান্টোর ‘শরিফান’, সমরেশ বসুর ‘আবাদ’, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘একটি তুলসী গাছের কাহিনী’, সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘নেড়ে’, হুমায়ূন আহমেদের ‘জুয়া’, প্রভৃতি গল্পে দেশভাগের পূর্ব ও পরেকার নানাবিধ মানসিক ও মানবিক সংঘাত, সংঘর্ষ, হাহাকার ফুটিয়ে তুলেছেন লেখকরা।

তবে বাংলাদেশের সাহিত্যে এ বিষয়ে কম লেখা হয়েছে। এর কারণ সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তানের কাছ থেকে আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়া এবং দেশভাগের চেয়ে মুক্তিযুদ্ধই প্রাধান্য পেয়েছে বেশি। এটিই স্বাভাবিক। দেশভাগের পর উপন্যাস পেতে আমাদের ২০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। জ্যোতির্ময়ী দেবীর ‘এপার গঙ্গা ওপার গঙ্গা’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৬৭ সালে। ওপার বাংলার আরো কয়েকটি উপন্যাস হলো—অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে’, শক্তিপদ রাজগুরুর ‘মেঘে ঢাকা তারা’, অমিয়ভূষণ মজুমদারের ‘গড় শ্রীখণ্ড’, সমরেশ বসুর ‘সুচাঁদের স্বদেশ যাত্রা’, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘পূর্ব-পশ্চিম’।

“১৯৪৭ সালে দেশবিভাগ হলে পূর্ব বাংলার রাজধানী ঢাকায় সাহিত্য-সংস্কৃতির নতুন কেন্দ্র গড়ে উঠল। বাঙালি মুসলমান লেখক ও সংস্কৃতিকর্মীরা কলকাতা থেকে ঢাকায় চলে এলেন। বলা বাহুল্য, তাঁরা বাংলা সাহিত্যের চিরায়ত ধারার উত্তরাধিকারটিকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। এবার তাঁদের নবযাত্রা শুরু হলো।” (বাংলাদেশের ছোটগল্প, ১ম খণ্ড, বাংলা একাডেমী, ১৯৭৯, পৃ. ছয়)

দেশভাগ নিয়ে ঢাকায়, সাহিত্য-সংস্কৃতির নতুন কেন্দ্রে অনেকেই উপন্যাস লিখেছেন। কলকাতা থেকে ফিরে সাহিত্যের যে নবযুগের সূচনা করেছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ঔপন্যাসিক হলেন—আনোয়ার পাশা, আবু জাফর শামসুদ্দীন, আবুল ফজল, আবু ইসহাক, সত্যেন সেন, রাজিয়া খান, শহীদুল্লাহ কায়সার, আলাউদ্দিন আল আজাদ, সরদার জয়েনউদ্দীন। এদের উপন্যাসে দেশবিভাগ প্রসঙ্গ-অনুষঙ্গ ও কাহিনীর মৌল বিবেচ্য হয়েছে। পরবর্তী সময়ে হাসান আজিজুল হক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, শওকত আলী ও সেলিনা হোসেনের উপন্যাসেও দেশবিভাগের ইতিহাস-অভিঘাত রূপায়িত হয়েছে।

আরো পড়ুন ➥ শিল্পসাহিত্যে ‘স্বাধীনতা’

প্রথম দিকের উপন্যাসে দেশভাগের ফলে উদ্বাস্তু সমস্যা, বাস্তুচ্যুতির জন্য বেদনাবোধ, স্মৃতিকাতরতা ও ভয়ার্ত অস্তিত্ব-সংগ্রামের ইতিবৃত্ত লেখকদের উদারনৈতিক মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করতে দেখা গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডকুমেন্টিরির মতো করে দেশভাগের ঘটনার উপস্থাপন করা হয়েছে। তারপর কালে কালে তার বিস্তৃতি ঘটেছে। সেই ষাটের দশকের লেখক যারা, তারা এই এত বছর পরে এসেও যখন দেশবিভাগ নিয়ে উপন্যাস লিখেন, সেখানেও দেশবিভাগের অনিবার্য অভিঘাত চিত্রিত হয়। এর নিকতম উদাহরণ হলো ২০১০ সালে প্রকাশিত উপন্যাস ‘আগুনপাখি’।

পঞ্চাশের মন্বন্তর অর্থাৎ ১৯৪৩ থেকে দেশবিভাগ (১৯৪৭) সময়বৃত্তে ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’ উপন্যাসের কাহিনী বিন্যস্ত। আবু ইসহাকের মুখ্য অভিনিবেশ ছিল জয়গুনকেন্দ্রিক নিম্নবর্গের মানুষের জীবনসংগ্রামের বস্তুনিষ্ঠ বর্ণনা। উপন্যাসের সূচনায় আছে মন্বন্তরের প্রসঙ্গ। দুর্ভিক্ষতাড়িত মানুষ স্বপ্ন দেখেছে, দেশ স্বাধীন হলে চালের দাম কমবে। দেশ একদিন স্বাধীন হয়। কিন্তু জয়গুনদের বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষার হয় সমাধি। তাদের ভিটা থেকে আবার উচ্ছেদ হতে হয়। দেশবিভাগ অসংখ্য মানুষকে উদ্বাস্তু করেছিল। সেই বাস্তবতার পরিবর্তে পাকিস্তান রাষ্ট্রে জয়গুনদের নিরাশ্রয়তার নির্মম আলেখ্য রচিত হয় কাহিনীতে।

আবুল ফজলের ‘রাঙ্গাপ্রভাত’-এ দেশভাগ, পাকিস্তান শাসিত পূর্ব বাংলার জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক ও আদর্শগত সংকট, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, হিন্দু-মুসলিম পারস্পরিক সম্পর্কের ভেতর উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কথা প্রকাশিত হয়েছে।

রাজিয়া খানের ‘বটতলার উপন্যাস’-এ দেশভাগজনিত সংকট এবং উপমহাদেশের বিশাল ভৌগোলিক পরিসরে চরিত্রপাত্রের জটিল সমস্যার বিন্যাস দেখানো হয়েছে। মঈনের স্বদেশ উন্মূলিত বাস্তবতা দেশভাগজনিত। তার ব্যক্তিজীবনের স্বপ্ন, প্রেম, এমনকি পারিবারিক পরিবেষ্টনীকে বিপর্যস্ত করেছে দেশভাগ। শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিময় কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় স্থানান্তরিত হওয়ার পরও মঈন কলকাতার মেয়ে সুমিতার প্রতি গভীর অনুরাগ অনুভব করেছে। কিন্তু বিভিন্ন ঘটনাধারায় সেই অনুরাগ শেষ পর্যন্ত নতুন রাষ্ট্রের জটিল পরিস্থিতিতে শুভ পরিণতিতে উপনীত হতে পারেনি।

শহীদুল্লা কায়সারের ‘সংশপ্তক’ ১৯৩৮ থেকে ১৯৫১ কালপর্বের কাহিনী। দুটি গ্রাম বাকলিয়া ও তালতলী প্রধান হলেও কলকাতা ও ঢাকার পটভূমিও উপন্যাসটির ঘটনাধারায় বিস্তৃত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধোত্তর কলকাতার দাঙ্গা, দেশবিভাগের পর বাংলাদেশের স্বাধিকার অর্জনের পথপরিক্রমায় এগিয়ে গেছে ‘সংশপ্তক’-এর কাহিনী।

আরো পড়ুন ➥ সাহিত্যে নোবেল, প্রত্যাখ্যান ও কেড়ে নেওয়ার গল্প

সরদার জয়েনউদ্দীনের ‘অনেক সূর্যের আশা’ উপন্যাসের কাহিনী পরিব্যাপ্ত হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত। কবি রহমতের স্মৃতিকথার মধ্য দিয়ে দেশভাগ ও দেশবিভাগোত্তর পূর্ব বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতি উন্মোচিত হয়েছে। স্বপ্নের ভূখণ্ড পাকিস্তান সৃষ্টির পর পাকিস্তান আন্দোলনের অন্যতম সমর্থক হায়াত খাঁ টঙ্গী সোনারগাঁ জুট মিলে শ্রমিক ধর্মঘটে অংশগ্রহণকালে পাকিস্তানি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। অনেক সূর্যের প্রত্যাশায় লালিত ভূখণ্ডের এ বেদনার স্বরূপ নির্দেশের মধ্য দিয়েই উপন্যাসের সূচনা। দেশভাগের পর পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাঙালি মুসলমানের স্বপ্নকল্পনা ও ভাবাবেগ কিভাবে বারবার বিচ্যুত হয়েছে তারই পর্যায়ক্রমিক বর্ণনা উপন্যাসটির গভীরে প্রোথিত।

