মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলছে। ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন কমলা হ্যারিস না ডোনাল্ড ট্রাম্প তা দেখার অপেক্ষায় হোয়াইট হাউসে সময় কাটাচ্ছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে এতথ্য জানানো হয়।
হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা এনবিসি নিউজকে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ফার্স্ট লেডি দীর্ঘদিনের সহযোগী এবং সিনিয়র কর্মীদের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের বাসভবনে নির্বাচনের ফলাফল দেখবেন।
সিএনএন জানিয়েছে, এবারের নির্বাচন কয়েক মাস আগে বাইডেন যা কল্পনা করেছিলেন তার চেয়ে অনেক আলাদা। কারণ তিনি আশা করেছিলেন ভোটাররা তাকে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত করবে।
এদিকে স্থানীয় সময় ভোর ৫টায় (গ্রেনিচ মান সময় ১২টায়) আমেরিকার পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ভার্মন্টে ভোট গ্রহণ শুরু হয়, যা চলবে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা।
যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ায় ১৮ কোটি ৬০ লাখ ভোটার ভোট দিচ্ছেন। তবে বেশির ভাগ রাজ্যে ডাকযোগে এবং আগাম ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা থাকায় ইতোমধ্যেই ৮ কোটির বেশি মানুষ ভোট দিয়ে ফেলেছেন।
ইতিহাস তৈরির হাতছানি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসের সামনে। অপরদিকে গত নির্বাচনে পরাজয়ের গ্লানি মুছে প্রত্যাবর্তনের প্রত্যয় রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের। তবে জরিপগুলোতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস মিলছে।
বরাবরের মতোই ফলাফলের জন্য সবার দৃষ্টি ৭টি সুইং স্টেটে। শেষ মুহূর্তের জরিপে ৪টি সুইং স্টেটেই এগিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প, আর একটিতে দু’জন সমানে-সমান। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, শেষ মুহূর্তে ভোটারের মন আর ভোট দু’টোই পাল্টে যেতে পারে।
হোয়াইট হাউস দখলের লড়াইয়ে কে জয়ী হবেন, কে হাসবেন শেষ হাসি-কমলা হ্যারিস নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ প্রশ্নের জবাব পেতে এখন শেষ মুহূর্তের অপেক্ষা। অনেক ভোটার শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেবেন। নীরব ভোটার আছেন অনেক। তাই ফলাফল প্রকাশের আগে কে জয়ী হবেন, তা অনুমান করা যাচ্ছে না।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ১৮ কোটি ৬০ লাখ আমেরিকান ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন। অর্থাৎ, ভোট দেওয়ার বয়স হয়েছে এমন প্রতি ১০ আমেরিকানের মধ্যে ৮ জনই নিবন্ধন করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের পদ্ধতি বেশ জটিল। পপুলার ভোটে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না। ৫০টি অঙ্গরাজ্য এবং ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি মিলে ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট রয়েছে। নির্বাচনে জয়ী হতে হলে ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট প্রয়োজন। একেক রাজ্যে একেক সংখ্যায় ইলেকটোরাল কলেজ ভোট আছে। যে রাজ্যে যে দল জয়ী হয়, সেই রাজ্যের সব ইলেকটোরাল কলেজ ভোট সেই দল পেয়ে যায়। অর্থাৎ উইনার্স গেট অল।
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বা কমলা হ্যারিস যেই হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হন তার উপরই নির্ভর করছে আগামী চার বছরের বৈশ্বিক ভূরাজনীতির ময়দানের মারপ্যাঁচ। আঞ্চলিক রাজনীতির পাশাপাশি বিশ্বরাজনীতির মোড় কোন দিকে ঘুরে যায় সেই সব কৌশলগত পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ক্ষমতা প্রদর্শনীর বেষ্টনীর দেখা মিলবে আগামী চার বছরে। তবে বিশ্ববাসী ইতিবাচক ও সুশৃঙ্খল বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার স্বাগত জানাচ্ছে। যার শান্তির মশাল জ্বলবে সমগ্র বিশ্বে।
প্রেসিডেন্ট পদে রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের লড়াইয়ের পাশাপাশি আমেরিকায় সমান্তরালভাবে আরও দু’টি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হচ্ছে এই পর্বে। তা হল আমেরিকান কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস ও উচ্চকক্ষ সিনেটের ভোট।
আমেরিকার কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ ১০০ সদস্যের সিনেটের ৩৪টি এবং নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসের ৪৩৫ আসনের সবক’টির নির্বাচন হচ্ছে এই দফায়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে প্রার্থীই জিতুক না কেন, নতুন কোনও আইন পাশ করাতে গেলে এই দু’টি কক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে এ ক্ষেত্রে সিনেটের গুরুত্ব খানিকটা হলেও বেশি। বিভিন্ন বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট-সহ গুরুত্বপূর্ণ পদে জয়ী প্রার্থীদের নিয়োগপত্র সুপ্রিম কোর্ট পেশ করে সিনেটই। তাই হাউস ও সিনেটের ভোট সাধারণ নির্বাচনের থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
সিনেটের ভোট প্রক্রিয়া হাউসের থেকে কিছুটা আলাদা। এখানে এক বার ভোটে জিতলে ছ’বছরের মেয়াদ থাকে। সিনেটের মোট আসনসংখ্যা ১০০টি। আমেরিকার প্রতিটি প্রদেশে দু’জন করে সিনেটর নিযুক্ত থাকেন। সেই হিসেবে মোট ৫০টি প্রদেশে ১০০টি আসনের সবগুলোতে অবশ্য একসঙ্গে ভোট হয় না। প্রতি দু’বছর অন্তর এক তৃতীয়াংশ আসনে ভোট হয়। এ বার ভোট হবে ৩৪টি আসনে। সাধারণত নির্বাচনের রাতেই হাউসের ভোটের ফল ঘোষণা হয়ে যায়। বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী, হাউসে ডেমোক্র্যাটদের এগিয়ে থাকার সম্ভাবনাই বেশি। সিনেটে রিপাবলিকানদের।