টানা দ্বিতীয় হারে বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের পথে বাংলাদেশ
ক্রিকেট কার্নিভালজিতলে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিতে ওঠার পথে ভালোভাবেই টিকে থাকত বাংলাদেশ। তবে হারলেই বিদায় নিশ্চিত। এমন সমীকরণ নিয়েই সুপার এইটে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে নেমেছিল বাংলাদেশ। সেই সমীকরণ আরও কঠিন করে তুলল ভারতীয় ব্যাটাররা। মিডল অর্ডারে পান্ত, দুবে, হার্দিকদের নিয়ন্ত্রিত ব্যাটিংয়ে ১৯৬ রানের বড় সংগ্রহ পায় রোহিত শর্মার দল। সেই রান তাড়ায় শান্তদের ইনিংস থামে ১৪৬ রানে। এতে ৫০ রানের এই হারে চলতি আসরে বিদায়ের অনেকটাই কাছাকাছি চলে গেল বাংলাদেশ।
গ্রুপপর্বে দাপুটে ক্রিকেট খেলেই সুপার এইটে পৌঁছায় নাজমুল হোসেন শান্তর দল। তবে সুপার এইটে অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথম ম্যাচটা তারা বৃষ্টি আইনে হেরে যায় ২৮ রান। এবার ভারতের বিপক্ষে হলো যেন শান্তদের অসহায় আত্মসমর্পণ। এতে বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের একদম দুয়ারে বাংলাদেশ। সেমির স্বপ্ন আপাতত টিকে থাকল খাতা-কলমের জটিল সমীকরণের হাতে। বাংলাদেশ সময় আগামীকাল ভোরে একই গ্রুপ থেকে মাঠে নামবে আফগানিস্তান ও অস্ট্রেলিয়া। সেই ম্যাচে অজিরা জিতলে বাংলাদেশের বিদায় হয়ে যাবে পুরোপুরি নিশ্চিত এবং সেমিতে উঠে যাবে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া।
অ্যান্টিগায় বৃষ্টি সম্ভাবনা উড়িয়ে কোনো বাঁধা ছাড়াই সম্পন্ন হলো ম্যাচ। টসে জিতে এদিন আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখানে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৯৬ রানের বড় সংগ্রহ পায় রোহিত শর্মার দল।
বিশাল সেই লক্ষ্য তাড়ায় দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাসে চড়ে শুরুটা ভালোই পেয়েছিল বাংলাদেশ। তবে পঞ্চম ওভারে লিটন ফেরার পর কমতে শুরু করে রানের গতি। আগের বলে ছক্কা মারার পর দলীয় ৩৫ রানের মাথায় ফেরেন লিটন। এটি ছিল চলতি আসরে ওপেনিং জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। এমনকি ছয় ম্যাচে এই প্রথম দুই অঙ্কের ঘরে গেল ওপেনিং জুটি।
এদিকে শুরুর সেই চাপ সামলে অধিনায়ক শান্তকে নিয়ে থিতু হওয়ার দিকেই এগোচ্ছিলেন তামিম। আগের দুই ম্যাচে শূন্য রানে ফেরার পর অবশেষে রান ফিরলেন এই তরুণ বাঁহাতি ব্যাটার। তবে ইনিংস মাঝে দলীয় ৬৬ রানের মাথায় ফেরেন কুলদীপ যাদবের বলে, লেগ বিফোরের ফাঁদে। ৩১ বলে তামিমের ব্যাট থেকে আসে ২৯ রান। কুলদীপের পরের ওভারে ঠিক একইভাবে লেগ বিফোরে ফেরেন তাওহিদ হৃদয়ও। এছাড়া সাকিবও ফেরেন দ্রুতই। স্কোরবোর্ডে তখন ১৩ ওভার ৩ বলে ৪ উইকেটে ৯৮ রান।
সেখান থেকে অধিনায়ক শান্তর ৩২ বলে দলীয় সর্বোচ্চ ৪২ এবং শেষে রিশাদের ১০ বলে ২৪ রানের ক্যামিও কেবলই কমিয়েছে হারের ব্যবধানে। ২০ ওভার শেষে ৮ উইকেটে সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৪৬ রানের। ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন কুলদীপ।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই বেশ ঝোড়ো গতিতে রান তুলতে থাকেন দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। তবে চতুর্থ ওভারেই দলকে ব্রেক থ্রু এনে দেন সাকিব। দলীয় ৩৯ রানের মাথায় লোয়ার লেন্থের এক ডেলিভারি উড়িয়ে মারতে গেলে কভার অঞ্চলে জাকের আলীর হাতে ক্যাচ দেন রোহিত। আর এতেই রেকর্ড বনে যান সাকিব। এদিকে রিশাভ পান্তকে নিয়ে আসরে রানে ফেরার দিনে দারুণ ছন্দে এগোচ্ছিলেন কোহলি। তবে নবম ওভারের প্রথম বলে তানজিমের এক স্লোয়ার ডেলিভারিতে বোল্ড হন এই ডানহাতি ব্যাটার। এর আগে করেন ২৮ বলে ৩৭ রান। পরে পিচে নেমে প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান সূর্যকুমার। তবে জবাব দিতে একদমই সময় নেননি তানজিম। পরের বলেই স্কাইকে দেখান সাজঘরের রাস্তা।
তবে পিচে থিতু হয়ে তাণ্ডব চালাতে থাকেন রিশাভ পান্ত। উঠছিলেন ভয়ঙ্কর হয়েই। সেখানে দলকে স্বস্তি এনে দিলেন রিশাদ। দলীয় ১০৮ রানের মাথায় তানজিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন পান্ত। পুরো ১৫০ স্ট্রাইক রেটে ২৪ বলে ৩৬ রান করেন এই বাঁহাতি উইকেটরক্ষক ব্যাটার। পান্ত ফিরলে কমে যায় রান তোলার গতিও। তবে মিডল অর্ডারের বাকি ব্যাটাররা দেখান দৃঢ়তা। শেষ পর্যন্ত দুবের ৩৪ এবং পান্ডিয়ার ২৭ বলে অপরাজিত ৫০ রানের ইনিংসে চড়ে ১৯৬ রানের বড় সংগ্রহে পৌঁছে যায় ভারত। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ফিফটি তোলায় ম্যাচসেরার খেতাব যায় হার্দিকের হাতেই। সেই ইনিংসে বাংলাদেশের পক্ষে দুটি করে উইকেট নেন তানজিম ও রিশাদ।
সুপার এইটে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ আগামী ২৫ জুন, আফগানিস্তানের বিপক্ষে। আগামীকাল সকালের ম্যাচটি যদি আফগানিস্তান না জেতে তবে তাদের বিপক্ষে শান্তদের ২৫ তারিখের ম্যাচটা হয়ে যাবে কেবলই নিয়মরক্ষার।