আবু জাফর শামসুদ্দীনের ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’র কাহিনী শেষ হয়েছে ১৯৪৭ সালে এসে। এরপরই দেশভাগ থেকে শুরু হয়েছে ‘সংকর সংকীর্তন’-এর ঘটনা। কলকাতা ও তার আশপাশের পটভূমিতে প্রধান চরিত্র মৌলভী কাজী আবদুর রশীদের জীবন চিত্রিত হয়েছে এখানে। তবে ফরাজি আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৪৭ সালের ভারতবিভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত এ উপন্যাসের ঘটনা। ব্রিটিশদের স্বার্থচালিত শোষণ-প্রক্রিয়া ও দ্বিজাতিতত্ত্ব উদ্ভাবনের মনস্তত্ত্ব বর্ণনা করেছেন ঔপন্যাসিক। মূলত ‘ভাওয়াল গড়ের উপাখ্যান’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’ এবং ‘সংকর সংকীর্তন’ এই তিনটি উপন্যাসে একটি পরিবারের যোগসূত্রে বাঙালি মুসলমানের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের আলেখ্য রচনা করেছেন আবু জাফর শামসুদ্দীন। সেলিনা হোসেনের ‘যাপিত জীবন’ ও তিন খণ্ডের ‘গায়ত্রী সন্ধ্যা’য় দেশভাগের প্রত্যক্ষ অভিঘাতের কথা বর্ণিত হয়েছে। অন্যদিকে ‘কাঁটাতারে প্রজাপতি’ উপন্যাসে ইলা মিত্রের সংগ্রামী জীবন ও তেভাগা প্রসঙ্গের রূপায়ণে পরোক্ষভাবে দেশভাগের প্রসঙ্গ রেখায়িত। মূলত ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত বিভিন্ন কালানুক্রমিক ঘটনাধারায় আমাদের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত মানসে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মানবতাবাদী আদর্শ এবং প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক জীবনবোধের বিকাশ ঘটে।

তিনটি স্মৃতিকথা

মিহির সেনগুপ্তের ‘বিষাদবৃক্ষ’, সুনন্দা শিকদারের ‘দয়াময়ীর কথা’ এবং সীমা দাশের ‘দ্যাশ থেকে দেশে’ বই তিনটিতে আমরা দেশভাগের স্মৃতি দেখতে পাই। বিষাদবৃক্ষ লেখার আগে মিহির সেন গুপ্ত আরো তিনটি বই লিখেছিলেন, যদিও তার কোনোটারই বিষয় দেশভাগ ছিল না। চতুর্থ বইতে রচনাশৈলীতে অবশ্য তাঁর পূর্ব-অভিজ্ঞতার ছাপ পাওয়া যায়। বরিশালের প্রান্তিক গ্রামে এক ক্ষয়িষ্ণু মধ্যবিত্ত পরিবারে লেখকের জন্ম। মিহির লিখেছেন, “আমার আলেখ্যর জন্যে সময়কাল হিসেবে আমি ন্যূনাধিক দশ বছরের মতো একটা পরিসর নিয়েছি। সেই দশ বছরের সময়কালটি উনিশশো একান্ন-বাহান্ন থেকে উনিশশো বাষট্টি-তেষট্টি পর্যন্ত বিসত্মৃত।” তাঁর বাড়ির পেছনদিকে ছিল একটা সরু খাল। “দুপাশের বাড়িঘর, আগান-বাগানের মাঝখান দিয়ে তার গতি লীন হতো গিয়ে বড় খালে। বড় খালটিও ওইরকমভাবে গিয়ে পড়ত নদীতে।” বাড়ির পেছনের এই ছোট খালটিকে লেখক তাঁর বরিশালি ভাষায় বলেছেন, ‘পিছারার খাল’। মিহিরের বর্ণনায়—“এই খালটি আমাদের বড় আত্মীয় ছিল।” এই পিছারার খালটিকে ঘিরে কতগুলো হিন্দু পরিবারের ক্রমবর্ধমান আর্থিক অবনতি, আঁকড়ে থাকা জমিদারি ঠাঁটবাট, সামাজিক উচ্ছৃঙ্খলা, মুসলিম তালুকদার ইত্যাদি শ্রেণির প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি মিহির বর্ণনা করেছেন। তিনি লিখেছেন, “মধ্যস্বত্বভোগীদের বিশেষত আমাদের পরিবারের বা তার থেকেও ক্ষুদ্র ভগ্নাংশে যেসব মধ্যস্বত্বভোগী আছে তাদের সমূহ সংকট। তাদের মধ্যস্বত্বের খাজনার পরিমাণের ব্যাপারটা অঙ্কে আসে না। কিছু খাসজমির উপজ তাদের বাঁচিয়ে রাখে।… এই খাসজমি যদি তারা নিজেরা চাষ করে তবুও কথা ছিল। কিন্তু তা কী করে হবে? তারা যে জমিদার। জমিদার জমি চষে না। প্রজাপত্তনির প্রজারাই তা চষে। জমিদার ফসলের ভাগ পায়। এই ব্যবস্থার জন্যে যখন প্রজাপত্তনি, মধ্যস্বত্ব যায় তখন খাসজমিও যাবার রাস্তা ধরে…।”

আরো পড়ুন ➥ সাহিত্যে জেনারেশন

লেখক সঠিকভাবেই অনুধাবন করেছেন পূর্ববাংলায় দেশভাগের পক্ষে বাতাবরণ তৈরির মূলে ছিল জমিস্বার্থ। জমির মালিকানার হ্রাস-বৃদ্ধি যে কিভাবে পূর্ববাংলার হিন্দু ও মুসলিম মানসিকতা প্রভাবিত ও চালিত করেছিল তার যথাযথ বিবরণ আছে মিহিরের বিষাদবৃক্ষে। তিনি লিখেছেন, “পিছারার খালের চৌহদ্দিতে যেমন, গোটা পূর্ব বাংলায়ও তেমনি, সামন্তশ্রেণী বলতে হিন্দু সামন্তদেরই সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। কিন্তু তা ছিল মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণীর সামগ্রিক হিসেবে। তার অর্থ এই নয় যে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে জমিদার বা অন্য মধ্যস্বত্বভোগীরা সাধারণ এইসব মানুষকে শোষণ বা নির্যাতন করত না। আমার পরিমণ্ডলে আমি অনেক তথাকথিক তালুকদার দেখেছি যারা সাম্প্রদায়িকভাবে মুসলমান এবং শ্রেণীশোষণ বা নির্যাতনে ওখানকার হিন্দু জমিদার বা তালুকদারের তুলনায় কিছুমাত্র ভিন্ন নয়। সেক্ষেত্রে লিগপন্থীরা সাধারণদের বুঝিয়েছিল যে পাকিস্তান কায়েম হলে সামন্ততন্ত্র উচ্ছেদ হবে এবং অবস্থাপন্নদের সংযত রাখার জন্যে ইসলামি বিধি মতে ‘জাকাত’, ‘খয়েরাত’ ইত্যাদি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু পাকিস্তান কায়েম হবার পর এমনকি মধ্যস্বত্ব প্রথা উচ্ছেদ হবার পরও এই প্রতিজ্ঞা পালনের কোনো প্রচেষ্টাই হয়নি। না হওয়ার কারণটিও অবশ্য শরিয়তি ব্যবস্থার অন্তর্গত, অন্যের ‘হক্কের সম্পত্তি’ দখল করা না-জায়েজ, হারাম—এমত নির্দেশ। সে সম্পত্তি হিন্দুর হলে জায়েজ এবং মুসলমানের হলে না-জায়েজ, এসব বিতর্কে তখন অন্তত কেউ যাননি…।”

আরেক জায়গায় মিহির লিখেছেন, “আশেপাশের মুসলমান গ্রামগুলিতে যথেষ্ট উচ্চবিত্ত মুসলিম পরিবার বিশেষ ছিল না। মাঝারি মাপের যারা তারাই এখন সব ছেড়ে যাওয়া হিন্দুদের সম্পদ নিয়ে নিজেদের ঘর এবং জীবন সাজাতে চেষ্টা করছে। এই সময়টা থেকে বড়, মাঝারি এবং কিছু ছোট কৃষক পরিবারও ছেড়ে যাওয়া হিন্দুদের সম্পত্তির পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনায় বেশ সচ্ছল হয়ে ওঠে। রাতারাতি তাদের বাড়ি-ঘরদোরের চেহারা বদলে যেতে থাকে এবং তারা বেশ হোমড়াচোমড়া হয়ে দাঁড়ায়।” অন্যদিকে, “পিছারার খালের আশেপাশের হিন্দু সমাজটি তখন একেবারেই ভেঙে গিয়েছিল। ফলে অবশিষ্ট হিন্দু অধিবাসীদের মধ্যে একটা নৈতিক অধঃপতন আস্তে আস্তে পরিলক্ষিত হতে থাকে। পারিবারিক শাসন আলগা, অভিভাবকেরা উদাসীন, ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই, বিবাহের বয়স অতিক্রান্ত মেয়েদের বিয়ে-থা দেওয়া হচ্ছে না। সে এক মাৎস্যন্যায়ী অবস্থা।”

বিদ্বজ্জনরা বিভিন্ন নিবন্ধে দেখিয়েছেন, পূর্ববাংলায় নিম্নবর্গীয় ও নমঃশূদ্ররা বরাবরই ছিল একটি দোদুল্যমান শ্রেণি। নিম্নবর্গীয় পরিচিতি সত্তা হিন্দু বা মুসলিমের সত্তা থেকে স্বতন্ত্র—এরকম একটা বোধ বরাবরই তাদের মধ্যে অটুট ছিল। তারা কখনো দাঁড়িয়েছে মুসলিমদের পাশে, কখনো হিন্দুদের। দেশভাগের প্রাক্কালে মুসলিম লিগের বন্ধু হিসেবে যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল হয়ে উঠেছিলেন নমঃশূদ্রদের অবিসম্বাদী নেতা। পরবর্তীকালে জিন্নাহর প্রথম সরকারে পূর্ববাংলা থেকে আমন্ত্রিত একমাত্র কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। ১৯৫০ সালেই অবশ্য যোগেন্দ্রনাথ জিন্নাহর মন্ত্রিসভায় তিনি যে কতটা অবহেলার পাত্র তা বুঝে যান এবং একটি দীর্ঘ পদত্যাগপত্র লিখে ভারতে চলে আসেন। তা সত্ত্বেও অনেকদিন পর্যন্ত নিম্নবর্গীয়দের ধারণা ছিল, মুসলিম দাঙ্গাবাজরা তাদের স্পর্শ করবে না। কিন্তু যেখানে জমিস্বার্থই প্রধান এবং রাষ্ট্র যখন সরাসরি মদদ ও প্রশ্রয় দিচ্ছে তখন নিজেদের আর কতদিন নিরাপদ রাখা সম্ভব।

আরো পড়ুন ➥ স্ট্রিট লিটারেচার

নিম্নবর্গীয়দের ওপর আক্রমণ মিহিরবাবু প্রত্যক্ষ করেছেন পঞ্চাশের দশকের শেষে। তিনি লিখেছেন, “আটান্ন-ঊনষাট সাল। পিছারার খালের আশেপাশের ভদ্র হিন্দু গেরস্তরা প্রায় শতকরা নিরানব্বই ভাগ তখন গ্রাম ত্যাগ করেছেন। শুধুমাত্র নিরুপায় হয়ে কিছু ভদ্র হিন্দু এবং নিম্নবর্ণীয়রা, যুগী, নাপিত, ধোপা, কামার, কুমোরেরা গ্রামে রয়ে গেছে। নিম্নবর্ণীয়দের তখনও ভরসা আছে যে মুসলমান শাসকশ্রেণী তাদের উপর আঘাত হানবে না।… পরে আর নিম্নবর্ণীয় বা বর্গীয় হিন্দু-মুসলমানদের অভিন্ন স্বার্থের কথা ক্ষমতাসীন কায়েমি স্বার্থান্বেষী সংখ্যাগুরু সাম্প্রদায়িকদের মনে থাকে না।… উচ্চবর্গীয়দের সম্পত্তি দখল হলে তাদের নজর পড়ে অপবর্গীয়/ বর্ণীয়দের গেরস্থালিতে। অতএব দখলকারিরা কায়দা পাল্টাতে শুরু করে।… তাঁতি বা যুগীদের ভিটেমাটি দখল শুরু হয়।… তখন আমাদের সংহতি সংগীতের সেইসব পংক্তিগুলো হারিয়ে যেতে থাকল—হিন্দু ও মুসলিম এক পরানেরআমরা করি না বিবাদ…।”

একটি ন্যায্য প্রশ্ন হলো, মিহির তাঁর এই বইয়ের নাম বিষাদবৃক্ষ রেখেছেন কেন? যে-পিছারার খালের বর্ণনা দিয়ে তিনি তাঁর লেখা শুরু করেছিলেন তার পাড়ে আছে একজোড়া রেন্ট্রি গাছ—লেখকের ভাষায় একত্রে সেই মহাবৃক্ষ বহু ইতিহাসের সাক্ষী। এই বৃক্ষের নিচে একদা সুভাষচন্দ্র বসু এসেছিলেন। হিন্দু-মুসলিম বা নিম্নবর্গীয়দের বহু গান, কথকতা, যাত্রাপালার আসর বসত ওই বৃক্ষের আশপাশে, তারপর দেশভাগ হলো, একে একে চলে যেতে লাগল হিন্দুরা, সেই মর্মান্তিক ঘটনারও সাক্ষী ওই মহাবৃক্ষ। হিন্দুরা চলে যাওয়ার ফলে সেই পিছারার খাল আর বড় খালের দুই পাড়ে সৃষ্টি হলো এক বিশাল শূন্যতা। “সেই শূন্যতা আমি স্বয়ং উপলব্ধি করেছি, উপলব্ধি করতে দেখেছি ওখানে থেকে যাওয়া হিন্দুদের এবং মুসলমানজনেদেরও। এমনকি যারা হিন্দুদের দেশত্যাগজনিত কারণে সমূহ লাভবান, তাদের বাড়ির যুবজনেরা বা মেয়েরা এই শূন্যতার কারণে যে নিদারুণ কষ্ট ভোগ করত তাও তো দেখেছি। এই শূন্যতা ভরাট করার উপায় এখানের মুসলমান সমাজের মানুষদের তখন ছিল না। পিছারার খালের আবেষ্টনীর মুসলমান এবং তফসিলিভুক্ত মানুষের মধ্যে কোনো মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অস্তিত্ব ছিল না। যা দু-একজন এই শ্রেণীচরিত্রের ছিলেন, তারা শ্রেণী গঠন করেননি, শুধুই মধ্যবিত্ত হিসেবে স্ব-স্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে তাদের প্রভাব প্রতিপত্তির ফয়দা তুলেছেন। মধ্যবিত্তশ্রেণী বলতে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভদ্রবাবুরাই ওখানে সমাজের স্তম্ভ এবং এ কারণেই তাদের দেশত্যাগ এই বিরাট শূন্যতার বাতাবরণ তৈরি করেছিল।”

এই সাংস্কৃতিক শূন্যতার বিষয়টি কোনো দেশভাগের ইতিহাস বইতে পাওয়া যাবে না। এই শূন্যতা কোনো সংবেদনশীল হৃদয় ছাড়া অনুভব করা অসম্ভব। এটাই একটা স্মৃতিকথার সাফল্য এবং হয়তো এ-কারণে তা অনেক গুরুত্বপূর্ণও বটে। আরো বোঝা যায়, লেখক পূর্ববাংলাকে ভালোবেসেছিলেন সেখানকার একজন মানুষ হিসেবে, হিন্দু-মুসলমান সহাবস্থান ধরে নিয়েই। সে-কারণেই ওই শূন্যতা তাঁর চোখে প্রকট হয়ে উঠেছিল। বিষাদবৃক্ষ হলো আসলে সেই শূন্যতারই কাহিনী। দয়াময়ীর কথা একটি অসম্ভব সুন্দর, সম্পূর্ণ ব্যাকরণসম্মত স্মৃতিকথা হলো সুনন্দা শিকদারের ‘দয়াময়ীর কথা’। ব্যাকরণসম্মত এই অর্থে যে, লেখক এখানে শুধু আদ্যোপান্ত স্মৃতিচারণই করেছেন—জিন্নাহ, নেহরু, কংগ্রেস বা মুসলিম লিগ প্রসঙ্গ তাঁর রচনায় একবারও আসেনি। দয়ার জন্ম ১৯৫১ সালে ময়মনসিংহের দিঘাপাইত গ্রামে। ১৯৬১ সাল পর্যন্ত দশ বছর তিনি কাটিয়েছেন ওই প্রত্যন্ত গ্রামে। দয়ার কৃতিত্ব এই যে, পরিণত বয়সে নিজের আত্মকথা লেখার সময়েও তিনি তাঁর বোধবুদ্ধি ও সারল্য দিয়ে সেই দশকটিকে বিচার করেছেন। নিঃসন্দেহে দয়াময়ীর কথা পঞ্চাশের দশকের পূর্ববাংলার একটি ঐতিহাসিক দলিল হয়ে থাকবে। লক্ষ করার মতো, লেখিকার ক্ষোভ বারবার ফুটে উঠেছে সে-যুগের হিন্দু ভদ্রলোকদের সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে। যেমন “আমার পালিকা মায়ের কথা আমার কাছে ছিল যেন নিয়তির বাণী।”, “দয়া ভুইল্যা যাইও না মাজম আমাদের কামলা, মোসলমানের পোলা, গরু-বাছুর, খ্যাত-খামার দেখনের মানুষ, তোমার রক্তের সম্পক্কের কেউ না। মিলন-মিশনের কাম নাই।” এই হলো এক হিন্দু উচ্চবিত্ত মহিলার অন্তরের কথা। আর তাঁর প্রজা দরিদ্র বর্গাচাষি মাজম ফজরের নামাজের সময় বলে, “ও মা, দয়া তুই কি পাগুলনি; আল্লাহর সঙ্গে দুগ্গা-লক্ষ্মীর কুন কাজিয়া নাই। বেহেস্তে সগ্গলের মধ্যে ভাব-ভালোবাসা, কুন কাজিয়ার জায়গা নাই। ওইসব মাইনষে করে।” দয়াময়ীর কথা পড়লে বোঝা যায় সে-সময়ের পূর্ববাংলার প্রান্তিক গ্রামগুলোতে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ তেমন তীব্র ছিল না। দাঙ্গা, খুন-খারাবিও নয়। সাধারণ কিছু ছোঁয়াছুঁয়ির সমস্যা বাদ দিলে দুই সম্প্রদায়ের সম্প্রীতি অটুট ছিল। তবু বহু হিন্দু দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন। দিঘাপাইত গ্রামটা ছিল শান্ত। কোনো দাঙ্গা-হাঙ্গামা নেই। তবু চারিদিকে যে একটা অশান্তির হাওয়া বইছে তা ওই নিস্তরঙ্গ গ্রামে বসেও টের পাওয়া যেত। সুনন্দা শিকদার লিখেছেন, “বড় তাড়াতাড়ি পাল্টে যাচ্ছে চারিদিকের দৃশ্যপট।… পলুদাদের বাড়িটা কি তাড়াতাড়ি ভিটে হয়ে গেল। চলে গেল গরুর গাড়িতে করে থালাবাসন, কাঁঠাল গাছের পিঁড়ি, পোঁটলায় ভর্তি চিড়ে-মুড়ি, ট্রাঙ্ক, শতরঞ্চি দিয়ে বাঁধা বিছানা-বালিশ।… চোখ মুছতে মুছতে কেউ যেতেন, কেউ আবার চিৎকার করে বলতে বলতে যেতেন—‘ও গো চলি জন্মের মতন, যদি কোনো অপরাধ কইরা থাকি মাপ কইরা দিও।’ রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে প্রায় প্রতিদিন এই দৃশ্য দেখতাম। অনেকে আবার বলতেন, ‘ওরে বুড়ি যাইতেছি সারা জীবনের মতো। গাঁওয়ের কারো সঙ্গে তো আর দেখা হইব না। হিন্দুস্থানে গেলে তুই দেখা করিস।”

আরো পড়ুন ➥ তবু সে দেখিল কোন ভূত

কোনো সন্দেহ নেই যে, দুই বাংলাজুড়ে লাখ লাখ মানুষের এই আকস্মিক বিচ্ছেদই হলো বঙ্গবিভাজনের অন্যতম ট্র্যাজিক পরিণতি। সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ না থাক, ছোঁয়াছুঁয়ির সতর্কতা ছিল তীব্র। দয়াময়ীর কথায় তার অজস্র নিদর্শন আছে, “মাকে সিরাজদা একটা কথা বলত, তোমারও পিসিমা কম না। এতকাল তোমাগো সঙ্গে আমাগো সম্পক্ক, তাও তোমারে ছুঁইলে তোমাগো জাত যায়। দয়া একটা ছুট পোনাই, অরে কারো সঙ্গে মিলবার দেও না। তোমাগো ঘরবাড়ি পুড়ল, দ্যাশ ছাইড়ত্যাছো, কিন্তু জেদটা ঠিক পুইস্যা রাখছো।… রাগ কইরো না পিসিমা, অনেক দুঃখে এই কথা কইলাম। তুমি আমারে ঘরে ডাইক্যা কোনোদিন এক গিলাস পানি খাওয়াইছো?”

সুনন্দা শিকদারের মতে, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও বঙ্গবিভাজনের মূলে আছে ওই ছোঁয়াছুঁয়ির সমস্যা। হিন্দুদের শরীর মুসলমানে স্পর্শ করলে হিন্দুদের জাত যায়। এর অর্থ হিন্দু ও মুসলমান দুটি আলাদা জাতি। এসে যায় জাতিবিরোধ। এই বিরোধে হিন্দুরাই যে সেই সময় হয়ে পড়েছিল দুর্বল প্রতিপক্ষ, সেকথা সবাই জানে। সে-কারণেই তো দলে দলে হিন্দুদের দেশত্যাগ। কিন্তু হিন্দুরা কি ছিল একেবারেই নির্দোষ, অবলা একটি জাতি! বিষয়টি সহজভাবে ব্যাখ্যা করেছেন সুনন্দা শিকদার তাঁর সোবহান দাদার মুখ দিয়ে, “নোয়াখালিতে হিন্দুদের ওপর মুসলমানেরা ভীষণ অত্যাচার আর জুলুমবাজি করেছে। হিন্দু মেয়েদের অপমান করেছে। তবে দীর্ঘকাল ধরে মুসলমানদের এত অপঘিন্না হিন্দুরা করেছে তারও তুলনা নেই।… হিন্দুরা কুনদিন মুসলমানদের ঘরে ঢুকতে দেয় নাই। ছুঁইলে জাত যায়। আলাদা হুঁকা, আলাদা বাসন। মুসলমান মেহমানেরে বাইরে বসাইয়া খাওয়ায়। অনেক বছর ধইরা এই ভুলগুলা হিন্দুরা করছে। তবে যেভাবে মোসলমানেরা শোধ তুলতাছে, এইডা কিন্তু আমাগো পছন্দ না।”

‘দ্যাশ থেকে দেশে’ স্মৃতিকথা হিসেবে সার্থক ঠিকই কিন্তু বইটিকে দেশভাগ বিষয়ক স্মৃতি আলেখ্যগুলোর তালিকায় স্থান দেওয়া উচিত কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। সম্পূর্ণ বইটি তিনটি আলাদা খণ্ডে বিভক্ত। এর মধ্যে দেশভাগ ও দেশত্যাগের যাবতীয় স্মৃতি সংকলিত হয়েছে দ্বিতীয় খণ্ডে যার নাম ‘দ্যাশ থেকে দেশে আসার বৃত্তান্ত’। এই খণ্ডটি মোট দুশো পাতার বইতে দখল করেছে মাত্র ছাব্বিশ পৃষ্ঠা। অর্থাৎ দেশভাগ এই লেখিকাকে শৈশবে যতটা আলোড়িত করেছিল পরবর্তীকালে তার রেশ আর তেমন তীব্র ছিল না। এই বইটি আরো এক বিচারে পূর্বে আলোচিত দুটি বইয়ের থেকে আলাদা। তা হলো, আগের দুটি বই পড়লে বোঝা যায় তাদের লেখক-লেখিকাদের মনে দেশভাগজনিত বিষণ্ণতা একটা স্থায়ী রূপ নিয়েছে। কিন্তু আলোচ্য বইয়ের লেখিকা সীমা দাশ কলকাতায় এসে আরো বৃহৎ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন এবং আরো অনেক নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন, যেগুলো তাঁর দেশত্যাগের বেদনা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে। সম্ভবত সেটাই বাঞ্ছনীয়। তাই অতীতচারণ করতে গিয়ে তিনি পূর্ববাংলার জীবনকে যতটা গুরুত্ব দিয়েছেন, কলকাতার গণনাট্য সংঘ, সলিল চৌধুরী, দেবব্রত বিশ্বাস ইত্যাদি স্বনামধন্য চরিত্রও সেখানে সমমর্যাদা পেয়েছে। দ্যাশ থেকে দেশে তাই আদ্যোপান্ত একটি স্মৃতিকথা হলেও পুরোপুরি দেশভাগ বিষয়ক স্মৃতিকথা নয়। আরো একটি বিষয় অবাক করার মতো। লেখক যতদিন পূর্ববাংলায় ছিলেন (শৈশব), কোনো মুসলমান চরিত্র তাঁর সেই শৈশবের স্মৃতিতে নেই। সীমা দাশের জন্ম পটুয়াখালীতে ১৯৩৮ সালে। বাংলার বিভাজনপূর্ব রাজনীতিতে পটুয়াখালী একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। তার এক বছর আগে ১৯৩৭ সালে এই পটুয়াখালী আসনে মুসলিম লিগ নেতা ঢাকার নবাব নাজিমুদ্দিনকে পরাজিত করেছিলেন সদ্য গঠিত কৃষক প্রজাপার্টির নেতা ফজলুল হক। শুধু বাংলা নয়, সারা ভারতের দৃষ্টি ছিল পটুয়াখালীর দিকে। এই নির্বাচনে জিতে হক সাহেব বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন। শুধু তাই নয়, তাঁর জয় প্রমাণ করে দিয়েছিল বাংলার রাজনীতিতে নেতা নির্বাচন বা বর্জনের ক্ষেত্রে কৃষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলার ব্রিটিশ গভর্নর অ্যান্ডারসন নিজে নাজিমুদ্দিনের হয়ে প্রচার করে তাঁকে জেতাতে পারেননি। এসব ঘটনা সীমা দাশের বাবা, কাকা বা পড়শিজনদের মধ্যে কেমন প্রভাব ফেলেছিল তা এই স্মৃতিকথাটি পড়লে বোঝা যায় না। লেখিকার জন্ম একটি সংগীতমগ্ন, সংস্কৃতিমনা পরিবারে। বিভিন্ন রাগ-রাগিণীর চর্চা, প্রয়োগরীতি ইত্যাদি এই স্মৃতিকথায় উঠে এসেছে বারবার। আবার লেখিকা ১৯৪৬ সালের দাঙ্গার স্মৃতি উল্লেখ করেছেন, “মাঝরাতে হঠাৎ দূর থেকে ভেসে আসছে কোলাহল চিৎকার—আল্লা হো আকবার ধ্বনি।… আমাদের পাড়াটায় সবাই হিন্দু।… দূর থেকে তারা দেখতে পায় আগুন যেন আকাশ ছুঁতে চলেছে। এরই মধ্যে শোনা যায় দুরকম ধ্বনি—‘বন্দে মাতরম’, ‘আল্লা হো আকবর’… বাড়ির উঠোনে তখনও তীর, ধনুক, লাঠি, ইট, বালি পড়ে। এই আগুন জানিয়ে গেল ভেতরে ভেতরে হিন্দু মুসলমান একে অপরের প্রতি বিশ্বাস হারিয়েছে।”

আরো পড়ুন ➥ সাহিত্যে যৌনতা

এই দাঙ্গার পর তাঁদের পরিবারটি আর বেশিদিন পূর্ববাংলায় থাকেনি। বোঝাই যায় ওই দাঙ্গা সেই শান্তিপ্রিয়, সংগীতপ্রেমী পরিবারটির অন্তঃস্থলে বিরাট ধাক্কা দিয়েছিল, পুড়ে গিয়েছিল তাঁদের দোকানটিও। সীমা দাশের বাবা তখন থেকেই কলকাতায় চাকরির সন্ধান শুরু করে দেন। এরপর আসে দেশত্যাগের গল্প। তার আগে অবশ্য লেখিকা স্বাধীনতা ও দেশভাগের দিনটি বর্ণনা করেছেন এভাবে, “স্বাধীনতার দিন বাড়িতে দুরকমের পতাকা টাঙানো হয়েছিল। একটা পাকিস্তানের অন্যটা কংগ্রেসের।… মুসলমান পাড়ার তুলনায় এ সাজ জৌলুসহীন, ওদের ওখানে কোনো কংগ্রেসের পতাকা নেই। কেবল শ’য়ে শ’য়ে জিন্নাহর ছবি। দূরে মুসলমান পাড়ায় আমরা ছোটরা কয়েকজন হাঁটতে হাঁটতে গেছি। ওরা কী করছে দেখি গে। ওদের টানাটানি, আপ্যায়নের ঠেলায় আমরা তো অস্থির। প্যাকেট প্যাকেট মিঠাই, তবক দেওয়া সব মুসলমানি মিষ্টি। তখন ছোট হলেও মনে সুখ পাচ্ছি না। যেন হেরে গেছি আমরা।”—এখানে লেখকের সরল সত্য ভাষণে দুটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ হয়ে পড়েছে। প্রথমত, দেশভাগ হওয়ামাত্রই যে মুসলিমরা হিন্দু বিতাড়নে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল তা নয়। দুটি আলাদা সম্প্রদায় হিসেবে চিহ্নিত হলেও বিদ্বেষ তখনও ছিল না। যা এসেছে পরে, বিভিন্ন সামাজিক শক্তির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায়। দ্বিতীয়ত, লেখক মনে সুখ পাচ্ছিলেন না। তাঁর মনে হচ্ছিল তাঁরা হেরে গিয়েছেন। কেন এই পরাজয় বোধ? এই বোধের উত্তর কোনো স্মৃতিকথাতেই নেই। কিন্তু নিঃসন্দেহে এই পরাজয়ের পীড়নই ছিল অন্তত প্রথম পর্যায়ে দেশত্যাগের আসল কার্যকারণ। এই দেশত্যাগের বিষণ্ণতা সবার জন্যই একরকম, “সবার চোখে জল। কেউ বলে আবার আইস্যো। কেউ বলে আমাদের ভুলবা না তো। গিয়াই পত্র দিও। সবার কান্না দেখে মনটা হু হু করে ওঠে।” পরে আবার, “সব ছবি হয়ে যাচ্ছে, স্মৃতি হয়ে যাচ্ছে,… ওই তো দূরে স্টিমার ঘাট, ওই তো পাবলিক থিয়েটার হল, ওই তো বাজার, ওই আদালত, পোস্টাপিস, কালীবাড়ি, ওই তো ওখানে সতীন সেনের বাড়ি।… আমরা আবার আসুম। মায়ের চোখেও জল।”

এই তিনটি স্মৃতিকথারই লেখক-লেখিকারা হিন্দু মধ্যবিত্ত সমাজের প্রতিনিধি এবং তিনটি রচনারই মূল সুর একটাই, দেশভাগ না হলেই ভালো হতো। কিন্তু একথা তো ঠিক, পূর্ববাংলার দরিদ্র মুসলিম কৃষকরা সর্বাত্মঃকরণে দেশভাগ চেয়েছিলেন। পাকিস্তান নামে একটি নতুন রাষ্ট্রের তাঁদের কাছে কোনো তাৎপর্য ছিল না। তাঁরা ভেবেছিলেন, পাকিস্তান হলে বুঝি জমিদারি উচ্ছেদ ও তাঁদের দারিদ্র্যের অবসান হবে। অর্থাৎ কৃষকদের বিদ্রোহের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল পাকিস্তানপ্রাপ্তি। এর জন্য কৃষকদের দায়ী করা যায় না, দায়ী হলো তারা, যারা কৃষকদের সামনে সেই মরীচিকা তুলে ধরেছিল। দেশভাগ হলো আসলে সেই মরীচিকার কাহিনী আর ওপরে বর্ণিত স্মৃতিকথাগুলো হলো তার উপকাহিনী বা শাখা-প্রশাখামাত্র। আমাদের প্রার্থনা ও লক্ষ্য হওয়া উচিত এহেন মরীচিকার মায়াজালে জড়িয়ে হিন্দু বা মুসলিমরা যেন আর বিপথগামী না হয়। (তথ্যসূত্র: তিনটি স্মৃতিকথা ও দেশভাগ: গৌতম রায়)

দেশভাগের কারণ খুঁজেছেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকেও ভারত থেকে বাংলাদেশে আসতে হয়েছে। তাঁর বন্ধু জয়ন্তানুজ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যেতে হয়েছে। দুই বন্ধুর বিচ্ছেদও লেখায় এসেছে। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী দেশভাগের কারণ খুঁজেছেন তার লেখায়। তার একটি লেখার শিরোনাম, ‘১৯৪৭ ট্র্যাজেডির অগ্রপশ্চাৎ’। তার বিশ্লেষণ এমন:
আধুনিক ভারতবর্ষের ইতিহাসে দুটি ট্র্যাজেডি খুবই ভয়ঙ্কর: একটি ঘটেছে ১৮৫৭ সালে, আরেকটি ১৯৪৭-এ। একটি অন্যটির সঙ্গে যুক্ত। মাঝখানে আছে স্বাধীনতাসংগ্রামের মহাকাব্য, কিন্তু সে সংগ্রামের পরিণতি মহাকাব্যিক হয়নি, হয়েছে ট্র্যাজিক। ১৯৪৭ সালের ১৪-১৫ আগস্টে যে ঘটনাটা ঘটল, আপাতদৃষ্টিতে তা ছিল প্রায় অসম্ভব এবং পুরোপুরি অকল্পনীয়। কেউ ভাবেনি এমনটি ঘটবে। স্বাধীনতার নামে যে ডমিনিয়ন স্ট্যাটাস পাওয়া যাবে, এবং ভারতবর্ষ যে অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার মতো ডমিনিয়ন হয়ে ব্রিটিশ কমনওয়েলথের ভেতরেই রয়ে যাবে, এটা মোটামুটি জানা ছিল। কংগ্রেস ও লিগ এ ব্যাপারে সম্মত ছিল; কিন্তু দেশভাগ ঘটবে, বাংলা ও পাঞ্জাব দু-টুকরো হয়ে দুটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের অংশ হবে—এটা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।

মুসলিম লীগ যা চেয়েছিল, সেটা হলো মুসলমানদের অন্য একটি স্বতন্ত্র আবাসভূমি, তার জন্য যে দেশভাগ প্রয়োজন হবে, এটা তারা ভাবেনি। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তারা যে ক্যাবিনেট মিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী একটি ঢিলেঢালা কেন্দ্রের অধীনে তিনটি ভৌগোলিক গ্রুপ তৈরির ধারণাটাকে গ্রহণ করেছিল, তার পেছনে এই বোধ কার্যকর ছিল, এর বেশি পাওয়া যাবে না। কংগ্রেস সেটা মানতে রাজি হয়নি। কারণ তাদের বক্তব্য ছিল, ভারতবর্ষ এক জাতির দেশ; এবং তাকে কোনো রকমেই বিভাজিত করা চলবে না। তবে দুই পক্ষই আবার এই ব্যাপারে একমত ছিল যে প্রদেশগুলোকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়া যাবে না, রাষ্ট্র থাকবে এককেন্দ্রিক; বিরোধটা ছিল এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রে ক্ষমতা কিভাবে ভাগ করা যায়, তা নিয়ে। জওহরলাল নেহরু ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কেউই প্রাদেশিক নেতা হতে চাননি, চেয়েছেন সর্বভারতীয় কর্তা হবেন।

আরো পড়ুন ➥ চে, বিপ্লব ও বাজার

ওই যে এক জাতির দেশ বলে দাবি করা—এর ভেতরেই কিন্তু লুকিয়ে ছিল সাতচল্লিশের দেশভাগের বীজ। কারণ এক জাতির দেশ বলার অর্থ দাঁড়িয়েছিল হিন্দুদের দেশ বলা। আসলে ভারতবর্ষ তো কখনোই এক জাতির দেশ ছিল না, ছিল বহু জাতির দেশ; আর সে জাতীয়তার ভিত্তি ধর্ম নয়, ভাষা। সে হিসাবে ১৯৪৭-এ ভারতবর্ষে একটি-দুটিও নয়, সতেরোটি জাতি ছিল। ভারতবর্ষের মানুষের জন্য প্রধান সমস্যাটা ছিল শ্রেণির। কিন্তু কংগ্রেস ও লিগ কেউই শ্রেণি সমস্যার সমাধান চায়নি। দুই দলই ছিল বিত্তবানদের সংগঠন। তারা চেয়েছে ইংরেজ শাসকেরা তাদের কাছে শাসনক্ষমতা হস্তান্তর করে চলে যাবে, এবং তারা গদিতে বসে পড়ে ঠিক সেভাবেই দেশ শাসন করবে, যেভাবে ইংরেজরা করেছে। শাসন মানে আগের মতোই দাঁড়াবে শোষণ। শ্রেণিবিভাজনের সমস্যা সমাধান করতে হলে সমাজ বিপ্লবের প্রয়োজন ছিল; সেটা কংগ্রেস ও লিগ কেউ চায়নি; ইংরেজরা তো চায়ইনি। ইংরেজরা চেয়েছে তাদের আনুকূল্যে তৈরি বিত্তবান তাঁবেদার শ্রেণির হাতে ক্ষমতা দিয়ে চলে যাবে, যাতে তাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ অক্ষুণ্ন থাকে।

দেশভাগ হয়েছে এই তিন পক্ষের আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে। মেহনতি মানুষ এর ধারেকাছেও ছিল না। বড়লাট মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে কংগ্রেস ও লিগের নেতাদের দর-কষাকষি চলেছে। জিন্নাহ ও নেহরুর সঙ্গে বড়লাট মাউন্টব্যাটেনের সম্পর্ক দাঁড়িয়েছিল সৌহার্দ্যপূর্ণ। নেহরুর সঙ্গে তো সম্পর্কটা বন্ধুত্বের পর্যায়েই চলে গিয়েছিল। এই বন্ধুত্ব বড়লাটের স্ত্রী পর্যন্ত গড়িয়েছিল। নেহরু-জিন্নাহর কলহটা ছিল পৈতৃক সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়ার মতো। বাগ্বিতণ্ডা চলল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুই ভাই-ই মেনে নিলেন যে ক্ষমতার ভাগটা দেশভাগ ছাড়া সম্ভব নয়। ফলে অবিশ্বাস্য ঘটনাটি ঘটে গেল।

আরো পড়ুন ➥ সাহিত্যে জ্বলে নেভে ফ্যাসিস্ট ও বিপ্লবীর চরিত্র

ক্ষতি বিত্তবানদের হয়নি। ক্ষতি হয়েছে সাধারণ মানুষের। ঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি, তবে ধারণা করা হয়, ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ শরণার্থী হয়েছে। দাঙ্গায় প্রাণ হারিয়েছে কমপক্ষে ৫ লাখ। এত বিপুলসংখ্যক মানুষের দেশত্যাগের ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। অর্থনৈতিক অবকাঠামোর ক্ষতিটা অপূরণীয়। সাংস্কৃতিক ক্ষতির হিসাব করা যায়নি, যাবেও না। অথচ মূল যে সমস্যা—যেটা হলো শ্রেণিবিভাজনের—তার কোনো সমাধান ঘটল না। ধনী-গরিবের পার্থক্য আগের মতোই রয়ে গেল। উন্নতি যা হলো তা বিত্তবানদের, সেই উন্নতির বাহক হয়ে থাকল মেহনতি মানুষ, আগে যেমন ছিল। শ্রেণি সমস্যার সমাধানের চেষ্টা সমাজতন্ত্রীরা করেছিলেন। তাঁরা সংগ্রামে ছিলেন। কিন্তু নেতৃত্ব চলে গিয়েছিল দুই দিকের দুই জাতীয়তাবাদী দলের হাতে। যারা ছিল পুঁজিবাদে দীক্ষিত, এবং সমাজতন্ত্রবিরোধী। বস্তুত দেশভাগে তড়িঘড়ি সম্মত হওয়ার পেছনে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা তো ছিলই, আরো বড় করে ছিল সমাজবিপ্লবের ভয়। হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গার একটা মীমাংসা সম্ভব, কিন্তু বিপ্লবী অভ্যুত্থান ঘটলে সবকিছু তছনছ হয়ে যাবে—ছালা তো যাবেই, আমও হাতছাড়া হবে। অতএব যা পাওয়া যায়, তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকা ভালো। অস্পষ্টভাবে হলেও নেহরু-জিন্নাহরা জানতেন, ইংরেজের সঙ্গে দর-কষাকষি সম্ভব, কিন্তু মেহনতিরা উঠে এলে কোনো আলাপই চলবে না। তাঁরা জানতেন, ইংরেজ তাঁদের শত্রু বটে, তবে আরো বড় শত্রু হচ্ছে স্বদেশি মেহনতি মানুষ। এর প্রমাণ সুন্দরভাবে পাওয়া গেছে ‘স্বাধীনতা’র পরে। ভারতে কংগ্রেসবিরোধী মুসলিম লীগ নিষিদ্ধ হয়নি, যেমন পাকিস্তানে নিষিদ্ধ হয়নি লিগবিরোধী কংগ্রেস; কিন্তু উভয় রাষ্ট্রেই নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল কমিউনিস্ট পার্টি।

শ্রেণি সমস্যা আড়াল করার জন্যই কিন্তু জাতি সমস্যাকে প্রধান করে তোলা হয়েছিল। এবং জাতীয়তার মূল ভিত্তি যে ভাষা, সেটাকে অস্বীকার করে ধর্মকে নিয়ে আসা হয়েছিল সামনে। ফলে সম্প্রদায় জাতি হয়ে গেল, জাতি রয়ে গেল আড়ালে। কংগ্রেস বলল, দেশটা এক জাতির, লিগ বলল, সেটা সত্য নয়, দেশ দুই জাতির। এক ও দুইয়ের হট্টগোলে সতের জাতি হারিয়ে গেল। কমিউনিস্ট পার্টি সতের জাতির কথা বলেছিল, কিন্তু কংগ্রেস ও লিগের যৌথ তৎপরতার কারণ ওই সত্যটিকে সামনে নিয়ে আসতে পারেনি।

   

নারীর পোশাক, নারীর ইচ্ছে হয়ে থাক—এই ভাবনায় ১৩ লেখিকার বই ‘শাড়ি’



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
‘নারীর পোশাক, নারীর ইচ্ছে হয়ে থাক- এই ভাবনায় ১৩ লেখিকার বই ‘শাড়ি’

‘নারীর পোশাক, নারীর ইচ্ছে হয়ে থাক- এই ভাবনায় ১৩ লেখিকার বই ‘শাড়ি’

  • Font increase
  • Font Decrease

চারপাশে এত কিছু ঘটে যে চিন্তা ও উদ্বেগ প্রকাশ করার মতো বিষয়ের অভাব নেই। তবে এর মধ্যে কিছু জনগোষ্ঠীর চিন্তাভাবনার একটি জায়গায় আটকে আছে; আর তা হলো নারীর পোশাক। নারী কী পোশাক পরল, কেমন পোশাক পরল, কেন পরল ও এমন পোশাক পরা উচিত ছিল না; ইত্যাদি নিয়ে দিন-রাত ব্যস্ত। আর এমন জনগোষ্ঠী সংখ্যায় দিন দিন বেড়েই চলছে। নানা সময়ে এ নিয়ে তর্ক বিতর্কে মেতে উঠে বাঙালি। নারীর পোশাক নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে গিয়ে ব্যক্তিস্বাধীনতা তো বটেই, অন্য ধর্মের অস্তিত্ব এবং ভিন্ন জীবন দর্শনকেও ভুলে যায় সমালোচনাকারীরা।

বিভিন্ন সময় নারী দেহে আঁচলের বিশেষ অবস্থান দেখে ‘ভালো মেয়ে’, ‘খারাপ মেয়ে’র সংজ্ঞা নির্ধারণ পদ্ধতি স্থির করে দিতে চাওয়া হয়েছে মত প্রকাশের স্বাধীনতার আড়ালে। আর এর প্রতিবাদ- প্রতিরোধ উঠে এসেছে সমাজের নানা স্তর থেকে। কেউ কেউ বিপক্ষে মত প্রকাশ করেছেন।

নারী পোশাক নিয়ে ভাবনা ও মতামত ইতিহাসের দলিল রূপে প্রকাশ করার জন্য উদ্যোগে নিয়েছে কলকাতার ঋত প্রকাশনী। আগামী ১১ মে বিকেল সাড়ে ৫টায় অভিযান বুক ক্যাফে-তে প্রকাশিত হতে চলেছে ‘শাড়ি’ নামের এই বইটি।

বইটি বের করার পরিকল্পনা, সম্পাদনা ও নিমার্ণের দায়িত্বের রয়েছেন তানিয়া চক্রবর্তী। প্রচ্ছদ ও চিত্রের দায়িত্বে রয়েছেন অংশুমান।


সংকলনটিতে অলংকরণ ও লেখার মাধ্যমে আলোকপাত করা হয়েছে আবহমানকাল জুড়ে পোশাককে কেন্দ্র করে বাঙালি মেয়েদের আহত দেহ ও মনের দিকে। সোচ্চারে উচ্চারণ করা হয়েছে সেই ইতিহাস যা অনুচ্চারিত থেকে যায় সামাজিক বিধি নিষেধেরে আড়ালে।

বইটির মাধ্যমে বিতর্ক সৃষ্টি নয়, অস্তিত্বের সন্ধানে বের হয়েছেন তেরোজন লেখক। যারা হলেন- জিনাত রেহেনা ইসলাম, যশোধরা রায়চৌধুরী, মধুজা ব্যানার্জি, চৈতালী চট্টোপাধ্যায়, রোহিণী ধর্মপাল, সেবন্তী ঘোষ, মিতুল দত্ত, অমৃতা ভট্টাচার্য, রত্নদীপা দে ঘোষ, অদিতি বসু রায়, দেবাবৃতা বসু, শ্রুতকীর্তি দত্ত ও তানিয়া চক্রবর্তী।

দৃশ্য বা শব্দের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ভাইরাল হওয়া নয়, সংকলনটির উদ্দেশ্য একটি প্রলেপ সৃষ্টি যা আগামী প্রজন্মের মাথায় ছায়া দেবে। মেনে নেওয়া নয়, প্রশ্ন করার সাহস জোগাবে নতুন করে নয়।

এ প্রসঙ্গে তানিয়া চক্রবর্তী বলেন, ‘শাড়ি’ নিয়ে একটি বই প্রকাশ করা হচ্ছে। সম্প্রতি নারীদের পোশাক নিয়ে ভারতে একটা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। আমি মনে করি, ২০২৪ সালে এসে নারীর পোশাক নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। মেয়েরা যা ইচ্ছা তাই পরতে পারে। তাদের বুদ্ধি, কর্ম ও অভিব্যক্তি বিষয়টিই আসল। এ বিষয়গুলো বইটিতে স্থান পেয়েছে।

;

৩ গুণী পাচ্ছেন বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র ও নজরুল পুরস্কার



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
-অধ্যাপক রাজিয়া সুলতানা, অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী ও অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা

-অধ্যাপক রাজিয়া সুলতানা, অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী ও অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা

  • Font increase
  • Font Decrease

রবীন্দ্র ও নজরুল সাহিত্যে গবেষণায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলা একাডেমির রবীন্দ্র ও নজরুল পুরস্কার পাচ্ছেন ৩ গুণী গবেষক।

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বাংলা একাডেমির জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক সমীর কুমার সরকার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলা একাডেমি রবীন্দ্র-সাহিত্যের গবেষণায় অবদানের জন্য এবার রবীন্দ্র পুরস্কার ২০২৪ পাচ্ছেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী এবং অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা। অন্যদিকে, বাংলা একাডেমি নজরুল-সাহিত্যে গবেষণায় অবদানের জন্য অধ্যাপক রাজিয়া সুলতানা পাচ্ছেন নজরুল পুরস্কার ২০২৪।

আগামী ২৫শে বৈশাখ ১৪৩১/৮ মে ২০২৪ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আয়োজিত অনুষ্ঠানে রবীন্দ্র পুরস্কার-২০২৪ ও আগামী ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১/২৩ মে ২০২৪ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে নজরুল পুরস্কার-২০২৪ প্রদান করা হবে।

অধ্যাপক ড. রাজিয়া সুলতানা 

খ্যাতিমান নজরুল গবেষক অধ্যাপক ড. রাজিয়া সুলতানার জন্ম ২৫শে জুলাই ১৯৩৭। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় ১৯৫৮ সালে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৫৯ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৮৫ সালে মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিমের জীবন ও কর্ম নিয়ে গবেষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি এইচ.ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন।

বাংলাদেশের মহিলাদের মধ্যে তিনি প্রাচীন ও মধ্যযুগের পাণ্ডুলিপি ও সাহিত্য বিষয়ে প্রথম গবেষক। ১৯৮৩ সালে তিনি ফারসি ভাষায় ডিপ্লোমা লাভ করেন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রণীত মধ্যযুগের সাহিত্য-সম্পাদনা-গ্রন্থ 'নওয়াজিশ খান বিরচিত গুলে-বকাওলী কাব্য। পরে প্রকাশিত হয় তাঁর গবেষণাগ্রন্থ ‘আবদুল হাকিম : কবি ও কাব্য (১৯৮৭)। অপর সাহিত্য সম্পাদনা-গ্রন্থ 'আবদুল হাকিম রচনাবলী' (১৯৮৯)।

কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে ড. রাজিয়া সুলতানার গবেষণাগ্রন্থ 'কথাশিল্পী নজরুল (১৯৭৫), 'নজরুল (১৯৮৮), অন্বেষা' (২০০১) এবং 'সাহিত্য-বীক্ষণ' (১৯৮৮)। ড. রাজিয়া সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। ইতোপূর্বে তিনি বিভিন্ন সরকারি কলেজে ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।

অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধোত্তর প্রজন্মের বিশিষ্ট সাহিত্য-সমালোচক ভীষ্মদেব চৌধুরীর জন্ম ১৯৫৭ সনের ৩০শে নভেম্বর সিলেট শহরে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি সম্পন্ন করেন। ১৯৮৪ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে তাঁর কর্মজীবনের সূচনা। ২০০০ সনে তিনি অধ্যাপক হিসেবে উন্নীত হন। বাংলা উপন্যাস, রবীন্দ্র ছোটগল্প এবং বাংলাদেশের সাহিত্য তাঁর অনুধ্যান ও মূল্যায়নের কেন্দ্রীয় বিষয়। ভীষ্মদেব চৌধুরীর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : জগদীশ গুপ্তের গল্প : পঙ্ক ও পঙ্কজ (১৯৮৮); মিরজা আবদুল হাই (১৯৮৯); বাংলাদেশের সাহিত্যগবেষণা ও অন্যান্য (দ্বি সংস্করণ ২০০৪); সৈয়দ মুজতবা আলীর পত্রগুচ্ছ (সম্পা. ১৯৯৩); তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস : সমাজ ও রাজনীতি (১৯৯৮); তারাশঙ্কর স্মারকগ্রন্থ (সম্পা. ২০০১); দু-চারটি অশ্রুজল : রবীন্দ্রগল্পের ভিন্নপাঠ (২০০৫); কথাশিল্পের কথামালা : শরৎচন্দ্র ও তারাশঙ্কর (২০০৭); সাহিত্য-সাধনায় ঢাকার নারী (২০১১); প্রভাতসূর্য :রবীন্দ্রনাথ সার্ধশত জন্মবর্ষ স্মরণ (সম্পা. ২০১১)।

অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা

অধ্যাপক লাইসা আহমদ লিসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী, ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনের শিক্ষক ও সাধারণ সম্পাদক। গুণী এই শিল্পীর জন্ম রাজশাহীতে। বাবা অধ্যাপক মফিজ উদ্দিন আহমদ ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের শিক্ষক ও মা খানম মমতাজ আহমদ। রবীন্দ্রনাথের গানসহ সুস্থধারার সংগীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে তিনি সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে যুক্ত থেকেও তিনি দেশজুড়ে শুদ্ধ সঙ্গীতের চর্চাকে ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখছেন। 

;

মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত



কবির য়াহমদ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর, বার্তা২৪.কম
মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত

মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত

  • Font increase
  • Font Decrease

আবুল মাল আবদুল মুহিত সাবেক অর্থমন্ত্রী। সবচেয়ে বেশিবার বাজেট উপস্থাপন করে রেকর্ড গড়া অর্থমন্ত্রী তিনি। দীর্ঘ চাকরিজীবন শেষে রাজনৈতিক জীবন এবং স্বেচ্ছায় রাজনীতি থেকে অবসর—সব ছিল তার বর্ণাঢ্য জীবনে। তার পর দেশের অর্থমন্ত্রী হয়েছেন আবু হেনা মোহাম্মদ মুস্তাফা কামাল ও বর্তমানে আবুল হাসান মাহমুদ আলী; কিন্তু কেউই আবুল মাল আবদুল মুহিতের মতো সাফল্যের সাক্ষর রাখতে পারেননি। মুস্তাফা কামালের মন্ত্রিত্ব কালের পুরোটা সময় কেটেছে ‘অনুপস্থিতি’ আর বিবিধ ব্যর্থতা দিয়ে। নতুন অর্থমন্ত্রী মাত্রই নিয়েছেন দায়িত্ব, তাই তাকে এনিয়ে এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছা কঠিন।

আবুল মাল আবদুল মুহিত কেবল অর্থনীতিবিদ ও সাবেক অর্থমন্ত্রীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন লেখক, গবেষক, ভাষাসংগ্রামী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাঙালির মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তিনি সরকারি চাকরি ত্যাগ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যে কাজ শুরু করেছিলেন। ১৯৫৬ সালে যোগ দিয়েছিলেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে (সিএসপি)। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ওয়াশিংটন দূতাবাসে পাকিস্তানের কূটনীতিকের দায়িত্বে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের জুনে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৮১ সালে স্বেচ্ছায় সরকারি চাকরি ছেড়েও দেন। সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদেরও অর্থমন্ত্রী ছিলেন তিনি। গণতন্ত্রে দেশকে ফেরানো হবে এই শর্তে তিনি এরশাদের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। এরপর বছরখানেক দিন শেষে যখন দেখেন এরশাদ তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছেন না, তখন তিনি স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ের পর যে মন্ত্রিসভা গঠন করে সেখানে শেখ হাসিনা তাকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। প্রবল প্রতিকূল দেশীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেওয়া আবুল মাল আবদুল মুহিত বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতিকে যে জায়গায় নিয়ে গেছেন তার সুফল দীর্ঘদিন ভোগ করেছে দেশ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্পসহ আরও অনেক প্রকল্প তার আমলে শুরু হয়। তিনি আর্থিক ব্যবস্থাপনার দিকটি সুনিপুণভাবে করে গেছেন। তার দায়িত্বকালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের যে ঊর্ধ্বগতির সঞ্চার হয়েছিল সেখান থেকে দেশ একটা সময়ে ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছায়।

মাথাপিছু আয়, জিডিপি, রিজার্ভ, মূল্যস্ফীতিসহ অর্থনীতির নানা খাতের ব্যবস্থাপনায় তিনি যে সাফল্যের সাক্ষর রেখেছেন তার পথ ধরে পরের অর্থমন্ত্রীরা সেটা অব্যাহত রাখতে পারেননি। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে পারেননি এবং পদে থেকেও তার কাজে অনুপস্থিতি দেশকে গভীর সংকটে নিপতিত করেছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মুস্তাফা কামাল বিজয়ী হলেও তাকে মন্ত্রিসভায় রাখেননি শেখ হাসিনা, এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আবুল হাসান মাহমুদ আলীকে।

নানা কারণে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে এই দেশ স্মরণ রাখবে। তন্মধ্যে একটি যদি পেনশন ব্যবস্থা হয়, অন্যটি নারীর ঘরের কাজের মূল্যায়ন। নারীর ঘরের কাজের মূল্যায়নের বিষয়টি এখনো আনুষ্ঠানিক হয়নি যদিও, তবে এনিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। নয় মাস আগে দেশে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু হয়েছে, এবং এই নয় মাসে ব্যাপক সাড়া যদিও পড়েনি, তবে এখন পর্যন্ত ১ লাখ লোক এই সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। অথচ তিনি যখন প্রথমবার সবার জন্যে পেনশন চালুর কথা বলেন, তখন এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছিলেন অনেকেই। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে তিনি এক বৈঠকে সকলের জন্যে পেনশন চালুর ব্যবস্থার কথা বলে অনেকের বিরোধিতার মুখে পড়েছিলেন। তবু তিনি এর একটা খসড়া প্রণয়নের দায়িত্ব দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে। আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘সবার জন্য পেনশন চালু করতে পারলে এ দেশ থেকে অনেক কিছু দূর হবে। মানুষ যখন দেখবে তার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত তখন অনেকেই অনিয়ম থেকে সরে আসবে। মানুষ এত অনিয়ম-হানাহানি করে শুধু ভবিষ্যতের জন্য।’ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে খসড়া তৈরি হয়ে আসার পর তিনি জানালেন, কিছুই হয়নি। এরপর তার নিজের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় খসড়া তৈরির কাজ। তিনি এনিয়ে কথা বলতেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবুল মাল আবদুল মুহিতের ওই উদ্যোগের পক্ষে ছিলেন, এবং কাজ করার নির্দেশ দেন। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর পর তথ্যগুলো একটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন শ্রম মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক কর্মকর্তা।

আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটে দেশের সকল নাগরিকের জন্যে পেনশন ব্যবস্থা চালুর স্বপ্নের কথা বলেছিলেন। তিনি তার বাজেট বক্তৃতার ৫৯ নং পৃষ্ঠার পেনশন অধ্যায়ে বলেছিলেন ‘সরকারি পেনশনারগণ দেশের সমগ্র জনগণের একটি ক্ষুদ্রাংশ মাত্র। তাই সরকারি কর্মচারীদের পাশাপাশি সকলের জন্যে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অংশগ্রহণমূলক সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুকরণে আমরা কাজ করছি। আমাদের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের অন্তর্নিহিত লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ-রাষ্ট্রে রূপান্তর করা।’ এর আগের বছরের বাজেটে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫ শতাংশ, যাদের প্রায় সবাই সরকারি চাকুরে, এখন পেনশন সুবিধা পান। বাকি ৯৫ শতাংশের মধ্যে প্রায় ৮ শতাংশ গ্র্যাচুইটি সুবিধা পেলেও অন্যদের জন্য সে সুবিধাও নেই।’ তার বক্তব্য তখন সে পর্যন্তই ছিল, এবং এক বছর পর পরের বাজেটে এসেছে স্বপ্নের পূর্ণ অবয়ব। আর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকারে। এরবাইরে আছে ২০১৮ সালে পেনশন নিয়ে আবুল মাল আবদুল মুহিতের উদ্বোধন করা এক পাইলট প্রকল্পে, যেখানে ৫৭ জন ব্যক্তিকে এই প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়। দেশের মানুষদের জন্যে পেনশন ব্যবস্থা চালু নিয়ে যে স্বপ্নের রূপরেখা দিয়েছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত, সেটা তার জীবদ্দশায় পূরণ হয়নি। তার মৃত্যুর কয়েক মাস পর সরকারি তরফে হয়েছে প্রকাশ্য এবং প্রধানমন্ত্রী করেছেন এর বাস্তবায়ন।

সম্প্রতি নারীদের গৃহকর্মের অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। গত ২৩ এপ্রিল সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয় বলে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। নারীদের গৃহকর্মের এই মূল্যায়নে ঘরে হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালন, বিভিন্ন জাতের সবজি উৎপাদনসহ নানা হিসাব এর মধ্যে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশের অন্তত ৪৩ শতাংশ নারী পুরোপুরিভাবে গৃহস্থালি কাজের সঙ্গে যুক্ত। দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনে (জিডিপি) নারীর অবদান ২০ শতাংশ। তবে নারীর এই গৃহস্থালি কাজকে জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতিতে যোগ করা হলে জিডিপিতে নারীর অবদান দাঁড়াবে ৪৮ শতাংশ বা তার কাছাকাছি। এখন নারীদের গৃহস্থালি কাজের মূল্যায়নের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে, এ নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এটাও ছিল সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের স্বপ্ন। দায়িত্ব পালনকালে একাধিকবার তিনি এনিয়ে কথা বলেছেন, নারীদের কাজের রাষ্ট্রীয় মূল্যায়নের গুরুত্বারোপ করেছেন। ২০১৭ সালের অক্টোবরে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে প্রয়াত এই অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশে ঘরের সেবামূলক কাজের কোনো মূল্যায়ন নেই। সে কারণে জিডিপিতে এর কোনো অন্তর্ভুক্তি নেই। এটার মূল্যায়ন করা জরুরি।’ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে এই মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, ‘বিষয়টি আমরা পরিসংখ্যান বিভাগে যুক্ত করব এবং সরকারিভাবে আমরা এটিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাব।’

আবুল মাল আবদুল মুহিত নেই আজ দুই বছর। ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল না ফেরার দেশে চলে যান বরেণ্য এই ব্যক্তিত্ব। মৃত্যুর মাস দেড়েক আগে তাকে দেওয়া সিলেটে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি নিজের জীবনের মূল্যায়নে বলেছিলেন, ‘আমি আমার জীবনকে নিয়ে গর্বিত।… অনেকে হয়ত একে আত্মগরিমা বলবেন। কিন্তু এটা অন্যায় নয়। বরং এরজন্য নিজেকে গড়ে তুলতে হয়।’ ৮৮ বছরের দীর্ঘ সময়কে তিনি বলতেন ‘মহাতৃপ্তির-মহাপ্রাপ্তির জীবন’।

মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা আবুল মাল আবদুল মুহিত।

;

চতুর ঘুঘু



শরীফুল আলম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

নেশাখোরের মত কখনো কখনো খিলখিল করে হাসি
প্রথমত দহন উষ্ণতায় ,
তারপর সুবিশাল শূন্যতায় ,
কখনো কখনো ছুঁয়ে ফেলি সাজানো প্রতিমা
জীবনের দাবী ,
তবে আপাতত গন্তব্য বলে কিছু নেই আমার
কবিতার অবয়ব এখনো যেটুকু আছে
তাকে আমি রঙ্গের উৎসবই বলি
কিম্বা যেটুকু আছে তা জীবনের দাবী ।

ক্রমাগত অন্তর্গত দ্বন্দে
অবাধ্য ভাষা এখন প্রাচীর তোলে
প্রসারিত মৃত্যুর কথা বলে ,
আমি তার গল্পের শেষটা জানার চেষ্টা করি
রাতের গহ্বর থেকে তোলে আনি মৃত্যুর পরোয়ানা ,
কিন্তু অস্পষ্টতা কিছু থেকেই যায়
আবার নিজে নিজেই বলি
আমার জলভূমিতে আবার কিসের নিঃসঙ্গতা ?

স্বপ্নবাসর ? সে এক চতুর ঘুঘু
আমি তার ক্ষণিকের হটকারীতা বুঝতে পারি
এমনকি চোখ বুজে
আমি ভুলে যাই তার সন্ধ্যার ঘায়েল
যেন দেখেও দেখিনা
বিনা মোহে সারারাত অহেতুক তার অহংকার
নিরর্থক বাজি ধরে সে
অর্কিড নিরালায় আমিও একা থাকি
ভাঙ্গা চোরা রাত জেগে থাকে আমার পাশে
মনে হয় চোখ দিয়ে ছুঁয়ে দেখি তার ঢাকাঢাকি
ফিরতি নজরে সেও আমায় দেখে
আমার মিষ্টি কবিতার মতই
আমিও থমকে যাই পাখীর ডাকে
দূর দরিয়ায় তখন উলুধ্বনি শংখ বাজে ,
ইচ্ছে হয় নাগরদোলায় আবার গিয়ে দুলি
আর জানই তো কবিরাই প্রেমে পড়ে
কবিরাও চুমু খায়
সুন্দরী পেলে তাঁরাও শুয়ে পরে।

*************************
শরীফুল আলম ।
২১এপ্রিল । ২০২৪ইং
নিউইয়র্ক । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ।

;